৪ হাজার ফুট উচ্চতায় ৫০ বছর ধরে পাথর কেটে বানালেন পুকুর, কারণ জেনে সেলাম করছেন নেটিজনরা
এই ব্যক্তি তৈরি করে ফেললো পশুদের জন্য পাহাড়ে পুকুর
কথায় রয়েছে যে ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়। অর্থাৎ মানুষ মধ্যে যদি কোনো কাজ সফলভাবে করে দেখানোর জেদ থাকে তবে মানুষ অবশ্যই সফলতা অর্জন করতে পারে। আজ আমরা আমাদের আর্টিকেলে এমনি এক ব্যক্তির বিষয় আলোচনা করবো। এই ব্যক্তি হলো হরিয়ানার চারখী দাদরি জেলার অটেলা কালানের বাসিন্ধা কাল্লুরাম। ইনি প্রায় ৪০০০ ফুট উঁচু পাহাড়ে পাথর কেটে পশু-প্রাণীদের জল পান করার জন্য জলাশয় তৈরি করেছেন। এই জলাশয় তৈরি করতে কাল্লুরামের প্রায় ৫০ বছর সময় লেগে গেছে। ২০১০ সালে সম্পূর্ণ হওয়া এই জলাশয়ের মাধ্যমে শত শত পুশু তাদের তৃষ্ণা মেটাতে পারে।
চারখি দাদ্রির ডিসি শ্যামলাল পুনিয়া এবং সাংসদ ধর্মবীর সিং সম্প্রতি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার পর কাল্লুরামের সাহসিকতাকে সালাম জানিয়েছেন। তবে ১২ বছর পরেও সেই পুকুরে যাওয়ার পথ না করা নিয়ে কাল্লুরামের মনে একটা উত্তেজনা রয়েছে। কাল্লুরামের দুঃসাহসিক অভিযান নিয়ে সংবাদদাতারা তার বাড়িতে পৌঁছে তার সাথে কথা বলেন এবং তখন কাল্লুরাম জানান যে তার বয়স যখন ১৮ বছর তখন তিনি অটেলা কালানে অবস্থিত পাহাড়ে গবাদি পশু চরাতে যেতেন। একদিন পাহাড়ে তার তৃষ্ণার্ত একটি গরু জল না পাওয়ায় মারা গেছিলেন। এই দৃশ্য দেখার পর তার মন ভেঙে গেছিল এবং এরপরই তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে পাহাড়ে একটি জলাশয় বা পুকুর তিনি তৈরি করবেন।
এরপর কাল্লুরাম জানান যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরের দিনই তিনি ছেনি ও ১০ কিলোগ্রাম হাতুড়ি নিয়ে পাহাড়ে পৌঁছে গেছিলেন। এরপর প্রতিদিন তিনি এই রুটিন অনুযায়ী জলাশয় তৈরি কাজ করতে থাকেন তাও আবার দিন/রাত বা গ্রীষ্ম বা বর্ষার তোয়াক্কা না করে। এরপর ৫০ বছর পর কাল্লুরাম নিজের লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম হন। পাহাড়ের চূড়ায় একটি ৬৫ ফুট চওড়া, ৩৮ ফুট গভীর এবং ৭০ ফুট লম্বা পুকুর তৈরি করে ফেলেন তিনি। তবে এই জলাশয় তৈরির সময় কাল্লুরামকে যেই যেই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছিল সেইগুলি কাল্লুরাম ভোলেননি। সাম্প্রতিক বর্ষণে পুকুরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেলেও গ্রামবাসীর দাবি সত্ত্বেও প্রশাসনিক কর্মকর্তা বা জনপ্রতিনিধিরা পুকুরে পৌঁছানোর রাস্তা বানাতে না পারায় তারা দুঃখিত।
কাল্লুরামের জানিয়েছেন যে তিনি যখন গ্রামে একটি পুকুর তৈরির প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করেছিলেন তখন তাকে অনেক বিদ্রুপের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এমনকি কিছু লোক তার বাড়িতে পৌঁছে তার বাবা-মাকে উস্কানি ও কটূক্তিও করেছিল সেইসময়। তবে এতো কিছুর পরও তিনি তার লক্ষ্যে অটল ছিলেন। আর যখন পুকুরটি তৈরি হলো তখন যারা একদিন কাল্লুরামকে বিদ্রুপ করেছিল তারাই কাল্লুরামের প্রশংসাত পঞ্চমুখ হয়ে ছিল।
গ্রামের পূর্ব পঞ্চায়েত প্রধান প্রতাপ সিং কাল্লুরামের এই কাজের বিষয় বলেছেন যে- কাল্লুরাম তার ৫০ বছরের কঠোর পরিশ্রমে এমন একটি কাজ করেছেন যা বিস্ময়ের চেয়ে কম নয়। পাহাড় কেটে দীর্ঘ, গভীর ও প্রশস্ত পুকুর তৈরি করা সহজ কাজ নয়। গোটা গ্রাম এই কাজের প্রশংসা করে।
এরপর গ্রামীণ লক্ষ্মীচাঁদ শর্মা যার বয়স ৬৯ বছর তিনি বলেছেন- সম্পদের স্বল্পতা সত্ত্বেও পশুদের কল্যাণে একা হাতে পুকুর তৈরি করা সহজ কাজ নয়। এছাড়া তিনি নিজের চোখে দেখেছেন যে কাল্লুরাম কত কষ্টের পর পশুদের জন্য এই জলাশয় বা পুকুর তৈরি করেছে।
এরপর গ্রামের আরেকজন পূর্ব সরপঞ্চ প্রধান ধর্মবীর সিং বলেছেন-আমার বয়স ৫০ বছর এবং আমি তাউ কাল্লুরামকে একটি পাহাড়ে হাতুড়ি দিয়ে কাজ করতে দেখেছি। এ কাজে তিনি কখনো কারো সাহায্য চাননি। তার পরিশ্রমের ফল এখন পাহাড়ে তৃষ্ণায় কোনো প্রাণী মারা যায় না।
আর সবার শেষে গ্রামীণ ধর্মবীর বলেছেন- নিঃস্ব ও বন্য প্রাণীদের জল সরবরাহ করার জন্য কাল্লুরামের এমন আবেগ ছিল যে তিনি প্রতিদিন আট থেকে দশ ঘন্টা পাহাড় কাটতেন। অসম্ভব কাজকে তিনি সম্ভব করেছেন। ১০ কেজি ওজনের একটি হাতুড়ি দিয়ে পাহাড়ে উঠা এবং তারপর কাজটি করা অত্যন্ত কঠিন।