ভারতের এমন এক গ্রাম যেখানে বাড়িতে কন্যা সন্তান জন্ম নিলে লাগানো হয় ১০ টি গাছ, বিশ্বজুড়ে অনুপ্রাণিত করছে এই প্রেরণা

ভারতের এমন এক গ্রাম যেখানে বাড়িতে কন্যা সন্তান জন্ম নিলে লাগানো হয় ১০ টি গাছ

আধুনিকতার যুগ যতই তুঙ্গে পৌঁছে যাচ্ছে, ততই আমরা দেখছি পরিবেশের ক্ষতি করছে আরও বেশি মানুষ। আমরা জানি পরিবেশের ক্ষতি করে আমরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমরা যদি আমাদের ভবিষ্যৎ এবং আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে চাই, তাহলে পরিবেশকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখা খুবই জরুরি।

বিশ্বপর্যায়েও জোর দেওয়া হচ্ছে জনগণ যেন তাদের আশেপাশে বৃক্ষরোপণ (Plantation) করে। এ জন্য অনেক পরিকল্পনাও চালানো হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করার জন্য রোপণ একটি খুব সহজ এবং কার্যকর বিকল্প। বিহারের গ্রামে একটি অনন্য ঐতিহ্য রয়েছে, বৃক্ষরোপণের (Plantation) মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে সামাজিক বার্তা। এই এলাকায় নজর কেড়ে নিয়ে বিহারের (Bihar) এক গ্রামের মানুষ এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন যে, তা নিয়ে সর্বত্রই আলোচনা চলছে।

আসলে এই গ্রামের মানুষ বৃক্ষরোপণকে (Plantation) সামাজিক বার্তার সাথে যুক্ত করে সমাজকে এমন একটি বার্তা দিয়েছেন যে সবাই এতে খুশি হচ্ছেন। একটি কন্যা সন্তানের জন্মের জন্য এই গ্রামে অগত্যা দশটি চারা রোপণ করা হয়। নারী শোষণ ও ভ্রূণহত্যার বিরুদ্ধে একটি বার্তা পৌঁছানোর জন্য এই গ্রামটি এটি করেছে। পাশাপাশি সমাজে উন্নতি করতে হবে।

বিহারের (Bihar) ধরহারায় কন্যাসন্তান জন্মে ১০টি গাছ লাগানো হয়। আসলে বিহারের ভাগলপুর জেলার জলপ্রপাতের কথা বলা হচ্ছে। এই গ্রামের নাম ধরহারা গ্রাম। একটি কন্যা সন্তানের জন্মের পর দশটি চারা রোপণের ঐতিহ্য এই গ্রামে চলে। এই ঐতিহ্যের কারণে এই গ্রামটিকে বলা হয় সবুজতম গ্রাম। এই স্থানে কন্যাদেরকে লক্ষ্মী মাতার রূপ মনে করা হয়।

কন্যা সন্তানের জন্ম হলে তা এখানে উৎসব হিসেবে পালিত হয়। কন্যার জন্মের সময় যে গাছগুলি লাগানো হয় তা কন্যাদের উত্তরাধিকার হিসাবে দেওয়া হয়। গাছ থেকে যে আয় হয় তা কন্যার প্রয়োজনেই ব্যয় হয়। এই গাছগুলো তাদের আয়ের মাধ্যমও হয়ে ওঠে। কারণ মেয়ে বড় হওয়ার সাথে সাথে এই চারাগুলোও গাছে রূপ নেয়।

তারপর তাদের থেকে প্রাপ্ত ফল ও প্রয়োজনীয় জিনিস কন্যাদের শিক্ষা ও বিবাহে কাজে লাগে। এই গ্রামে প্রমোদ নামে এক বাসিন্দা থাকেন। তার একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। মেয়ে যখন জন্মগ্রহণ করে তখন তিনি ১০টি আম গাছ লাগিয়েছিলেন। আজ এসব চারা গাছে পরিণত হয়েছে এবং তা থেকে যা পাওয়া যাচ্ছে তা বিক্রি করেই প্রমোদের মেয়ের লেখাপড়া চলে।

মেয়ে শিশুর জন্মের সময় গাছটি রোপণ করলে ৫ বছর পর তা গাছে পরিণত হয়। যখন তারা ফল দেয়, তখন একটি বড় অংশ বাজারে বিক্রি করা হয়, যা আয় হয় তা কন্যার লালন-পালনের জন্য ব্যবহৃত হয়। একই সামান্য অংশ বাচ্চাদের খাওয়ার জন্য রেখে দেওয়া হয়। যখন গাছে আর ফল ধরার বয়স পেরিয়ে যায়, তখন আসবাবপত্র তৈরি করে মেয়ের বিয়েতে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়।

গ্রামের ঐতিহ্যবাহী চাষাবাদ ছেড়ে ফলের আবাদে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা গ্রামের সকল মানুষ এই প্রচারে অনুপ্রাণিত হচ্ছে এবং ঐতিহ্যবাহী চাষাবাদ ছাড়াও ফল চাষ থেকে আয় করছে। অধিকাংশ কৃষকই ঐতিহ্যবাহী চাষের পরিবর্তে ফলের আবাদ শুরু করেছেন। এতে প্রচলিত কৃষিকাজের চেয়ে কম পরিশ্রম করতে হচ্ছে মানুষকে।

এ গ্রামে আম ছাড়াও পেঁপে, পেয়ারা, লিচুর গাছও লাগানো হয়। এই গ্রামের এই প্রচারে আকৃষ্ট হয়ে এখানে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও। এই গ্রামের এই কাজটি অনুপ্রেরণাদায়ক। এর ফলে দেশের প্রতিটি নাগরিক অনুপ্রাণিত হচ্ছেন।