গোবর থেকে তৈরী হচ্ছে দুর্দান্ত রং, ব্যাবসায় সফলতা হয়েছে লাখ লাখ টাকা কামাচ্ছেন দূর্গা

একটা সময় ছিল যখন গোবরের সমস্যায় মানুষকে পশুপালনের যোগ দিতে হতো। সেই সাথে কেউ কেউ গাভী পালন করত। অনেকে দুধ বিক্রি করে সংসার চালাত। অনেকে বললে ভুল হবে গ্রাম অঞ্চলে বেশিরভাগ লোকেরই গরু পালন করতো এবং দুধ বিক্রি করতো। গরুর গোবর অনেক কাজে লাগে। গোবর থেকে কাগজ তৈরি করা হয়ে থাকে। তবে আজ আপনাদের এমনই একজন মহিলার কথা বলব চিনি গোবর থেকে রং তৈরি করছেন। তা বিক্রি করে তিনি আজ সফল ব্যবসায়ী।

তিনি হলেন ওড়িষ্যার গৃহবধূ দূর্গা প্রিয়দর্শীনি, তাঁর বরাবরই ইচ্ছা ছিল নিজে কিছু করে দেখাবার চেষ্টায় ছিলেন। সেজন্য তিনি দীর্ঘদিন ধরে সঠিক সুযোগ এবং ব্যাবসার আইডিয়া অনুসন্ধান করছিলেন। এমতবস্থায় তার কাছে একটি অভিনব সুযোগ আসে এবং তিনি তা কাজে লাগিয়ে নিজের লক্ষ্য পূরণ করেছেন। সম্প্রতি গরুর গোবর দিয়ে পরিবেশ বান্ধব রং প্রস্তুত করা হচ্ছে এবং তা দেশ জুড়ে বিক্রিও হচ্ছে। ভারতের ক্ষুদ্র,ও মাঝারি উদ্যোগ মন্ত্রক এই প্রকল্পটি শুরু করেছেন।

যার মূল উদ্দেশ্য হল গ্রামীণ এলাকার লোকেদের কর্মসংস্থান তৈরী করা এবং গ্রামে উপলব্ধ সম্পদকে কাজে লাগানো। গোবর থেকে তৈরি প্রাকৃতিক রং ‘খাদি ইন্ডিয়া’ সংস্থার মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে বিহার সহ অনেক রাজ্যে গোবর পেইন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে জৈব পেইন্ট তৈরীর এই উদ্যোগটিতে সামিল হয়েছেন দূর্গা এবং ইতিমধ্যেই এই উদ্যোগে তিনি অনেকটাই এগিয়ে গেছেন।

ওড়িষ্যার বারগড় জেলার বাসিন্দা , দূর্গা প্রিয়দর্শীনি প্রথমথেকেই দুগ্ধজাত ব্যবসার দিকে আগ্রহী ছিলেন। সেজন্য তিনি হরিয়ানার ঝাজ্জার গ্রামে দুগ্ধ ব্যবসা শুরু করেন। একিসাথে তিনি পশু পালনও করছিলেন। পরে তিনি ইন্টারনেটে একটি ভিডিও খুঁজে পান যেখানে তিনি একজনকে গোবর দিয়ে ছবি আঁকতে দেখেন। এরপরই তার এই ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহ জাগে এবং তিনি এই বিষয়ের উপর কাজ শুরু করেন।

দূর্গা জানিয়েছেন, তিনি তার কাজের মাধ্যমে সেইসব গরুদের সেবা করতে পারছেন যেসব গরুকে দুধ না দেওয়ার কারনে রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া হত। সেইসাথে কৃষক এবং গোয়ালরাও তার কাজের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছেন।

তিনি ২০২১ সালে জয়পুরে একটি পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে যোগদান করেছিলেন। এরপর খাদি ইন্ডিয়ার অধীনে ওড়িষ্যাতে ‘প্ল্যান্ট গ্রীন ফিল পেইন্টস’ নামক কোম্পানি শুরু করেন। এরপর ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে,তিনি তার নিজস্ব কারখানা তৈরি করার জন্য বারগড়ের কাছে একটি গ্রামে ২৫০০ বর্গফুট জমি কেনেন এবং ব্যবসাটি বড় করে শুরু করেন।

