অভিনব মেশিন তৈরি করল এই ইঞ্জিনিয়ার, গোবরকে কাজে লাগিয়ে করা যাবে দ্বিগুণ উপার্জন

গ্রাম এবং শহরের মধ্যে তুলনা অনেক সময়েই করা হয়ে থাকে। তবে একটা বিশেষ ব্যাপার আছে যা গ্রামকে সবসময় শহর থেকে আলাদা করে, আর সেটা হল গ্রামের মানুষের নিত্যদিনের রুটিন। আজও গ্রাম ও শহরের কিছু অংশে উনুনে খাবার রান্না করা হয়, যার জন্য ঘুঁটে বা কাঠ ব্যবহার করা হয়। সেই সাথে জমিতে ফসল ফলাতে সার হিসেবেও গোবর ব্যবহার করা হয়।

গোবর থেকে উপার্জন বাড়ানোর দুটি মেশিন

এই সব কথা মাথায় রেখে গোবর শুকিয়ে তা থেকে শক্ত কাঠামো তৈরির এক অনন্য যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন এক ইঞ্জিনিয়ার। যিনি গোবর থেকে শক্ত কাঠামো তৈরির এই অনন্য যন্ত্রটি আবিষ্কার করেছিলেন, তার নাম কার্তিক পাল। যিনি পাঞ্জাবের পাতিয়ালার বাসিন্দা। কার্তিক তার বৈদ্যুতিক প্রকৌশল অধ্যয়ন শেষ করে ২০১৪ সালে কানাডার একটি কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছিলেন।

 

তবে কার্তিকের বাবা তাকে দেশের বাইরে যেতে হবে জেনে চাকরি করতে অস্বীকার করেছিলেন। এর পরে, কার্তিক তার বাবার মোটর এবং জেনারেটরের সাথে সম্পর্কিত ব্যবসায় কাজ শুরু করেন। যেখানে তিনি বৈদ্যুতিক সামগ্রী তৈরি এবং সরবরাহের কাজ করতেন। ৩-৪ মাস পরে, কার্তিক সেই কাজটি ছেড়ে দেন এবং কয়েক মাস ধরে বাড়িতে বেকার অবস্থায় থাকেন।

তবে এই সময়ে বাবাকে সাহায্য করার জন্য মাঝে মাঝে মেশিন সরবরাহের কাজও করতেন কার্তিক। এমন অবস্থায় একদিন তিনি একটি গোয়ালঘরে পশুখাদ্য কাটার যন্ত্র দিতে গেলে সেখানে গোবরের স্তূপ দেখতে পান। গোবরের স্তূপ দেখে কার্তিকের মনে বিশেষ ধরনের মেশিন বানানোর চিন্তা আসে। কার্তিক ঠিক করেছিলেন যে তিনি এমন একটি যন্ত্র বানাবেন। যেখান থেকে তিনি গোবরের ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি উপার্জনও করতে পারবেন।

 

গোবর-লগ তৈরির যন্ত্র

কার্তিক যন্ত্রটি তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, কিন্তু মেশিনের নকশা কীভাবে রাখবেন তা তিনি বুঝতে পারছিলেন না। এমতাবস্থায় তিনি চাল,গম ইত্যাদি পেষাই করার মেশিন দেখেন, যাতে একদিকে গম বা চাল দিলে অন্যদিক থেকে তা গুঁড়ো হয়ে বেরোয়। সেই যন্ত্র থেকে ধারণা নিয়ে কার্তিক গোবর থেকে শক্ত কাঠামো তৈরির জন্য একটি অনন্য যন্ত্র (মেক উড ফ্রম কাউ ডাং) আবিষ্কার করেন।

যার ভিতরে গোবর যোগ করে শক্ত কাঠামো তৈরি করা যায়। এই মেশিনের নির্মাণ খুব সহজ ছিল, যদিও এটি তৈরি করতে খুব বেশি টাকা খরচ হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে, ২০১৮ সালে, কার্তিক প্রথম গোবর-কাঠ তৈরির মেশিন ডিজাইন করেছিলেন। যা ভিজে গোবরকে কাঠের মতো শক্ত কাঠামোতে রূপান্তরিত করে।

এই যন্ত্রটি আবিষ্কারের পর, পুরো পাতিলায় এর চাহিদা বাড়তে শুরু করে, কারণ কৃষক এবং পশুপালনকারীরা এটি থেকে লাভবান হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে বাড়িতে বসেই কার্তিক একটি দুর্দান্ত যন্ত্র আবিষ্কার করেন। যার কারণে তিনি পাঞ্জাব, জয়পুর এবং হরিয়ানা থেকে অর্ডার পেতে শুরু করেন।

২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে কার্তিক ৯ হাজারেরও বেশি গোবর মেশিন তৈরি ও বিক্রি করেছেন। কার্তিক গোবর মেশিনের প্রচারের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্য নিয়েছিলেন। তিনি মেশিনের ছবি এবং ভিডিও ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম পেজে শেয়ার করেছেন। সেই ছবিগুলি দেখার পরে, লোকেরা কার্তিকের সাথে যোগাযোগ করতে শুরু করে, যার কারণে ঘরে বসেই কার্তিকের ব্যবসা শুরু হয়। এই গোবর মেশিনে ২ থেকে ৩ দিন পুরানো গোবর রাখা হয়। এরপর মেশিন থেকে বের হওয়া গোবরের কাঠিগুলো রোদে শুকিয়ে তা মজবুত করা হয় এবং দীর্ঘদিন ব্যবহারও করা যায়।

গোবর থেকে তৈরি এসব কাঠ খুব সহজে ব্যবহার করা যায়, চুলা ছাড়াও পূজা ও শ্মশানেও ব্যবহার করা যায়। এই মেশিন ব্যবহারে শুধু গোবর কাঠই পাওয়া যাবে না, গোবর ব্যবস্থাপনাও সহজ হবে। এই গোবর যন্ত্রটির দাম ৬৫,০০০ টাকা, যা চালাতে দুইজন লোকের প্রয়োজন। গোবর থেকে তৈরি কাঠির দাম বাজারে প্রতি কেজি ৪ টাকা।

এমন পরিস্থিতিতে গরুর খামারিরা বেশি পরিমাণে গোবর কাঠ তৈরি করে লাভবান হতে পারেন। গোবর তৈরির মেশিনের পরে, কার্তিক কৃষকদের নির্দেশে ২০২১ সালে গোবর ড্রায়ার মেশিনও উদ্ভাবন করেছিলেন। যেটিতে ভেজা গোবর যোগ করার সাথে সাথে পাউডারের মতো শুকিয়ে যায়। এরপর শুকনো গোবর সার হিসেবে ক্ষেতে ফেলা হয় এবং মেশিন থেকে নির্গত জল জমিতে সেচের জন্য রাখা হয়।

এছাড়া গোবরের গুঁড়া দিয়ে ধূপকাঠির মতো জিনিসও তৈরি করা হয়। যা আশেপাশের পোকামাকড় দূরে রাখতেও সহায়ক। এই দুটি মেশিন ব্যবহার করে কৃষক এবং পশুপালকদের ভাল লাভ হয়, অন্যদিকে কার্তিক ঘরে বসে অর্থ উপার্জন করে।

গোবর ড্রায়ার মেশিন

এই মেশিনটির দাম ১.৭ লক্ষ টাকা, যা ১ ঘন্টায় ৫০০ কেজি গোবর শুকিয়ে গুঁড়ো করে। এই মেশিনগুলি তৈরি করার পরে, কার্তিক একটি নতুন ধরণের মেশিন তৈরির কাজ করছেন, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে গোবর তোলার কাজ করবে।