বলিউড থেকে বহু দূরে মিঠুন, প্রসেনজিতের এই নায়িকা বর্তমানে গুমনামিতে কাটাচ্ছেন জীবন

বিজয়েতা পন্ডিত (Vijayta pandit) বলিউডের (Bollywood) একজন নাম করা অভিনেত্রী (Bollywood actress) ছিলেন। তিনি ১৯৮১ সালে রাজেন্দ্র কুমারের পরিচালনায় ‘লভ স্টোরি’ ফিল্মের মাধ্যমে বলিউডে ডেবিউ করেছিলেন। এই ফিল্মে বিজয়েতার অভিনয় ও তার সাথে কুমার গৌরবের জুটিকে দর্শক দ্বারা খুব পছন্দ করা হয়েছিল। তবে বিজয়েতার (Vijayta pandit) বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে (Bollywood film industry) আসার গল্পটা একটু অন্যরকম ছিল। বিজয়েতার জন্ম হরিয়ানার হিসার শহরে হলেও তাঁর বেড়ে ওঠা মুম্বইয়ে। তাঁর পরিবারের প্রায় সকলেই শাস্ত্রীয়সঙ্গীত চর্চার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিজয়েতারা তিন ভাই এবং চার বোন। ভাইবোনদের মধ্যে দিদি সুলক্ষণা অভিনয় জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পড়াশোনার ফাঁকে দিদির সঙ্গে শুটিং দেখতে যেতেন বিজয়েতা। সেই সেটে উপস্থিত ছিলেন রাজেন্দ্র কুমার। অভিনেতা হিসাবে বহু বছর ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করলেও প্রথমবার বলিউডে প্রযোজনার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। সেই ছবিতে অভিনেতা হিসাবে বেছেছিলেন তাঁর ছেলে কুমার গৌরবকে। নায়িকার সন্ধান করছিলেন রাজেন্দ্র। সেটে অভিনেত্রী (Bollywood actress) বিজয়েতার উপর নজর পড়ে তাঁর।

এরপর রাজেন্দ্র বিজয়েতার দিদি সুলক্ষনার কাছে বিজয়েতার জন্য অভিনয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেছিলেন। কিন্তু বিজয়েতা তখন পড়ুয়া ছিল ও তার বয়স মাত্র ১৫/১৬ বছর হওয়ায় তার বাড়ির লোক পড়াশোনার ক্ষতি হবে বলে তাকে ফিল্মে কাজ করার অনুমতি দিচ্ছিল না। কিন্তু পরে যখন বিজয়েতা পরিবারের লোকেদের ভরসা দেয় যে অভিনয় ও পড়াশোনা একসাথে চালাবে এবং অভিনয়ের কারণে পড়াশোনার ক্ষতি হবে না তখন
বাড়ির লোকেরা সম্মতি দিয়েছিলেন। রিপোর্ট অনুযায়ী জানা গেছিল যে লাভ স্টোরি ফিল্মের শুটিং চলাকালীন কুমার গৌরব ও বিজয়েতার সম্পর্ক অনেক গাঢ় হয়ে উঠেছিল ও তাদের অনস্ক্রিন কেমিস্ট্রিও সকলের পছন্দ এসেছিল। তাই দর্শকরা তাদের একসাথেই দেখতে চাইছিল। এই কারণে পরিচালক-প্রযোজকেরা তাঁদের দু’জনকে একসঙ্গে অভিনয়ের প্রস্তাব জানাতেন। আর এই জুটিও একসাথে বেশি সময় কাটানোর লোভে তারাও এই প্রস্তাবে রাজি হতেন। কিন্তু
রাজেন্দ্র চাইতেন না তাঁর ছেলে কেরিয়ার ছেড়ে অন্য কোনও দিকে মন দিক। বিজয়েতার সঙ্গে কুমারের মেলামেশাও পছন্দ করতেন না তিনি। এই কথা যখন বিজয়েতা জানতে পেরেছিলেন তখন কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন করে দিয়েছিলেন তিনি ও সমস্ত ছবির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছিলেন।

Vijayta pandit

এই ঘটনার প্রায় পাঁচ বছর পর ১৯৮৬ সালে মুক্তি পায় ‘কার থিফ’ ফিল্ম। এই ফিল্মেতে সুনীল আনন্দ এবং আশা পারেখের সঙ্গে অভিনয় করে ছিলেন বিজয়েতা। শুট চলাকালীন এই ফিল্মের পরিচালক সমীর মলকানের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু এই সম্পর্কও বেশি দিন টেকেনি। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চারটি ফিল্মেতে অভিনয় করেছিলেন বিজয়েতা। মিঠুন চক্রবর্তী, শক্তি কপূর, অনিল কপূর, অমরেশ পুরি, ড্যানি ডেনজংপার মতো বলি তারকার সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন তিনি। এমনকি, টলিউডে প্রসেনজিতের সঙ্গে ‘অমর সঙ্গী’ ফিল্মেও অভিনয় করেছিলেন বিজয়েতা। পর পর হিন্দি এবং বাংলা ছবিতে অভিনয় করলেও বিজয়েতার জীবন অন্য দিকে মোড় নেয়। তাঁর দিদি সুলক্ষণার সঙ্গে সঞ্জীব কুমারের গভীর সম্পর্ক ছিল। সঞ্জীব হৃদ্‌রোগে মারা যাওয়ার পর সুলক্ষণা মানসিক অবসাদের শিকার হন। তাঁকে সামলানোর দায়িত্ব এসে পড়ে বিজয়েতার উপর। আর্থিক উপার্জনের জন্য তিনি তাঁর দুই ভাই সুরকার জুটি যতীন-ললিতের সঙ্গে কাজ করা শুরু করেন। তাঁদের স্টুডিয়োতেই বেশির ভাগ সময় কাটাতেন বিজয়েতা।

