কঠোর পরিশ্রমের মিলল ফল UPSC পরীক্ষায় ২৭৫ তম স্থান পেয়ে IPS অফিসার হল বাস কন্ডাক্টরের মেয়ে
একটা সময় ছিল যখন কোনো বাড়িতে মেয়ে জন্ম হওয়া অভিশাপ বলে গণ্য করা হতো। এমকনকি কন্যা সন্তান জন্ম নিলে তাদের প্রাণে শেষ পর্যন্ত করে দেওয়া হতো। কিন্তু কিছু ধীরে ধীরে পরিস্থিতিতে মারাত্মক পরিবর্তন ঘটেছে। এছাড়া আগেকার দিনে মেয়েদের শিক্ষাকেও প্রাধান্য দেওয়া হতো না। ১৯৯০ সালে নারী শিক্ষার হার ছিল মাত্র ৪০ শতাংশ। তবে এখন এই হার বেড়ে ৬০ শতাংশে পৌঁছেছে। যদি মহিলাদের পুরুষদের মতো শিক্ষার সুযোগ দেওয়া হয় তবে তারা পুরুষদের মতোই জীবনে উন্নতি করতে পারবে, এমনকি পুরুষদের টেক্কা দিয়ে তাদের থেকেও এগিয়ে যেতে পারবে। আর এই কথাটিকে প্রমান করে দেখিয়ে দিয়েছে IPS Officer শালিনি অগ্নিহোত্রি। ইনি নিজের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে IPS officer হয়ে প্রমান করে দেখিয়ে দিয়েছেন যে মেয়েরা যদি সঠিক শিক্ষা ব্যবস্থা পায় তবে তারাও পুরুষদের মতো জীবনে সফল হতে পারবে। আসুন এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জেনেনি শালিনি অগ্নিহোত্রির সফলতার গল্প।
শালিনী এক গরিব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিল। তার বাবা একজন সামান্য বাস কন্ডাক্টর ছিলেন। শালিনিএ বাবা কখনো ছেলে-মেয়ে নিয়ে ভেদাভেদ করেননি। তিনি শালিনিকে ভালো স্কুলে পরিয়েছেন এবং শিক্ষার সমস্ত সুযোগ করে দিয়েছিলেন যাতে শালিনি জীবনে সফলতা অর্জন করতে পারে। আর তাই আজ শালিনি একজন IPS officer হতে পেরেছেন। তবে IPS officer হওয়া শালিনির জন্য খুব একটা সহজ ছিল না কারণ তাকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল।
শালিনি হিমাচল প্রদেশের উনা জেলার একটি দরিদ্র পরিবারের অন্তর্গত। তার বাবা যা মাইনে পেতেন তা তিরিবারের ভরণপোষণের জন্য যথেষ্ট ছিল। শালিনি পড়াশোনার দিক দিয়ে সর্বদা পরিবারের পূর্ণ সমর্থন পেয়ে এসেছেন। এই কারণে সে ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় খুব ভালো ছিল। তিনি ধর্মশালার ডিএভি স্কুল থেকে হাইস্কুল ও ইন্টারমিডিয়েট পড়াশোনা করেছিলেন। তিনি প্রাথমিক শিক্ষায়ও অনেক ভালো নম্বর নিয়ে পাশ করেছিলেন। আর ছোটবেলা থেকেই আইপিএস অফিসার হতে চেয়েছিলেন শালিনি।
প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর তিনি পালামপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশনের জন্য পড়াশোনা করা শুরু করেছিলে। আর গ্রাজুয়েশনের পড়াশোনা চলাকালীন তিনি জানতে পেরেছিলেন যে একজন ব্যক্তি ইউপিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আইপিএস অফিসার হতে পারেন। আর তারপর থেকেই তিনি UPSC পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলেন। শালিনী একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে তিনি যখন ইউপিএসসির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখন এই প্রস্তুতির ব্যাপারে তিনি তার মা-বাবাকে জানাননি। পরে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি প্রথমবার এই সংবাদটি তার বাবা-মাকে জানিয়েছিলেন।
শালিনী অগ্নিহোত্রী জানায় যে officer হওয়ার ইচ্ছা তার মধ্যে তখন জাগে যখন তিনি খুব ছোট ছিলেন এবং একদিন তার মায়ের সাথে বাসে করে কোথাও একটা যাচ্ছিলেন। তখন বাসে একটা নেশাগ্রস্ত থাকা মানুষ বার বার তাদের সিটে হাত দিচ্ছিল। যখন শালিনির মা প্রতিবাড করে সেই ব্যক্তিকে হাত সরাতে বলে তখন সে শালিনির মায়ের সাথে ঝগড়া-মারপিট করতে শুরু করে এবং শালিনির মা কে বলে যে ‘ কেন আপনি কি কমিশনার নাকি যে আপনার কথা শুনতে হবে?’ এই কথাটি সোনার পর শালিনি বুঝতে পেরেছিল যে কমিশনার মানে কোনো officer ও শক্তিশালী পোস্ট। এরপর থেকেই শালিনির মনে ইচ্ছা জেগেছিল officer হওয়ার।
শালিনী একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে তার বাবা-মা তাকে ছেলে হতে শিখিয়েছিলেন। তারা শুধু শালিনির প্রতিই বিশ্বাস রাখতেন না, তাকে পড়ালেখা করতেও উৎসাহিত করতেন। শালিনি ২০১১ সালে প্রথম চেষ্টায় UPSC পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন ২০১২ সালে তিনি কোয়ালিটি টেস্টেও ভালো র্যাঙ্ক নিয়ে পাশ করেছিলেন। শালিনি সারা ভারতে ২৮৫ তম স্থানে ছিলেন। যখন শালিনি তার পরিবারকে সুসংবাদটি জানায় তার পরিবার প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেননি।