অনাথদের মা: রেলস্টেশনে ভজন গেয়ে উপার্জন করা টাকায় দত্তক নিতেন হাজার হাজার বাচ্চা

হাজার সন্তানের মা নামে পরিচিত মহারাষ্ট্রের অন্যতম সমাজ সেবী সিন্ধুতাই সাপকাল সম্পর্কে সবাই জানেন। তিনি 14 ই নভেম্বর 1947 সালে মহারাষ্ট্রের ওয়ার্ধা জেলার নাভারগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র নয় বছর বয়সে তার সাথে তার থেকে বয়সে 26 বছর বড়ো শ্রীহরি সাপকালের বিয়ে হয়। শ্বশুরবাড়িতে তার অনেক বড় পরিবার ছিল।

 

কিন্তু সেখানে পড়াশোনার কোনো সুযোগ-সুবিধা ছিল না। বিয়ের কয়েক বছর পর তার স্বামী তাকে চরিত্রগত সন্দেহবসত বাড়ি থেকে বের করে দেন। পরিবারের অন্য সদস্যরাও সেই সময় তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। তখন তিনি কোনো উপায় না পেয়ে পারভানি নান্দেদ মনমাদ রেল স্টেশনে ভিক্ষা করে বেড়াতেন।

দুঃখ- কষ্ট আর সহ্য করতে না পেরে তিনি একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তারপর তিনি ঠিক করলেন যে তিনি অনাথদের সেবা করবেন। এই মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি প্রথম মমতা বাল সদন প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর তিনি পুনের কাছে পুরন্দর তালুকের কুম্ভরওয়ালান গ্রামে একটা ইন্সটিটিউশন প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে নিঃস্ব শিশুদের অন্ন-বস্ত্র ও শিক্ষাদান করা হত।

তিনি পরবর্তীকালে তার এই উদ্দেশ্যকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পুনেতে বাল নিকেতন, চিখলদারায় সাবিত্রীবাই ফুলে গার্লস হোস্টেল, গোপিকা গৈরক্ষণ কেন্দ্র, ওয়ার্ধায় অভিমান বালভবন, সাসওয়াদে মমতা পাল সদন, পুনেতে সপ্তসিন্ধু মহিলা আধার বাল সংগোপন এবং অনেকগুলি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছেন।

এক প্রতিবেদনে তিনি বলেছিলেন যে তার এই সব কাজকর্মের অনুপ্রেরণা হচ্ছে খাদ্য। একসময় তিনি একটা রুটির জন্য অনেক কষ্ট করে ছিলেন। তিনি তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন যারা তার সেই কঠিন সময়ে তার পাশে থেকেছেন। কিন্তু খুব দুঃখজনক ঘটনা যে এই হাজার সন্তানের মা সিন্ধুতাই সাপকাল আর আমাদের মাঝে নেয়।

তিনি 75 বছর বয়সে পুনেতে ইহলোক ত্যাগ করেছেন। সিন্ধুতাই গত এক মাস আগে হার্নিয়া অপারেশন করেছেন। এরপর বেশ কিছুদিন ধরে তিনি পুনের গ্যালাক্সি হসপিটালে ভর্তি ছিলেন। তখন থেকে তার চিকিৎসা চলছিল। তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। অপারেশনের পরও তিনি সাড়া দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর তিনি সাড়া দেওয়া বন্ধ করে দেন এবং রাত 8:10 নাগাদ তার মৃত্যু হয়। তার এই মহৎ কাজের জন্য 2021 সালে তিনি পদ্মশ্রী সম্মানেও ভূষিত হয়েছেন।