ইলেকট্রিসিটি ও পানীয় জলের জন্য খরচ হয় না এক টাকাও, গুজরাটের এই দম্পতির আইডিয়া দেখলে অবাক হবেন আপনিও

জল ও বিদ্যুতের সাথে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম যখন আকাশছোঁয়া সেখানেই গুজরাটের এক দম্পতির পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতি নজির গড়লেন। যার মাধ্যমে শুধু জে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়া দাম থেকেই মুক্তি পাওয়া যায় তাই নয় ; সাথে নির্ভেজাল ও সুস্থ জীবনযাপনও সম্ভব। এই পরিবারটি গুজরাটের সোমনাথ জেলার উনা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি এবং তার স্ত্রী তিন বছর আগে তাদের নিজের একটা ছোট্ট বাড়ি বানানোর সিদ্ধান্ত নেন।

যেখানে প্রকৃতির সাথে সম্পর্কযুক্ত সমস্ত সুযোগ সুবিধা থাকবে। প্রকৃতির ক্ষতি নয় বরং প্রকৃতির হাত ধরে গড়ে উঠবে তাদের সপ্নের এই বাড়ি। তাই তারা এক পরিবেশবান্ধব বাড়ি তৈরি করেন যেখানে সোলার প্যানেল থেকে শুরু করে সোলার হিটার সমস্ত সুবিধা রয়েছে। অনেক পরিশ্রমে তৈরি তাদের এই বাড়িতে তারা তাদের ছেলে ও মা বাবাকে নিয়ে থাকেন।

বৃষ্টির জল সংরক্ষণের জন্য এই দম্পতি তাদের বাড়ির নিচে সতেরো হাজার লিটারের একটা বিরাট ট্যাংক তৈরি করেন এবং বাড়ির সমস্ত নলগুলিই এই ট্যাংকের সাথে সংযুক্ত। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় পাওয়া বৃষ্টির জলকে তারা পানীয় জল হিসেবে ব্যাবহার করেন। দ্বিতীয় নলটি থেকে সৌর হিটারের সাথে সরাসরি যুক্ত করা আছে যা থেকে গরম জল আসে।

তৃতীয় নলটি হচ্ছে স্বাভাবিক জলের যেটাতে দৈনন্দিন ব্যাবহৃত জল আসে যেমন স্নান করা বাসন মাজার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এই দম্পতি তাদের শিক্ষার প্রয়োগ করে তাদের বাড়িতে গ্রিড ইন্ট্রিগেটেড সোলার রুফটপ লাগিয়েছেন যা তাদের বাড়ীর সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ খরচ বহন করে। এই সৌর প্যানেল থেকে দৈনিক ষোল থেকে সতেরো ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ; যার মধ্যে তারা 3 বা 4 ইউনিট বিদ্যুৎ তাদের প্রয়োজন হয়।

অবশিষ্ট বিদ্যুৎ প্রায় বারো ইউনিট তারা গুজরাটের দ্বি নির্দেশিক মিটারের সাহায্যে পশ্চিম গুজরাট ভিজ কম্পানিতে জমা করে দেন। এই সংস্থা তাদেরকে ইউনিট প্রতি 2.25 টাকা দেন। তাদের জন্য সাধারণ মানুষও অনেক উপকৃত হয়। বাড়িতে অবস্থিত সমস্ত বৈদ্যুতিক চালিত যন্ত্রপাতি সৌর শক্তির মাধ্যমে চালিত হয় যার ফলে তাদের বিদ্যুৎ শক্তি ব্যাবহারের পরিমাণ হচ্ছে 0।

এই রুফটপ ব্যবহার করার জন্য তারা 40 শতাংশ ভর্তুকিও পেয়ে থাকেন। সূর্য গুজরাট প্রকল্পের আওতায় সৌর প্যানেল স্থাপনের খরচার 40% সরকার বহন করে এবং বাকি 60 শতাংশ শুধু একবার বহন করা হয়। একবার কিছু অর্থ ব্যয় করে সৌর প্যানেল লাগানোর পরে কুড়ি বছর তা ব্যবহার করা সম্ভব এবং এটি রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহার করা খুবই সহজ। বিজ্ঞান সম্পর্কে আগ্রহী এই দম্পতির সৌর প্যানেলের রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান আছে।

এই দম্পতি দুজনে শিক্ষক তারা প্রকৃতির সাথে নিজেদের সম্পর্ক বজায় রাখতে এবং চারিদিক সবুজে সৃষ্টি করতে উদ্যমী। এই পরিবারটি যে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ ও জল উপভোগ করছে তাই নয় ; তার সাথে নিত্য প্রয়োজনীয় শাকসবজি সমস্তকিছুই তারা উপভোগ করছেন। এ বাড়িতে তারা অনেক গাছ লাগিয়েছেন। শুধু তাই নয় তাদের এই তাদের এই গাছপালার প্রতি না বাহারি পাখি আকৃষ্ট তাদের বাড়িতে আসে।

বাজারের ভেজাল শাকসবজি থেকে নিজের পরিবারকে বাঁচাতে ইন্দুবা সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন শাকসবজি ব্যবহার করেন। তাই তিনি তার উঠোনে ও বাড়ির ছাদে নানা রকমের শাক সবজি ও পেঁপে সহ অন্যান্য ফলের গাছ লাগিয়েছেন। বাড়িতে বেগুন,লঙ্কা,উচ্ছে ও পুদিনা সহ বিভিন্ন সবজি চাষ হয়। রাসায়নিক সারের পরিবর্তে তিনি জৈব সার ব্যবহার করে। জয়দীপ ও ইন্দুবার প্রকৃতিবান্ধব বাড়ি তাদের আশে পাশের লোকের জন্য একটা নতুন প্রেরণা সৃষ্টি করেছে। ফলে তারাও এই সবুজের আওতায় চলে এসেছেন তারাও নিজের বাড়িতে শাকসবজি উৎপাদন করছেন। তারা এক বিশেষ দৃষ্টান্ত রেখেছেন।