ভারত সহ আরো ২০ টি দেশের অবদানে ৬৬,১৬৮ ঘণ্টার পরিশ্রমের ফল এই পদ্মা সেতু

সম্প্রতি বাংলাদেশের (Bangladesh) পদ্মা নদী বেশ আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। পদ্মা নদীর হটাৎ আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠার কারণ হলো গত শনিবার অর্থাৎ ২৫ শে জুন ২০২২ (শনিবার)-এ এই নদীর উপরে তৈরি হওয়া ব্রিজ বা সেতুকে উদ্বোধন করা হয়েছে এবং রবিবার থেকেই টোল ট্যাক্স দিয়ে সেতু দিয়ে যাতায়াত করা শুরু হয়ে গেছে। এই সেতুটিকে উদ্বোধন করেছিলেন বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। Zoom Earth Live পদ্মা নদীর উপর দিয়ে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে এই সেতুর ছবি তুলেছে এবং সেই ছবি প্রকাশিতও হয়েছে। ছবিতে পদ্মা সেতুকে (Padma bridge) একটি লম্বা দাগের মতো দেখতে লাগছে। পদ্মা সেতুটি (Padma bridge)এখন বাংলাদেশের (Bangladesh) সবচেয়ে লম্বা ও বড় সেতুতে পরিণত হয়েছে। এই সেতু নির্মাণের বরাত দেওয়া হয়েছিল চিনের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থাকে। পদ্মা সেতু মুন্সীগঞ্জের মাওয়া থেকে যুক্ত করেছে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তকে। অর্থাৎ এই সেতু সংযোগ সৃষ্টি করেছে পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে।

Padma bridge

রিপোর্ট থেকে জানা গেছে যে পদ্মা নদীর উপর সেতু তৈরি করা সম্ভব কিনা সেই বিষয় গণনা শুরু করা হয়েছিল ১৯৯৯ সাল থেকে আর তখনই পদ্মা সেতু তৈরীর প্রকল্পের সূত্রপাত ঘটেছিল। ২০০১ সালের ৪ জুলাই পিএম হাসিনা মাওয়া প্রান্তে আনুষ্ঠানিক ভাবে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু তারপর অনেক বাধা ও বিভিন্ন কারণে সেতু তৈরির কাজ থেমে ছিল। এরপর ২০০৯ সালে সেতুর নয়া নকশা তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছিল এবং নকশা তৈরির কাক শেষ হয়েছিল ২০১০ সালে। রবিন শ্যাম নামে এক ব্রিটিশ নাগরিক পদ্মা সেতুর নকশা তৈরির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এরপর ২০১০ সালে বাংলাদেশের পিএম হাসিনা সিন্ধান্ত নেন পদ্মা নদীর উপর সেতু তৈরি হবে বাংলাদেশের নিজ অর্থ দিয়েই এবং ২০১৪ সালে ৮ই ডিসেম্বর এই সেতুর কাজ শুরু হয়েছিল।

Padma bridge

এর পর ২,৭৫৭ দিন অর্থাৎ ৬৬,১৬৮ ঘণ্টা সময় ধরে ইঞ্জিনিয়ার, শ্রমিক ও অন্যান্য কলাকুশলীর নিরলস প্রচেষ্টার পর আজ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের এই স্বপ্নের পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতুর নির্মাণ করা হয়েছে কংক্রিট ও টিনকে মিশ্রিত করে। জানিয়ে দি যে পদ্মা সেতুর মূল দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার ও দুপাশে সংযোগকারী রাস্তা রয়েছে ১৪ কিলোমটার। আর পদ্মা সেতুর প্রস্থ হলো ৭২ ফুট। সেতুতে চার লেনের সড়ক রয়েছে ও মাঝখানে রোড ডিভাইডারও রয়েছে। আর সেতুতে ভায়াডাক্ট পিলার রয়েছে ৮১টি। পদ্মা নদীতে যাতে বড় লঞ্চ চলাচলের সময় সমস্যা সৃষ্টি না হয় তার জন্য জল থেকে ৬০ ফুট উঁচুতে তৈরি করা হয়েছে এই সেতুটি। এছাড়া সেতুতে মোট পিলার সংখ্যা হলো ৪২টি এবং পাইলিং রয়েছে ২৮৬টি।

Padma bridge satellite view

জানিয়ে দি যে পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য হলো ১০ কিমি। তবে ১০ কিমির মধ্যে সাড়ে ছয় কিমি রয়েছে জলের উপরে। ৪ টি লেন দ্বারা যুক্ত এই পদ্মা সেতু প্রায় ২২ মিটার চওড়া। আর এই সেতু তৈরি করতে ২৯৪টি স্টিলের ফাঁপা থাম ব্যবহার করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর ধারে ধারে যে পাতগুলি ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলি  চিনের এক নামী কারখানায় তৈরি হয়েছে। এই সেতুতে মোট ৪২টি থাম রয়েছে এবং এক একটি থামের প্রায় ৫০ হাজার টন ভার বহন করার ক্ষমতা রয়েছে। এছাড়া পদ্মা সেতু প্রকল্পের আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান বিশেষজ্ঞ ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার জামিলুর রেজা চৌধুরী। তাঁর মৃত্যুর পর এই দায়িত্ব এসে পড়ে অধ্যাপক শামীম জাহান বসুনিয়ার কাঁধে।

Padma bridge satellite view

এছাড়া আরেকটি বিষয় হয়তো খুব কম লোক জানে যে পদ্মা সেতুর নীচে রেললাইনও তৈরি করা হয়েছে। অর্থাৎ পদ্মা সেতু একটি দুতলা ব্রিজ, যার উপর দিয়ে গাড়ি বা যানবাহন যাতায়াত করবে এবং সেতুর নিচের তলা দিয়ে ট্রেন চলাচল করবে। তবে রেল চলাচল শুরু হতে এখনও বেশ খানিকটা সময় লাগবে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী গণনা করে বলা হচ্ছে যে ২০২৫ সালে এই সেতু দিয়ে দিনে প্রায় ৪১ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করবে। আর পদ্মা সেতু নির্মাণে ভারত-সহ মোট ২০টি দেশের অবদান রয়েছে। এই নদীশাসনের কাজ করেছে চিনের সিনো হাইড্রো কর্পোরেশন। মূল সেতু এবং নদীশাসনের কাজ তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়, দক্ষিণ কোরিয়ার এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানিকে।

Padma bridge

এছাড়া পদ্মা সেতুর ৪১৫ টি লাইট পোস্টের মধ্যে দূরত্ব হলো ৩৮ মিটার এবং এই লাইট পোস্টের ওজন হলো ২৭৫ কেজি। সমীক্ষা অনুযায়ী বলা হচ্ছে যে ঘণ্টায় ১৮০-২০০ কিমি বেগে ঝড় হলেও এই লাইট পোস্টগুলির কিছু হবে না। আর লাইট পোস্ট তো দূরের কথা যদি কখনো যদি বড় জাহাজ এসে এই ব্রিজকে ধাক্কা মারে বা রিখটার স্কেলে আট মাত্রার ভূমিকম্প হয় তাহলেও এই ব্রিজের কোনও ক্ষতি হবে না বলে জানিয়েছে নির্মাতারা। এছাড়া জানিয়ে দি যে ইতিমধ্যেই একাধিক বিশ্বরেকর্ড গড়েছে পদ্মা সেতু। এই রেকর্ড গুলির মধ্যে বিশ্বের দীর্ঘতম স্টিলের থামের ব্যবহার  হলো অন্যতম।