পতিতালয়ের মাটি ছাড়া কেন তৈরি করা হয় না মা দুর্গার মূর্তি? কী রয়েছে কারণ…যার জন্য এখনো ফলো হয় এই নিয়ম
মা দুর্গা হচ্ছেন পবিত্র ও শুভ্রতার প্রতীক। কিন্তু খুব কম সংখ্যক লোকেরাই জানে যে তার মূর্তি তৈরি করা হয় অপবিত্র ও অশুচি এলাকা অর্থাৎ বেশ্যাখানার মাটি দিয়ে।
বাঙালিদের দুর্গা পূজা নিয়ে একটা আলাদা অনুভূতি কাজ করে। আর এই বাঙালির দুর্গা পূজা উৎসব শুরু হতে আর একটা মাসের অপেক্ষা। এখন আগস্ট মাস চলছে। সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখ পড়ছে মহা পঞ্চমী। কিছু কিছু বাঙালি মানুষরা তো পুজোর কেনাকাটাও শুরু করে দিয়েছে।
তবে যেই পুজো নিয়ে বাঙালিরা এতো মেতে থাকে সেই পুজো সম্মন্ধে অনেক বিষয় রয়েছে যা বাঙালিরা জানে না। যেমন আপনি কি জানেন যে দুর্গা পূজাতে মা দুর্গার মূর্তি (durga pratima statue)তৈরি হয় কোন মাটি ব্যবহার করে এবং এই মাটি কেন ব্যবহার করা হয়? কি জানেন না তো ? কোনো ব্যাপার না! আজ আমরা এই আর্টিকেলে বলবো যে দুর্গা মায়ের মূর্তিতে কোন মাটি ব্যবহার হয় এবং কেন। আসুন জেনেনি।
মা দুর্গা হচ্ছেন পবিত্র ও শুভ্রতার প্রতীক। কিন্তু খুব কম সংখ্যক লোকেরাই জানে যে তার মূর্তি তৈরি করা হয় অপবিত্র ও অশুচি এলাকা অর্থাৎ বেশ্যাখানার মাটি দিয়ে (Red light area soil)। মা দুর্গার পূজা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই শিল্পীরা তৈরি করতে শুরু করে দেয় পরের বছরের জন্য দুর্গা মূর্তি তৈরির কাজ। পূজোর কয়েকমাস আগে থেকেই কুমোর পাড়ার মৃৎশিল্পীরা খুব ব্যস্ত থাকেন। তাদের কাদামাখা হাতে জেগে ওঠে মৃন্ময়ী রূপে দেবী মা দুর্গা। প্রথমে একমেটে তারপর দোমেটে থেকে ধাপে ধাপে ফুটে ওঠে মা দুর্গার মূর্তি।
তবে জানিয়ে রাখি যে মা দুর্গার মূর্তি (Durga Pratima statue)তৈরি করতে বেশ্যাখানার মাটি ছাড়াও ব্যবহার হয় পবিত্র গঙ্গা জল, গাভীর মূত্র, গোবর, ধানের শিষ ইত্যাদি। আর এই সব পদার্থ গুলির মিশ্রনে তৈরি হয় দেবী মূর্তি। এই সামগ্রী গুলির মধ্যে বেশ্যাখানার মাটি (Red light area soil)ব্যবহার করে দেবমূর্তি তৈরির নিয়মের পিছনে কারণ হলো বেশ্যাদের সমাজে ভালো চোখে দেখা হয় না। তাদের উপর জমে উঠেছে বাঞ্চনা ও অবজ্ঞার পাহাড়। শাস্ত্র মতে পুরুষমানুষ যখন কোনো বেশ্যাখানায় গিয়ে কোনো বেশ্যার সাথে ঘনিষ্ট হয় তখন সেই ব্যক্তি তার জীবনের সকল সঞ্চিত পুন্য সেখানেই ফেলে আসেন। আর তারা ফেরত নিয়ে যান পাপের বোঝা।
তাই মানব সম্প্রদায় বিশ্বাস করে যে যেহেতু মানুষের মধ্যে কামনা, বাসনা ও লালসা রয়েছে সেগুলি বেশ্যারা নিজেদের মধ্যে নিয়ে নেন। আর এইভাবেই তারা নিজেদের অশুদ্ধ ও অপবিত্র করে সমাজকে শুদ্ধ করে তোলেন। তাই ফলে হাজার হাজার পুরুষের পুণ্যে বেশ্যাদ্বারের মাটি হয়ে ওঠে পবিত্র ৷ সে কারণেই এই মাটি দিয়ে গড়তে হয় দেবী মূর্তি ৷
এই আচার থেকে বোঝানো হয় যে নারী মায়ের জাতি। নারীর ঔরসেই পুরুষের জন্ম। নারীকে বেশ্যা বানায় পুরুষরাই। তাই ঐ পুরুষরাই অপবিত্র। মায়ের প্রতিমা তৈরীতে পতিতালয়ের মাটি দিতে হয় যাতে যাঁরা এই পরিস্থিতির শিকার তাঁদের সম্মান করা হয়। নারী কখনো অপবিত্র হতে পারে না। এই ধারণাটিই লুকিয়ে থাকে এই রীতির আড়ালে৷ শরৎকালে হয় দেবীর অকাল বোধন ৷ এই সময় মহামায়া ৯টি রূপে পূজিত হন ৷ আর মায়ের নবম রূপটিই হলো বেশ্যাখানার প্রতিনিধি ৷ মনে করা হয় এই কারণেই এই রীতির জন্ম হয়েছে ৷