লাখ টাকার ব্যবসা ছেড়ে শুরু করেছিলেন এই চাষবাস, আজ করেন বার্ষিক ৪ কোটি টাকার ব্যবসা
ভারতের বেশিরভাগ কৃষক ঐতিহাসিক কৃষি পদ্ধতি অনুযায়ী কৃষিকাজ করে। কিন্তু এই কৃষি পদ্ধতিতে কৃষকদের আয় ভালো হয় না যার ফলে তাদের আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আবার আর্থিক সমস্যার কারণে অনেক কৃষক আজকাল কৃষিকাজ ছেড়ে অন্যকাজও করতে শুরু করেছে। তবে কিছু কিছু আজকালকার যুবক-যুবতী রয়েছে যারা তাদের মোটা মাইনের চাকরি ছেড়ে কৃষিকাজকে বেছে নিচ্ছে। কিন্তু তারা সেই পুরোনো ঐতিহাসিক কৃষিকাজ পদ্ধতি নয় বরং নতুন মাধ্যম দ্বারা কৃষিকাজ করে মাসে প্রায় লাখ লাখ টাকা আয় করছে। বিশেষ করে আজকালকার তরুণ-তরুণীর মধ্যে জৈবিক কৃষিকাজ করার ক্রেজ বেড়ে চলেছে। আজ আমরা আমাদের আর্টিকেলে এমন এক যুবতীর বিষয় আলোচনা করবো যিনি টিসিএস-এ লাখ লাখ টাকার চাকরি ছেড়ে জৈবিক কৃষিকাজ (organic farming) করে ৪ কোটি (4 crore) টাকার ব্যবসা (Business) করে নিয়েছেন। আসুন জেনেনি এই যুবতীর যাত্রা সংক্ষেপে।
এই যুবতীর নাম হলো গীতাঞ্জলি রাজমনি। ইনি হায়দ্রাবাদের বাসিন্ধা। তবে গীতাঞ্জলির জন্ম হয়েছিল কেরেলাতে। তিনি সবসময় গরমের ছুটিতে তার বাড়ি কেরেলা যেতেন। গীতাঞ্জলি কেরালার পাহাড় ও কৃষিকাজ দেখে বড় হয়েছেন তাই তিনি কৃষিকাজ ও কেরেলাকে খুব ভালো বাসতেন। গীতাঞ্জলি যখন অনেক ছোট ছিলেন তখন তার পিতা এক রাস্তা দুর্ঘটনায় মারা গেছিলেন। গীতাঞ্জলির মা গীতাঞ্জলি ও তার ভাইকে মানুষ করেছিলেন। গীতাঞ্জলি ২০০১ সালে বিএসসি পড়া সম্পূর্ন করেছিলেন এবং ২০০৪ সালে বিজনেস নিয়ে এমবিএ সম্পূর্ন করেছিলেন। এরপর ১২ বছর তিনি একটি ক্লিনিক্যাল রিসার্চ ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেছিলেন।
এরপর গীতাঞ্জলি টিসিএস কোম্পানিতে গ্লোবাল বিজনেস রিলেশন ম্যানেজারের রূপে কাজ পেয়ে গেছিলেন। তিনি এই চাকরি দ্বারা অনেক কিছু শিখেছিলেন। এরপর ২০১৪ সালে তিনি টিসিএস-এর চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। কারণ জীবনে তিনি আলাদা কিছু করতে চাইতেন। এছাড়া এইসবের মধ্যে গীতাঞ্জলি বিয়েও করে নিয়েছিলেন। গীতাঞ্জলির স্বামী ও পরিবার তাকে ব্যবসা (business)শুরু করতে প্রচুর সাহায্য করেছিল। গীতাঞ্জলি লক্ষ্য করেছিলেন যে আজকাল মানুষ ডায়েটের দিকে নজর দেয় না আর বাজারে রাসায়নিক সবজি দ্বারা ভর্তি রয়েছে। আর অর্গানিক সবজির নামে লোকেদের রীতিমত ঠকানো হয়। তাই এইসব ব্যাপারকে মাথায় রেখে গীতাঞ্জলি ২০১৭ সালা নিজের ফার্মিং কোম্পানি শুরু করেন এবং তার মাথায় অর্গানিক সবজি বিক্রির করার বুদ্ধি আসে।
আজ গীতাঞ্জলি হায়দ্রাবাদ, ব্যাঙ্গালোর ও সুরাটের মতো বিভিন্ন শহরে ৪৭ একর জমিতে জৈব চাষ করেন।এমনকি তিনি বড় বড় কোম্পানি থেকে ফান্ডিংও পেয়েছেন। গীতাঞ্জলি কৃষকদের জৈব ও প্রাকৃতিক চাষ (organic farming)পদ্ধতি গ্রহন করার পরামর্শ দিয়েছেন এবং রাসায়নিক সারের ব্যবহার করে নিজেদের জমিকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে বাঁচানোরও উপদেশ দিয়েছেন। ভারতের মাটি কৃষির জন্য সবচেয়ে ভালো হলেও আজকাল সার ব্যবহারের কারণে মাটি ক্রমশ ক্ষয় হচ্ছে।
গীতাঞ্জলি আজ বছরে ২০ কোটি (crore) টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। তিনি ২০১৭ সালে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আর আজ ১৬ হাজারের বেশি গ্রাহক তার কাছ থেকে সবজি কেনে। লকডাউনের কারণে গীতাঞ্জলির ব্যবসা আরো বেশি উন্নতি করেছে কারণ গীতাঞ্জলি একটি এপ্লিকেশন বানিয়েছে যার মাধ্যমে গ্রাহকরা অর্ডার করলে বাড়িতে সবজি ডেলিভারি হয়ে যাবে। আজ গীতাঞ্জলির একটি ভালো ব্যবসায়ী সম্প্রদায় রয়েছে এবং তিনি অন্যান্য কৃষকদেরকে জৈব চাষ করার যেতে পরামর্শও দেন।