CA এর চাকরি ছেড়ে শুরু করেছিলেন মধুর ব্যাবসা, মাত্র ৬ মাসে দাঁড় করিয়েছেন ৩০ লক্ষ টাকার কোম্পানি

আজকাল প্রতিটি যুবক স্বাবলম্বী হওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। ভালো চাকরি থাকলেও নিজের কিছু কাজ করার কথা ভেবে যান তারা। আহমেদাবাদের প্রতীক এরও একটা ভালো চাকরি ছিল, তবুও তার নিজের ব্যবসা শুরু করার খেয়াল আসে। তাই চাকরি ছেড়ে মধুর ব্যবসা শুরু করেন এবং কয়েক মাসের মধ্যেই প্রায় ৩০ লাখ টাকার কোম্পানি গড়ে তোলেন। আহমেদাবাদের বাসিন্দা প্রতীক ঘোডা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট (CA) অধ্যয়ন করেছেন। প্রতীক যে কোম্পানিতে কাজ করতেন, তার বেতন খুব ভালো ছিল।

এতদসত্ত্বেও তার মন চাকরিতে না থেকে নিজের ব্যবসা শুরু করার চিন্তা মাথায় আসে। অবশেষে তিনি তার চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং মধুর ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসা শুরু করার কয়েক মাসের মধ্যে, তার ব্যবসা অনেক বেড়ে যায় এবং প্রায় ৩০ লাখের টার্নওভারে পৌঁছে যায়। সংবাদ মাধ্যমের সাথে কথোপকথনের সময়, প্রতীক ঘোডা বলেছিলেন যে ‘আমি ২০০৬ সালে আমার সিএ পড়াশোনা শেষ করেছি। এরপর আমি ক্যাডিলা, টরেন্ট, মোটিফ ইন্ডিয়া ইনফোটেক এবং স্টারলাইট টেকনোলজির মতো বড় কোম্পানিতেও কাজ করেছি।

চাকরি করার পরও আমার সব মনোযোগ ছিল ব্যবসার দিকে। তারপর আমি অবশেষে ২০২০ সালে একটি মধু ব্যবসা শুরু করার জন্য আমার চাকরি ছেড়ে দিয়েছি।’ কেন তিনি মধুর ব্যবসা শুরু করলেন জানতে চাইলে প্রতীক বলেন, এর পেছনে রয়েছে একটি মজার গল্প। গবেষণার সময় জামনগরের এক বৈধরাজের কাছে গিয়েছিলেন তিমি।সেখানে কয়েকজন রোগী শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাথার চিকিৎসা করতে এসেছিলেন। তারপর সেই বৈধিরাজ রোগীদের চিকিৎসার জন্য একটি বাক্স অর্ডার দিয়ে সেই বাক্স থেকে একটি মৌমাছি বের করলেন, তারপর সেই মৌমাছিটি দিয়ে রোগীর শরীরের যন্ত্রণাদায়ক অংশে হুল ফোটাল।

প্রতীক আরও বলেন, আমি খুবই অবাক হয়েছি যে হুল ফোটালে রোগীর শরীরের ব্যাথা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। প্রতীক বৈদ্যরাজকে এই অলৌকিক ঘটনার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেছিলেন যে এটি অলৌকিক ঘটনা নয়, একটি থেরাপি। এখান থেকেই প্রতীক মৌমাছি পালনের ধারণা পেয়েছিলেন। বৈধিরাজের কাছ থেকে মধু ও মৌমাছি পালন সম্পর্কে অনেক কিছু শিখেছিলেন। মৌমাছি পালনের ব্যবসা শুরু করার আগে, প্রতীক অনেক কৃষকের সাথে দেখা করেছিলেন যারা ইতিমধ্যে এই কাজে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি এ সংক্রান্ত অনেক বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে গবেষণাও করেছেন।

