বিদেশী মাটিতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা প্রথম মহিলা, রইল ভিকাজী কামার ইতিহাস

ভিকাজি কামা: প্রথম মহিলা হিসাবে যিনি ভারত স্বাধীন হওয়ার ৪০ বছর আগেই জার্মানিতে পতাকা তুলেছিলেন

ভারত স্বাধীনের মহান যোদ্ধাদের মধ্যে ‘ভিকাজি প্যাটেল কামা’ (Bhikaji patel cama) হলেন, অন্যতম একজন। যার নাম ভারতের স্বাধীন সংগ্রামের ইতিহাসে স্বর্ণক্ষরে খোদাই করা আছে। যিনি ভারত স্বাধীন হওয়ার প্রায় ৪০ বছর আগেই জার্মানিতে প্রথম ‘ভারতীয় পতাকা’ (Indian flag) উত্তোলন করেছিলেন। যখন ১৯০৭ সালের ২রা আগস্ট জার্মানির স্টুটগার্টে একটি সামাজিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই সময় ইউরোপ, আমেরিকা ও উত্তর আফ্রিকার মত দেশগুলো সামিল হয়েছিল। সেই সম্মেলনে ভিকাজি কামা (Bhikaji cama) জার্মানিতে ভারতের জাতীয় পতাকার প্রথম সংস্করণটি উত্তোলন করেছিলেন।

Indian flag

কেন এই মহিলা পতাকা উত্তোলন করেছিলেন?
সেই সময় ভারত ছিল পুরোপুরি ইংরেজদের অধীনে। তাই ভিকাজী কামা দেশ থেকে ইংরেজদের অবসান চেয়েছিলেন। তিনি পতাকা তুলে বলেছিলেন, “এটা স্বাধীন ভারতের পতাকা (Indian flag)। আমি আপনাদের সকলের কাছে দাঁড়িয়ে পতাকাকে সালাম করার আবেদন জানাই”। তিনি ইংরেজ শাসন থেকে ভারতের স্বাধীনতা দাবি করেন।

পুরনো তেরঙ্গা! এখনের পতাকা থেকে ওই পতাকার পার্থক্য কি?
ভিকাজি প্যাটেল কামা এবং শ্যামজি কৃষ্ণ ভার্মা এদের তৈরি ভারতীয় পতাকারও তিনটে রঙ ছিল। যেটা সবুজ, জাফরান এবং লাল রঙ এই তিনটে ট্রাইপ। পতাকার উপরেই ছিল সবুজ রং, যার মধ্যে ৮ টি পদ্মফুল লক্ষ্য করা যায়। এই ৮ টি পদ্ম ফুল ভারতের ৮ টি প্রদেশকে চিহ্নিত করে। মাঝে ছিল জাফরান, যার উপরে বন্দেমাতরম লেখা থাকতো। সবচেয়ে নিজে ছিল নীল রং, যার মধ্যে সূর্য ও চাঁদের চিহ্ন ছিল।  Indian flag

ভিকাজী কামা তরুণ বয়সেও আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন:-
ভিকাজি ১৮৬১ সালে প্যাটেল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি সমৃদ্ধশালি পরিবারেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার বাবা ছিলেন একজন বিখ্যাত ব্যবসায়ী। সেই সময় ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের শিকর গড়েছিল। ভিকাজি প্যাটেল অল্প বয়স থেকেই আন্দোলনে যোগ দেন।

ভিকাজি প্যাটেল কামার দাম্পত্য জীবনেও আন্দোলনের অংশ:-
ভিকাজি আলেকজন্দ্রা গার্লস ইনস্টিটিউশন থেকে শিক্ষ লাভ করেন। তিনি বিভিন্ন ভাষা শিখতে আগ্রহী ছিলেন। সেই সময় তিনি বিখ্যাত আইনজীবী রুস্তমোজি কামারকে বিবাহ করেন। এদিকে, রুস্তমোজি ব্রিটিশদের পছন্দ করতেন, অন্যদিকে ভিকাজি মনেপ্রাণে একজন জাতীয়তাবাদী ছিলেন এবং তিনি বিশ্বাস করতেন ইংরেজরা ভারতকে শোষণ করছে। সেই কারণে রাজনৈতিক ভিন্নতার কারণে তাদের দাম্পত্য জীবনে অসুবিধা আসতে থাকে।

  1. Indian flag

ভারতে প্লেগ মহামারির সময়:-
১৮৯৬ সাল করে ভারতে প্লেগ মহামারির লক্ষণ দেখা দেয়। সেই সময় ভিকাজি মানুষকে সাহায্য করতে গিয়ে তিনি নিজেও এই মহামারীতে আক্রান্ত হন। এবং তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্রিটেনে পাঠানো হয়। কিন্তু তার আগের ইতিহাস জানলে তিনি অনেক সভাতেই মুক্তিযোদ্ধার বক্তৃতা রেখেছিলেন। ইউরোপের ভিকাজি প্যাটেলের নির্বাচন ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। তার এই আন্দোলনের জন্য ব্রিটিশ সরকার কোন মূর্তি তাকে দেশে ফিরে আসতে দেয়নি। যখন ব্রিটিশ সরকার বুঝতে পারে তিনি আর রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারবেন না অর্থাৎ ৩৩ বছর পর তাকে দেশে ফিরে আসার অনুমতি দেয়। দেশে ফিরে এসে তিনি মাত্র ৯ মাস বেঁচেছিলেন। ১৯৩৬ সালের ১৩ই আগস্ট ৭৫ বছর বয়সে তিনি মারা যান।

ব্রিটিশ সরকারের নিদর্শনায় তিনি কি করেছিলেন?
ভিকাজি প্যাটেলের ভারতের মুক্তিযুদ্ধের আন্দোলন দেখে, লন্ডনে ব্রিটিশ সরকার সতর্ক করে দিয়েছিলেন আন্দোলন বন্ধ না করা পর্যন্ত তাকে ভারতে ফিরে আসতে না দেওয়া। এমন অবস্থায় ভিকাজি ইউরোপে নির্বাসনে থাকা বেছে নেয়।