৬০ বছর ধরে মেশিনে বন্দি ব্যাক্তি লিখলেন বই, করেছেন law নিয়ে পড়াশোনা

এমন অনেকেই আছেন যারা একটুতেই ভীষণ ভেঙে পড়েন। তা সে কর্মক্ষেত্রে লোকসানের জন্য হোক বা ব্যাক্তিগত জীবন সম্পর্কিত কিছুর জন্য। তারা নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি হারিয়ে ফেলেন। অন্যদিকে হাতেগোনা এমনও কিছু লোক আছেন যারা খারাপ পরিস্থিতিতেও হাল ছেড়ে না দিয়ে তাদের স্বপ্নের জন্য লড়াই করে গেছেন। আজ তেমনই একজনের কথা বলব যিনি তার শরীরের কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলা সত্ত্বেও হার স্বীকার করেননি এবং আজও তার লড়াই অব্যাহত রয়েছে। তিনি হচ্ছেন পল রিচার্ড আলেকজান্ডার।(Paul Richerd Alexander)যাকে পুরো বিশ্ব ‘দ্য ম্যান ইন আয়রন লাং'(The Man In Iron Lung) নামে এক ডাকে চেনে।

The man Iron Lung

পল রিচার্ড আলেকজান্ডার হলেন একজন আইনজীবী, লেখক এবং প্যারালাইটিক পোলিওর (Paralytic Polio)মত প্রাণঘাতী রোগের হাত থেকে বেঁচে ফিরে আসা ব্যক্তি। পলের জন্ম ১৯৪৬ সালে আমেরিকার টেক্সাস রাজ্যের ডালাস (Dallas, Texas) শহরে হয়েছিল। আর পাঁচটা সাধারণ শিশুর মতোই ছিল পল। কিন্তু মাত্র ছয় বছর বয়সেই তাঁর জীবনে নেমে আসে ভয়ঙ্কর অভিশাপ। অন্য বাচ্চারা যখন স্কুলে যাচ্ছিল, খেলা ধুলা করছিল সেসময় পল নিঃশাস নেওয়ার জন্য লোহার ফুসফুসে শুয়েছিল। বর্তমানে পল ৭৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ। যিনি তার জীবনের ৬৯ টা বছর যান্ত্রিক ফুসফুসের ভিতরে অতিবাহিত করেছেন এবং তিনি লোহার ফুসফুসে বসবাসকারী শেষ ব্যক্তিদের একজন হিসেবে পরিচিত।

ঘটনাটি ১৯৫০ -এর দশকের শেষদিকের। তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে (United Kingdom)ভয়ঙ্কর পোলিও মহামারি দেখা দেয়। শত শত শিশু পোলিও রোগে আক্রান্ত হচ্ছিল। বাদ যায়নি ছয় বছরের পল আলেকজান্ডারও। পলের পা থেকে গলা পর্যন্ত সমস্তটাই পক্ষাঘাতে অবশ হয়ে যায়। ফলে কমে আসে নিঃশাস-প্রস্বাস নেবার স্বাভাবিক ক্ষমতা। এরপর পলের শারীরিক অবস্থার ভীষণ অবনতি হলে, তার বাবা মা তাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করেন। পলের বেঁচে থাকার আশা যখন সকলেই ছেড়ে দিয়েছিল, ঠিক সেসময় এক তরুণ ডাক্তার তার অস্ত্রোপচার করেন এবং তাকে শ্বাস নিতে সাহায্য করার জন্য একটি সিলিন্ডার আকৃতির লোহার ফুসফুসে ভরে দেন। সেই থেকে এই যান্ত্রিক ফুসফুসের সাহায্যেই বেঁচে রয়েছেন পল।

Iron Lung

লোহার ফুসফুস (Iron Lung) হল এক ধরনের ট্যাংক ভেন্টিলেটর। প্রায় ৩০০ কেজি ওজনের এই যান্ত্রিক শ্বাসযন্ত্রটিতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে পুরে দেওয়া হত। তবে মাথাটি থাকত মেশিনের বাইরে। যন্ত্রটি ভিতেরর আবদ্ধ স্থানে বাতাসের চাপের পরিবর্তন করে শ্বাস-প্রশ্বাসকে উদ্দীপিত করত। পুরানো দিনগুলোতে কোন ব্যাক্তির শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেলে এটিই ছিল একমাত্র বেঁচে থাকার উপায়। আর এই কৃত্তিম লাংটিই পলকে সে যাত্রায় নিশ্চিত মৃত্যু থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে থেরাপিস্ট এর সাহায্য নিয়ে কিছুক্ষনের জন্য স্বাভাবিক নিঃশাস নেওয়া শিখেছিলেন পল।

এইরকম প্রতিবন্ধকতা নিয়েও পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন এই ব্যাক্তি। ঘাড় থেকে পা পর্যন্ত পুরো শরীর যেখানে অবশ সেখানে পড়াশোনা করা ছিল কল্পনা মাত্র। কিন্তু হার মানেনি পল। ১৯৬৭ সালে শারীরিকভাবে ক্লাস না করেই ডালাস হাই স্কুল থেকে স্নাতক উত্তীর্ণ হওয়া প্রথম ব্যক্তি হয়ে ওঠেন তিনি। একইসাথে পরবর্তীকালে একজন আইনজীবী হয়ে ওঠেছিলেন পল । এছাড়া তিনি বন্ধু নরম্যান ডি. ব্রাউন আরএন (Norman D. Brown RN)এর সহায়তায় ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে তার স্মৃতিকথা, থ্রি মিনিটস ফর এ ডগ: মাই লাইফ ইন অ্যান আয়রন লাং (Three Minutes for a Dog: My Life in an Iron Lung) নামের একটি বই প্রকাশিত করেছিলেন। তিনি এই বই কীবোর্ডের উপরে প্লাস্টিকের লাঠি ব্যবহার করে লিখেছিলেন। আট বছরেরও বেশি সময় লেগেছিল তার এই বই লিখতে।