মেশিন, জমি ও বিপণনসহ তিনি এপর্যন্ত প্রায় এক কোটি টাকা কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করেছেন। দূর্গা জানিয়েছেন এই গোবর থেকে তৈরী জৈব রঙটি বাড়ির ভিতরে এবং বাইরে দুদিকেই করা যাবে। দেওয়ালে লাগানোর পর এই রঙ অবিকল রাসায়নিক রঙের মতোই দেখতে লাগবে। সেইসঙ্গে তিনি বলেছেন যে, এটি বাড়ির ভিতরে তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখারও কাজ করে। তিনি এইমুহূর্তে প্রায় ৮০০ টি ভিন্ন রঙের পেইন্ট তৈরী করেছেন।

এই জৈব রং প্রস্তুত করার জন্য দুর্গা গ্রামের কৃষকদের কাছ থেকে পাঁচ টাকা প্রতি কেজি হিসাবে গোবর কিনে আনেন। এরপর তার কারখানায় সেগুলি নিয়ে আসা হয় যেখানে রং তৈরীর করা হয়। প্রথমে সংগ্রহ করা গোবর থেকে তরল ও শুকনো উপাদান আলাদা করা হয়। এরপর গোবরে সমপরিমাণ জল মেশানো হয় এবং ট্রিপল ডিস্ক শোধনাগারে রেখে সেটা ঘন করা হয়। তারপর এতে ক্যালসিয়াম উপাদান যোগ করে এবং তা থেকে ইমালসন ও ডিস্টেম্পার তৈরি করা হয়। এরপর শুধুমাত্র প্রাকৃতিক রং বেস রঙের সঙ্গে মিশ্রিত করা হয়। সম্পূর্ণ জৈব এই পেইন্টের প্রায় ৩০ শতাংশ গোবর দিয়ে তৈরী করা হয়। গোবর থেকে তৈরী এই রঙের বিভিন্ন গুনাগুন রয়েছে যেমন, এগুলি পরিবেশ বান্ধব, অ্যান্টি ফাঙ্গাল, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল,গন্ধমুক্ত, অ-বিষাক্ত, ভারী ধাতুমুক্ত, প্রাকৃতিক তাপ নিরোধক হওয়ার মত নানান সুবিধা রয়েছে। এছাড়া এই রং বাজার চলতি রঙের থেকে অনেক সস্তা।

বর্তমানে জৈব রং নিয়ে মানুষের মধ্যে এখনও সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। ফলে বাজারে এর চাহিদার পরিধিও সীমাবদ্ধ। দুর্গা তার তার দিক থেকে সমস্তরকম প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন যাতে রং গুলি বিপনন করা যায়। তিনি উড়িষ্যা ও ছত্রিশগড়ে কিছু ডিলারের সাহায্যে এগুলো বিক্রি করার কাজ করছেন এবং এখনও পর্যন্ত এই দুই রাজ্যে তিনি প্রায় ৪০০০ লিটার প্রাকৃতিক রং বিক্রি করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন কলেজের অনুষ্ঠান এবং সেমিনারে অংশগ্রহণ করে তিনি এই রঙের সুবিধার গুলির ব্যাপারে জানাচ্ছেন যাতে মানুষ প্রাকৃতিক রং ব্যাবহার করতে উদ্যোগি হয়। দুর্গা বলেছেন , “আগে আমাদের কাছে কোনো বিকল্প ছিল না, তাই আমরা বাড়িতে রাসায়নিক রং লাগিয়ে দিতাম। কিন্তু আজ গরুর গোবর দিয়ে তৈরি রংগুলি বাজারে একটি দুর্দান্ত বিকল্প হিসাবে পাওয়া যায়, তাহলে এটি অবশ্যই ব্যবহার করা উচিত।”

প্রাকৃতিক রং কিনতে দূর্গার সাথে 7578014437 নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন।
এছাড়া [email protected]এ রঙের অর্ডার দিতে পারেন।