মোট এত কোটি টাকার মালিক রতন টাটা, রয়েছে লাক্সারি কার ও ফাইটার জেটের শখ

ভারতের অন্যতম বিখ্যাত শিল্পপতি হলেন রতন টাটা। তিনি টাটা এবং সনস -এর চেয়ারম্যান হওয়ার পাশাপাশি একজন জনহিতৈষী হিসাবেও পরিচিত। বিশ্বব্যাপী শতাধিক কোম্পানি আজ টাটা গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিশ্বের বহু নামী দামী ব্র্যান্ড টাটাগ্রুপ কিনেছে এবং ব্যবসাকে আরও প্রসারিত করেছে। ২০০০ সালে লন্ডন-ভিত্তিক টেটলি চা কোম্পানি টাটা গ্রুপ অধিগ্রহণ করেছিল। এরপর আস্তে আস্তে দেবু মোটরস, কোরাস গ্রুপ, জাগুয়ার এবং ল্যান্ড রোভারের মতো বিলাসবহুল গাড়ি ব্র্যান্ডগুলি টাটা গ্রুপ কিনে নিয়েছে। আর এই গ্রুপের সম্প্রসারণ এবং উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন শ্রী রতন টাটা। চলুন আজ তাঁর সম্পর্কে কিছু তথ্য আপনাদের জানিয়ে দিই –

১৯৩৭ সালের ২৮ শে ডিসেম্বর , রতন টাটা ভারতের সুরাট রাজ্যের টাটা সম্প্রদায়ের একটি বিখ্যাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তবে দুর্ভাগ্যবশত জন্মের পরপরই তাঁর বাবা-মা আলাদা হয়ে যান। এরপর তাকে তাঁর দাদী নওয়াজবাই টাটা দত্তক নেন। রতন টাটা বি.এস. ১৯৬২ সালে কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং সহ আর্কিটেকচারে ডিগ্রী এবং ১৯৭৫ সালে হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে অ্যাডভান্সড ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম করেছিলেন। একসময় শূন্য হাতে শুরু করেছিলেন নিজের পথচলা। কিন্তু পরিশ্রম আর ভাগ্যেকে সাথে করে রতন টাটা আজ সফলতার চূড়ায় পৌঁছেছেন।

কিছু রিপোর্ট অনুযায়ী, টাটা গ্রুপের প্রাক্তন চেয়ারম্যান রতন টাটার ব্যাক্তিগত সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৭৪১৬ কোটি টাকা। একইসাথে তিনি মুম্বাইতে একটি বিলাসবহুল বাংলোতে বসবাস করেন যার মূল্য আনুমানিক ১৫০ কোটি টাকা। এছাড়া রতন টাটা সারা ভারত জুড়ে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য রিয়েল এস্টেটের মালিক। সেইসঙ্গে তাঁর রয়েছে বিশ্বের সব থেকে বিলাসবহুল গাড়ির কিছু কালেকশন। যার মধ্যে রয়েছে মার্সিডিজ বেঞ্জ, ফেরারি, হোন্ডা সিভিক, রেঞ্জ রোভার, টাটা, মাসেরতি কোয়াট্রোপোর্ট, ক্যাডিলাক এক্সএলআর, ক্রাইসলার সেব্রিং এবং জাগুয়ারের মত নামী ব্র্যান্ডের গাড়ি।

বর্তমানে টাটা গোষ্ঠী ৬টি মহাদেশ জুড়ে ১০০টির বেশী কোম্পানি পরিচালনা করছে এবং তাঁদের মার্কেট ক্যাপিটাল ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও অনেক বেশী। তা সত্ত্বেও রতনটাটাকে বিশ্বের ধনীতম ব্যাক্তিদের তালিকায় খুঁজে পাওয়া যায় না এমনকি ভারতীয় ধনীদের তালিকাতেও তাঁর নাম রয়েছে অনেক পরে। আর এর সবথেকে বড় কারণ, রতন টাটার নিজস্ব আর্থিক বিবরণীতে টাটা সন্সের ৬৫% মালিকানা নেই। যদি তা থাকতো তাহলে তিনি এটি বিল গেটসের থেকেও বেশি ধনী ব্যক্তি হতেন। সেইসঙ্গে টাটা চ্যারিটেবল ট্রাস্ট হল ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ট্রাস্ট। টাটা এবং সনসের ৬৬% অংশীদারিত্ব পরিবারের সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত এই চ্যারিটি ট্রাস্টগুলির হাতে রয়েছে। যার মধ্যে বৃহত্তম অংশ রয়েছে স্যার দোরাবজি টাটা ট্রাস্ট এবং স্যার রতন টাটা ট্রাস্টের নামে।

রতন টাটা শুধু ব্যবসায়ী হিসাবেই নয় তাঁর ধনী হৃদয়ের জন্যও পরিচিত। ব্যাবসায়িক ক্ষেত্রে সফলতার শিখরে থাকলেও এই নম্র মানুষটি
দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে তাঁর উপার্জিত সম্পদের বিশাল অংশ দান করে দেন। এছাড়া ব্যাবসায়িক ক্ষেত্রে ভারতকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তিনি দিন রাত কাজ করে চলেছেন। তিনি ২০০০ সালে পদ্মবিভূষণ এবং ২০০৮ সালে পদ্মভূষণ পুরস্কার পেয়েছিলেন। যা ভারত সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান।