২ টি ব্যাধির সাথে ২৯ দিন অবধি লড়াই, দেহত্যাগ করলেন ভারত রত্ন লতা মঙ্গেশকর

সুরের ‘দেবীর’ মৃত্যুতে শোকস্ত আজ গোটা বিশ্ব। ভারত তার অন্যতম অমূল্য রত্ন কে হারিয়েছে। করোনার কর্কশ কণ্ঠ ভারতের কন্ঠ নাইটিঙ্গেলে নিয়ে গেল। সুরের রানী “লতা মঙ্গেশকর” করোনার যুদ্ধে হেরে বিশ্বকে বিদায় জানিয়েছেন। আজ তিনি মুম্বাইয়ের ‘ব্রিচ ক্যান্ডি’ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ৮ জানুয়ারি ৯২ বছর বয়সী লতাজির করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে, তার পরেই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।

 

লতাজির ভর্তির খবরও সামনে আসে প্রায় দুদিন পর ১০ জানুয়ারি। টানা ২৯ দিন একসাথে করোনা এবং নিউমোনিয়া উভয়ের সাথে লড়াই করেছিলেন তিনি।তাকে ‘ব্রিচ ক্যান্ডি’ হাসপাতালের আই.সিই.উ(ICU) তে রাখা হয়েছিল। দীর্ঘ দিন ধরে লতা দেবীর চিকিৎসা করা ডাঃ প্রতত সমধানীর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসক দল লতা তাইয়ের চিকিৎসা করছিলেন। চিকিৎসা চলাকালীন তার স্বাস্থ্যের উন্নতিও দেখা গিয়েছিলো।

তাকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। প্রায় ৫ দিন আগে তার স্বাস্থ্যের একটু উন্নতি হয়েছিল বলে জানা যায়। পরবর্তীতে অক্সিজেন সরানো হলেও আই.সিই.উ তেই রাখা হয়েছিল তাকে। সুরের দেবী ‘লতা’ জির মৃত্যুতে গোটা দেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ভক্তরা তার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছিলেন কিন্তু আজ এই দুঃসংবাদ কোটি কোটি সঙ্গীত প্রেমীদের হৃদয় ভেঙে দিয়েছে।

 

শত শত ক্লাসিক গানে কণ্ঠ দেওয়া লতা জি আজ এক অনন্ত যাত্রায় চলে গেলেন। গৃহকর্মীর করোনা পজিটিভ আসার পর প্রায় দুই বছর বাড়ি থেকে বের হননি লতাজি। তিনি মাঝে মাঝে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ভক্তদের বার্তা দিতেন। ক্রমবর্ধমান বয়স এবং স্বাস্থ্যের অবনতির কারণে তিনি তার ঘরেই বেশি সময় কাটাতেন।

তার বাড়ির এক কর্মচারীর রিপোর্টে করোনা পজিটিভ আসার পর তাকে পরীক্ষা করা হয়। ৮ ই জানুয়ারি তারও রিপোর্ট পজিটিভ আসে। ৯২ বছর বয়সী লতা জি ৩৬ টি ভাষায় প্রায় ৫০ হাজার গান গেয়েছিলেন। যা যেকোনো গায়ক /গায়িকার জন্য একটি রেকর্ড। এক হাজারেরও বেশি ছবিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৬০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত একটি সময় ছিল, যখন লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠ ছাড়া চলচ্চিত্রগুলি অসম্পূর্ণ বলে বিবেচিত হত।

 

প্রায় ৮০ বছর ধরে সঙ্গীত জগতে সক্রিয় লতা মঙ্গেশকর, ২৮ শে সেপ্টেম্বর ১৯২৯ সালে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ১৯৪২ সাল থেকে মাত্র ১৩ বছর বয়সে গান গাওয়া শুরু করেছিলেন। লতা জির পিতা পন্ডিত “দীননাথ মঙ্গেশকর” ছিলেন সঙ্গীত ও মারাঠি থিয়েটার জগতে একটি সুপরিচিত ব্যাক্তি। তিনিই লতাজিকে গান শিখিয়েছিলেন। ৫ ভাইবোনের মধ্যে বড় লতা জির, তিন বোন আশা ভোঁসলে, উষা মঙ্গেশকর, মীনা মঙ্গেশকর এবং ভাই হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর।

লতা মঙ্গেশকর তার বোন ঊষা এবং ভাই হৃদয়নাথের সাথে মুম্বাইয়ের পেডার রোডের প্রভুকুঞ্জে প্রথম তলায় থাকতেন। তিনি বহু বছর ধরে এখানে বসবাস করছিলেন। বোন আশা ভোঁসলেও এখান থেকে কিছু দূরে থাকেন। কয়েক বছর ধরে প্রভাকুঞ্জ সোসাইটির সকাল শুরু হয় লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গীতে। প্রায় ৪ বছর যাবত অসুস্থতার কারণে তার রিয়াজ প্রায় বন্ধ ছিল।

 

সঙ্গীত জগতে তার অবদানের জন্য ২০০১ সালে লতা মঙ্গেশকরকে ভারতের সর্বোচ্চ পুরস্কার ভারতরত্ন প্রদান করা হয়েছিল। এর আগেও তাঁকে পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণ এবং দাদাসাহেব ফালকে সহ অনেক সম্মান দেওয়া হয়েছিল। সঙ্গীতশিল্পীর পাশাপাশি তার নিজস্ব চলচ্চিত্র প্রযোজনাও করেছিলেন। যার ব্যানারে “লেকিন” ছবিটি ছিল। তিনি এই চলচ্চিত্রের জন্য সেরা গায়কের জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছিলেন লতাজি।