গরমের দরুন প্রতি ঘন্টায় মৃত্যু শত শত পাখির, করা হচ্ছে বাড়ির ছাদে জল রাখার আবেদন

বিজ্ঞানের অগ্রগতি আর উন্নততর প্রযুক্তির পিছনে ছুটতে গিয়ে মানুষ অজান্তেই নিজের সর্বনাশ ডেকে এনেছে। অনিয়ন্ত্রিত সভ্যতা এবং মাত্রাতিরিক্ত দূষণের ফলে বাতাসে প্রভাব বিস্তার করেছে গ্রীনহাউস গ্যাস। ফলস্বরূপ অস্বাভাবিকহারে বেড়ে যাচ্ছে পৃথিবীর উষ্ণতা। বিজ্ঞানীরা বহুবার বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ে উদ্বেগ ও সতর্কতা প্রকাশ করলেও সরকার এবং সাধারণ জনগণ কোনোদিনই তাতে কান দেয়নি। যার জন্য ইতিমধ্যেই গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সেইসঙ্গে, চলতি বছরের মার্চ থেকে শুরু হয়েছে গরম। যা এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ভারতের অনেক শহরেই পারদ ৫০ ডিগ্রির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। অন্যেদিকে আরও একটি ভীষণ উদ্বেগজনক খবর সামনে এসেছে।

তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে, মানুষ থেকে শুরু করে সমস্ত প্রাণীকুল যখন বৃষ্টির অপেক্ষায় রয়েছে, তখন বৃষ্টির দেখা না মিললেও আকাশ থেকে ঝরে পড়তে দেখা গেছে অসংখ্য পাখিকে। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন, এরকমই অদ্ভুত এবং চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটছে পুরো গুজরাট রাজ্য জুড়ে। গত কয়েকদিন ধরেই পশ্চিম গুজরাটের আকাশ থেকে অসংখ্য পাখিকে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে অতিরিক্ত তাপমাত্রা কারনেই ডিহাইড্রেড হয়ে পড়ছে পাখিরা। ফলে তারা ওড়বার সমস্ত এনার্জি হারিয়ে ফেলছে। এজন্যই মাটিতে পড়ে যাচ্ছে পাখিগুলো।

গুজরাট সহ, পশ্চিম ভারতের সমস্ত রাজ্যগুলিতেই তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। সেইসাথে বাড়ছে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকিও । তবে মানুষজন এসি, ফ্যান ও কুলারের সাহায্যে নিজেকে সুরক্ষিত করতে পারলেও ,অবলা প্রাণী গুলির জন্য গ্রীষ্মকাল এক মারণ ঋতু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আহমেদাবাদের একটি পশুপ্রেমী সংগঠন পড়ে যাওয়া পাখি গুলিকে উদ্ধার করে তাদের সেবা শুশ্রূষা করছেন। তাঁরা জানিয়েছেন গত কয়েক সপ্তাহে হাজার হাজার পাখির চিকিৎসা তাঁরা করেছেন। এর সাথেই তারা বলছেন , ইদানিং পাখির অসুস্থতার সংখ্যা প্রচুর বৃদ্ধি পেয়েছে যা আগে কখনো দেখা যায় নি। এনজিওর সদস্যরা গরমে অসুস্থ পাখিদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করছেন। পাখিগুলিকে দ্রুত সুস্থ করার জন্য সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাল্টি-ভিটামিন ট্যাবলেটও দিচ্ছেন তাঁরা।

আপনাদের জানিয়ে রাখি গরমের কারণে পাখিদের অসুস্থ হয়ে পড়া কোন সাধারণ ব্যাপার নয়। কারণ প্রকৃতি সব প্রাণীকেই এমনভাবে তৈরি করেছে, যাতে তারা সমস্ত আবহাওয়া সহ্য করতে পারে। কিন্তু বর্তমানে প্রচণ্ড গরমে আর সাড়া দিচ্ছে না পাখিদের শরীর। বিজ্ঞানীদের মতে, এখনো যদি গ্লোবাল ওয়ার্মিং সম্পর্কে সচেতন না হওয়া যায় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে খুব খারাপ দিন দেখতে হবে মনুষ্যজাতিকে। আবহাওয়াবীদদের মতে পশ্চিমী রাজ্যগুলির তাপমাত্রা বেশ কয়েকদিন ৪০ থেকে ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকবে এবং সমানতালে তাপপ্রবাহ চলবে। আর এজন্যই রাজস্থান, হরিয়ানা এবং মধ্যপ্রদেশের অনেক জায়গায় অতিরিক্ত তাপমাত্রার জন্য লাল ও কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে।