এক রিক্সা চালকের মেয়ে- যার জীবন শুরু ১০ টাকা দিয়ে, আজ কোটি টাকার মালকিন

তীরন্দাজির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এবং কমনওয়েলথ গেমসে স্বর্ণপদক বিজয়ী দীপিকা কুমারি বিদেশের মাটিতে ভারতের নাম বার বার উজ্জ্বল করেছেন। আজ তিনি পদ্মশ্রী ও অর্জুন পুরস্কার জয়ী। কিন্তু তার এই সফর অতটাও সহজ ছিল না। 1994 সালের 13 ই জুন ঝাড়খণ্ডের রাঁচি থেকে 15 কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত রতুচেট্টি গ্রামে জন্ম।

তার বাবা শিব নারায়ন ছিলেন একজন অটোচালক এবং তার মা গীতা দেবী ছিলেন একজন নার্স। প্রত্যন্ত গ্রামের কুঁড়েঘরে বেড়ে ওঠা এই মেয়েটি ছোটবেলা থেকেই তার সখের জন্য তার বাবার কাছে প্রায়ই তিরস্কৃত হতেন। তার বাবা চেয়েছিলেন তার মেয়ে যেনো পড়াশোনা করে উচ্চপদস্থ আধিকারিক হন।

কিন্তু দীপিকা তার এই সখকে বাঁশের তৈরি তীর-ধনুক দিয়ে নিজের মধ্যেই প্রতিপালন করেছিলেন। তার এই সখের সাথে তার জীবনের সাথে অনেক গল্পই জড়িত আছে। একবার তিনি তার বাবাকে তীর-ধনুক কিনে দিতে বলেছিলেন। কিন্তু তার বাবা তাকে বলেছিলেন এইসব জিনিসে তার সময় এবং মনোযোগ নষ্ট না করে পড়াশোনায় মন দিতে। ‌‌‌‌

এরপর তার বাবা আবার বাজারে তার জন্য তীর-ধনুক কিনতে যান। কিন্তু সেখানে তীর ধনুকের লাখ টাকা দাম শুনে ফিরে আসেন। পিতার এই দারিদ্র্যতা দেখে সে বাসের তীর-ধনুক নিয়ে অনুশীলন করতে থাকে। আসলে এই ছোট্ট মেয়েটির তীরন্দাজি সফলতা সেদিনই শুরু হয়েছিল যেদিন সে তার মায়ের সাথে বাজার যেতে যেতে তার মা শতবার বারণ করা সত্ত্বেও গাছের একটা আমকে একটা ঢিল দিয়ে এক ধাক্কায় ফেলে দেন।

একটু বড় হওয়ার পর তার বন্ধুরা তাকে গাছের আম লক্ষ্য করে তীর ছুড়তে বলে। এভাবেই সে অনুশীলন করতে থাকে। এরপর লোহারদাগাতে অনুষ্ঠিত এক প্রতিযোগিতায় তিনি তার বাবার কাছে থেকে 10 টাকা নিয়ে যান এবং প্রথম পুরস্কার জেতেন। এই 10 টাকা দিয়ে তার যাত্রা শুরু হয়েছিল পরে সে দেশ-বিদেশে পুরস্কার ও খেতাবজয়ী হয়।

2006 সালে মেস্কিকোর মেরিডা শহরে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ কম্পাউন্ড একক ইভেন্টে তিনি স্বর্ণপদক, 2010 সালে কমনওয়েলথ গেমসে স্বর্ণপদক, 2011 থেকে 2013 পর্যন্ত টানা তিন বছর তিনটি বিশ্বকাপে রৌপ্য পদকজয়ী হন। 2016 সালে তিনি রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছে থেকে পদ্মশ্রী পুরস্কার পান। দীপিকার সফল হওয়ার রাস্তা সহজ ছিল না কিন্তু তিনি প্রমাণ করেছেন যে লক্ষ্যে অনড় থাকলে সাফল্য ছিনিয়ে নেওয়া সম্ভব।