মা বাবার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে চাকরি ছেড়ে চাষ শুরু করেছিলেন যুবক, আজ বাৎসরিক টার্নওভার ১.৫ কোটি টাকা

প্রায়শই লোকেরা তাদের বোকা বলে মনে করে, যারা তাদের নিরাপদ চাকরি ছেড়ে কৃষিকাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ঠিক সেরকমই সমীরের সিদ্ধান্তও তার পরিবারের সদস্যদের ক্ষুব্ধ করে যখন সমীর তাদের বলেন যে তিনি তার চাকরি ছেড়ে গ্রামে আসবেন এবং আঞ্জিরের চাষ করবেম। আসলে সমীর ডম্বে মহারাষ্ট্রের দাউদে বসবাস করেন। ২০১৩ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং করার পর একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কাজ পান তিনি। তার বেতনও ছিল অনেক বেশি। এত ভালো চাকরি করেও কাজটি করতে ভালো লাগেনি তার।

যতবারই তার মনে এই ভাবনা জাগে যে তাকে আলাদা কিছু করতে হবে, আস্তে আস্তে কাজের প্রতি বিমুখ হয়ে পরেন তিনি। অবশেষে, ২০১৪ সালে, সমীর ডোম্বে তার উল্লেখযোগ্য চাকরি ছেড়ে তার গ্রামে আঞ্জিরের চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন। তার বাবা-মা যখন তার সিদ্ধান্তের কথা জানতে পারলেন, তখন তারা সমীরের উপর খুব রেগে যান যে কেন তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিলেন? পরিবারের অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও, সমীর তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেননি এবং বলেছিলেন যে তাকে এই কৃষিকাজ করতেই হবে।

সমীর জানান, তার গ্রাম যে এলাকায়, সেখানে প্রচুর আঞ্জিরের চাষ হয়। কিন্তু চাষিরা চাষাবাদ ও ব্যবসার আধুনিক পদ্ধতি না জানার কারণে লাভ করে খুবই কম। তারপর সমীর এই চাষকে ব্যবসা হিসেবে করা শুরু করে এবং সমীর চাষের পাশাপাশি প্রসেসিং ও প্যাকেজিং এর কাজও শুরু করেন। সমীর প্রথমে ১ একর জমিতে আঞ্জির চাষ শুরু করেন। চাষের পর উৎপাদিত ফসল খাদ্য বাজারে সরবরাহ করা হয়। তাদের পণ্যের মান ভালো হওয়ায় নিয়মিত সরবরাহ শুরু হয়।

বর্তমান সময়ে সমীরের এই পণ্যের সরবরাহ এতটাই বেড়ে গেছে যে এখন সুপার মার্কেটেও পাওয়া যাচ্ছে। এর পাশাপাশি সমীরের পণ্য অনলাইনেও পাওয়া যাচ্ছে। এখন সমীর অন্যান্য কৃষকদের কাছ থেকেও পণ্য ক্রয় করে এবং বাজারে সরবরাহ করে কৃষকদের ভালো অর্থ উপার্জনের সুযোগ করে দেয়।

সমীর আরও জানান, আগে যে ফলগুলো ফসল তোলার দুই-তিন দিন পর বাজারে পৌঁছাতো, এখন সেগুলো ছোট ছোট প্যাকেটে করে এক দিনের মধ্যেই পৌঁছে যায়। আগে মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে যে টাকা পাওয়া যেত তাও এখন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এখন সমীর বাজারে ডেলিভারির পর যে ফলগুলো অবশিষ্ট থাকে সেগুলি দিয়ে জেলি ও জ্যাম তৈরি করে রাখেন এবং অনলাইন ও অফলাইনেও বিক্রি করেন।

নিজের আয়ের কথা উল্লেখ করে সমীর বলেন, শুধু ফল থেকেই একর প্রতি দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় করা যায়। বর্তমানে সমীরের কোম্পানির টার্নওভার দেড় কোটিরও বেশি। এইভাবে, সমীর তার নেওয়া সিদ্ধান্তের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন যাতে পরে তিনি তার চাকরি ছেড়ে যাওয়ার জন্য অনুশোচনা করতে না হয়। বর্তমান সময়ে সমীর তার নিজের উপার্জনের সাথে অন্যান্য কৃষকদের তথ্য দেয় যাতে অন্য কৃষকরাও প্রচুর উপার্জন করতে পারে।