লম্বায় পৌনে এক কিমি, খরচ আনুমানিক ৪৬৫ কোটি! পুজোর আগেই অত্যাধুনিক টালা সেতু পেতে চলেছে কলকাতাবাসী
কলকাতার টালা ফ্লাইওভার খুলে দেওয়া হলো জনগণের জন্য
কলকাতা (kolkata) শহরে সেতু বা ব্রিজ ভেঙে পড়ে যাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। ২০১৬ সালের বিবেকান্ড ফ্লাইওভার আর তারপর ২০১৮ সালে মাঝেরহাট ফ্লাইওভার ভেঙে পরার ঘটনা ঘটেছিল কলকাতায়। এছাড়া কলকাতায় এমন অনেক ব্রিজ বা ফ্লাইওভার রয়েছে যেগুলি ভাঙবে ভাঙবে অবস্থায় রয়েছে। তবে ২০১৮ সালে যখন মাঝেরহাট ব্রিজটি ভেঙে পড়েছিল তখন কলকাতা (kolkata) সরকার কলকাতার সমস্ত ব্রিজের স্বাস্থ্যের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়েছিল যে কোন কোন ব্রিজের মেরামত করা প্রয়োজন বা আগামীদিনে ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর সরকারি সংস্থা রাইটস জানিয়েছিল যে কলকাতার টালা সেতু (Tala flyover) ভেঙে ফেলে নতুন সেতু নির্মানের প্রয়োজন রয়েছে।
এরপর ২০২০ সালে এই সেতু ভেঙে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল। অর্থাৎ সেতু ভাঙা শুরু হয়েছিল ফেব্রুয়ারি মাসে আর ভাঙার কাজ সম্পূর্ন হয়েছিল এপ্রিল মাসে। চার লেনের নতুন সেতুর দুই দিকে অ্যাপ্রোচ রোড তৈরি করতে রেলের জমিতে থাকা ৩৮টি আবাসন ভাঙতে হয়েছিল। এরপির ২০২০ সালেই লার্সন অ্যান্ড টুবরো লিমিটেড দ্বারা সেতুর নির্মাণ কার্য শুরু করানো হয়েছিল।
এরপর পূর্ত দফতর চলতি বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের প্রথম দিকে জানিয়েছিল যে এই বছর এপ্রিল মাসে এই ব্রিজ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। কিন্তু এমনটা হয়নি। এখন সেপ্টেম্বর মাস চলছে তা সত্ত্বেও ব্রিজ নির্মাণের কাজ শেষ হয়নি। তবে আংশিক সম্পূর্ণ হওয়াতেই গত ২২শে সেপ্টেম্বর ব্রিজটি খুলে দেওয়া হয়েছে এবং মুখ্য মন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ব্রিজটি উদ্বোধন করছেন। মোট ৪৬৫.১১ কোটি টাকা খরচ করে ৭৪৩.৪৩ মিটার লম্বা টালা সেতু (Tala flyover) ফিরে পেতে চলেছে শহর কলকাতা।
তবে জানা গেছে যে প্রথম এক সপ্তাহ ছোট যানবাহন চলাচল করবে এই ব্রিজ দিয়ে। তারপর বড় গাড়ি চলাচলের জন্য ব্রিজ খোলা হবে। টালা সেতুটি চালু হওয়ায় উত্তর কলকাতার বাসিন্দাদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিস্তর সুবিধা হচ্ছে। মেয়র ফিরহাদ হাকিম এই ব্রিজের বিষয় জানিয়েছেন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে নতুন এই সেতুটি তৈরি হওয়ায় তা আগের তুলনায় অনেক বেশি মজবুত হয়েছে। এছাড়া জানা গেছে উদ্বোধনের পূর্বে টালা সেতুতে বাস চালানোর আবেদন জানিয়েছিল বেসরকারি বাস মালিকদের সংগঠনগুলি। সেই আবেদন জমা পড়েছিল পরিবহণ দফতরে। কিন্তু সেই আবেদন পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন।
আরো জানা গেছে এই সেতুর বিষয় যে চার লেনের ওই সেতু দু’টি ফ্ল্যাঙ্কে বিভক্ত। উদ্বোধনের পরে এখন শুধুই ডান দিকের ফ্ল্যাঙ্কটি সাধারণের ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পুরনো সেতুর যে দিকটি ডানলপ থেকে শ্যামবাজারমুখী যান চলাচলে ব্যবহৃত হত, নতুন সেতুর সেই ফ্ল্যাঙ্কটি দিয়েই শুধু ছোট গাড়ি চলাচল করানো হচ্ছে। ওই ফ্ল্যাঙ্কটিকে দ্বিমুখী রাস্তা হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। আবার কেউ কেউ বলছে সেটি একমুখী রেখে ব্যবহার করা হচ্ছে সেতুর পার্শ্ববর্তী অন্য রাস্তা। এই বিষয় সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
এছাড়া যেহেতু উত্তর কলকাতার সঙ্গে শহরতলির যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম টালা সেতু। পুজোর আগে সেতুটি খুলে দেওয়া হলে যানজটের ভোগান্তি অনেকটাই কমবে। আগে টালা সেতুর ভারবহন ক্ষমতা ছিল ১৫০ টন। এ বার সেই ভারবহন ক্ষমতা বেড়েছে অনেকটাই। আর জানিয়ে দি যে সেতুটি তৈরি করতে কারিগরি সহায়তা নেওয়া হয়েছে আইআইটি খড়গপুরের। আরো জানা গেছে যে টালা সেতু পুরোদমে চালু হয়ে গেলে চিৎপুর উড়ালপুল ভাঙার কাজ শুরু করবে পূর্ত দফতর।