তবে স্টুডিওতে কাজ করার সময়কালীন বিজয়েতার আলাও হয়েছিল শ্রীবাস্তবের সঙ্গে। তিনিও সঙ্গীত জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কখন যে ভালবাসায় পরিণত হয় তা বুঝতেই পারেননি বিজয়েতা। ১৯৯০ সালে আদেশের সঙ্গে বিয়ে হয় বিজয়েতার। দুই পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তিনি। পরিবারের সকলে গানবাজনার সঙ্গে যুক্ত থাকায় বিজয়েতার সঙ্গে সঙ্গীতের সখ্য বহু দিনের। তাই যতীন-ললিত যে ফিল্মের গানের সুর করতেন অনেক ক্ষেত্রে বোন বিজয়েতা সেই ছবিতে গান করতেন। শুধু হিন্দি ফিল্মেই নয় বরং বাংলা ফিল্মেও গান গেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সঙ্গীত জগতে পদার্পণের কয়েক বছর পর সমস্যা দেখা দেয়। এমন বহু বার হয়েছে যখন বিজয়েতাকে দিয়ে প্রথম বার গান গাওয়ানোর পর সুরকারেরা অলকা ইয়াগনিকের কাছে যেতেন। শেষ পর্যন্ত অলকাকে দিয়েই গানগুলি গাওয়ানো হত। এক সাক্ষাৎকারে বিজয়েতা দাবি করেছিলেন, তিনি যে সুর-তাল-লয়ে গাইতেন, অলকা সেটাই অনুকরণ করতেন। এর ফলে অলকার অনুশোচনা হত বলেও দাবি করেন তিনি।

Vijayta pandit

এরপর ২০০২ সালে বিজয়েতার দিদি সুলক্ষনার শরীর অনেক বেশি পরিমাণে খারাপ হয় ও আর্থিক অবস্থা শোচনীয় হওয়ায় বিজয়েতা তার দিদির বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে সেই টাকায় সুলক্ষনার চিকিৎসা করেছিলেন। আর তখন দিদি সুলক্ষনাকে নিজের বাড়িতে এনে রেখেছিলেন। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আদেশ একটি বিলাসবহুল বাংলো কেনার সিদ্ধান্ত নেন। অগ্রিম টাকা দিয়ে বুকও করে ফেলেন বাংলোটি। কিন্তু এর পর আদেশের ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়ে। মুম্বইয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু হলেও আদেশকে সুস্থ করতে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল। এর ফলে যে বিপুল পরিমাণ খরচ হত তা জোগাড় করার সাধ্য ছিল না আদেশ-বিজয়েতার। তাই প্রথমে তাঁরা এক কোটি টাকা মূল্যের মার্সিডিজ গাড়িটি বিক্রি করেন। আদেশের স্টুডিয়োটিও ভাড়া দিতে হয়। বিজয়েতার জন্মদিন উপলক্ষে আদেশ তাঁকে যে বহুমূল্য গাড়ি উপহার দিয়েছিলেন, তাও বিক্রি করে দিতে হয়। শেষ পর্যন্ত খরচের ভার সামলাতে না পেরে বাংলোটি কেনার জন্য যে টাকা দেওয়া হয়েছিল, তা ফেরত নিতে যান বিজয়েতা।

কিন্তু এই বাংলোর মালিকানা তখন ‘রামায়ণ’ নির্মাতা রামানন্দ সাগরের ছেলে মোতিসাগরের কাছে। শোনা যায়, বিজয়েতার কাছে সব শোনার পরেও টাকা ফেরত দেননি তিনি। পরে টাকা ধার নিয়ে চিকিৎসা করানোর পরেও আদেশকে বাঁচাতে পারেননি বিজয়েতা। স্বামীকে হারানোর শোকে কাতর হয়ে পড়েছিলেন তিনি। স্বামীর মৃত্যুর কিছুদিন পর আবার একবার ধাক্কা খেছিলেন বিজয়েতা যখন তার এক বোন হটাৎ নিখোঁজ হয়ে গেছিল। এই বোনের নাম সন্ধ্যা ছিল। জানা গেছিল যে নিজের বাড়ি থেকে বেরিয়ে ব্যাঙ্কে যাচ্ছিলেন সন্ধ্যা। তার পর আর বাড়ি ফিরে না আসেননি তিনি। পরে তাঁর কঙ্কালসার দেহ উদ্ধার করা হয়। স্বামীর মৃত্যুর কিছু বছর পর ছেলেকেও হারিয়েছিলেন তিনি। বলা যেতে পারে বিজয়েতা জীবনটা অনেক কষ্টকর ও সংগ্রামে ভরা ছিল। জানিয়ে দি যে সম্প্রতি বিজয়েতা সঙ্গীত জগৎ এবং সিনেমা জগৎ থেকে বহু দূরে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। তবে তার বড় ছেলে অভিতেশ মায়ের পেশা অনুসরণ করে সঙ্গীতচর্চা শুরু করেছেন। অভিনেতা টাইগার শ্রফের দুটো নাচের ভিডিয়োয় গান গেয়েছেন বিজয়েতার বড় ছেলে অভিতেশ। এছাড়া বিজয়েতার ছোট ছেলে ডাক্তারির পড়াশোনা করছেন বলে জানা গেছে। বলা যেতে পারে এখন দুই ছেলেকে নিয়েই দিন কাটাচ্ছেন বিজয়েতা।