প্রতীককে তার মামা বিভাকর ঘোডা এই ব্যবসায় ব্যাপকভাবে সমর্থন করেছিলেন যিনি কৃষিকাজ এবং দুগ্ধজাত কাজ করতেন। প্রথমত, তার মামা তাকে এই কাজের জন্য অনুপ্রাণিত করেন এবং প্রতীকের সাথে কাজ শুরু করেন। বর্তমান সময়ে তার সাথে অনেক লোক কাজ করছে। প্রতি ১৫ দিনে প্রায় ৭৫০ কেজি মধু উৎপন্ন হয়। প্রতীক মৌমাছি পালনের জন্য গুজরাটের জামনগরের কাছে একটি জায়গা বেছে নিয়েছিলেন যেখানে তিনি এই কাজ করছেন। তিনি ১৫ই আগস্ট ২০২০-এ BEE BASE PVT LTD নামে তার কোম্পানি নিবন্ধন করেছেন। প্রতীক একটি সাক্ষাৎকারে আরও বলেছিলেন যে তিনি এই কাজটি শুরু করেছিলেন ১৫ লক্ষ টাকা দিয়ে।

এই ব্যবসা শুরু করতে তিনি প্রথমে ৩০০ মৌমাছির বাক্স তৈরি করেন। প্রতি ১৫ দিনে প্রায় ৭৫০ কেজি মধু এই বাক্সগুলি থেকে নির্গত হয়। অর্থাৎ প্রতিটি বাক্স থেকে প্রায় ২.৫ কেজি মধু বের হয়। প্রতীক জানান, এই কাজ করতে গিয়ে মাত্র ৬ মাস লেগেছে এবং প্রায় ৩ টন মধু উৎপাদিত হয়েছে।

প্রতীকের কোম্পানি আদা, জাফরান, লিচু ইত্যাদির মতো বিভিন্ন স্বাদে মধু তৈরি করে। এ ছাড়া মোম, চকোলেট হানি, হানি চকলেট ট্রাফল, হানি ফিলড চকলেটের মতো পণ্যও প্রস্তুত করা হচ্ছে। এই ফ্লেভারগুলি ছাড়াও, প্রতীকের কোম্পানি প্রোবায়োটিক মধুর পাশাপাশি জৈব লিপস্টিক, ঠোঁট বামগুলির মতো পণ্য তৈরিতেও নিযুক্ত রয়েছে।

কোম্পানির বিপণন সম্পর্কে, প্রতীকের মামা বিভাকর ঘোডা বলেন, “আমরা কোম্পানির নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পেজ তৈরি করেছি। যেখানে আমরা আমাদের পণ্যের তথ্য মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিই। এই পেজের মাধ্যমে অনেক মানুষ আমাদের সাথে যুক্ত হয়েছে এবং এভাবে আমাদের কোম্পানির সরবরাহ মানুষের মধ্যে বেড়েছে।”

তিনি বলেন, “পণ্য সরবরাহের জন্য আমরা এখনো কোনো রিটেইল চেইন বা বিতরণ সংস্থার শরণাপন্ন হইনি। তা সত্ত্বেও, আমাদের কোম্পানি প্রতি ১৫ দিনে প্রায় ৭৫০ কেজি মধু উৎপাদন ও সরবরাহ করছে। তিনি আরও বলেন যে “আমাদের কোম্পানি মাত্র ৬ মাসের মধ্যে অনেক বেড়ে উঠেছে এবং এখন এর বাজার মূল্য ৩০ লক্ষ টাকায় পৌঁছেছে।

এর কারণ তাদের পণ্যের গুণমান। প্রতীকের মৌমাছি পালন কেন্দ্র এবং তার কোম্পানি ১০জন মহিলা সহ প্রায় ২০ জনকে নিয়োগ করেছে। এই নারীরা তাদের কোম্পানির পণ্য মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ার কাজ করেন। তাদের কোম্পানির পরিচালক এবং একজন সমাজকর্মী কৃতিবেন মানকোদি বলেছেন যে “এই ব্যবসার পাশাপাশি আমরা নারীর ক্ষমতায়নের দিকেও মনোযোগ দিই এবং তাদের বৃদ্ধির জন্য কাজ করি।”