একসময় দিনমজুরি করা ব্যক্তি আজ ভারতের সবচেয়ে বড় কুস্তিগীর, এক ধাক্কায় বদলে গিয়েছিল তার জীবন

কর্ম করে যাও, ফলের কথা ভাববে না একথা আমরা সকলেই প্রায়ই শুনে থেকেছি, এমনকি এর পাশাপাশি আরো একটি প্রবাদ আমরা শুনেছি যেটি হল কঠোর পরিশ্রম যদি কোন ব্যক্তি করে থাকে তাহলে তার ফল অবশ্যই একদিন না একদিন সে পাবে।আর এরকমই এক ঘটনা ঘটেছে ভারতের সর্ব বৃহত্তম কুস্তিগীর তথা গ্রেট খালির সাথেও। এক সময় তিনি বহু কষ্টের মধ্যে দিয়ে জীবন যাপন করে এসেছেন তবে এখন তিনি কোটি কোটি টাকার ধন সম্পত্তির মালিক। এমনকি একটা সময় ছিল যখন তার ভাগ্যে দু’বেলা দু’মুঠো ঠিকমত করে খাবার জুটত না। আর আজকের আমাদের আলোচ্য বিষয় থাকতে চলেছে সেই গ্রেট খালি কেই নিয়ে।

ভারত সহ রেসলিং এর জগতের যিনি দ্যা গ্ৰেট খালি নামে পরিচিত তার আসল নাম দিলীপ সিং রানা যার বাবা ছিলেন একজন কৃষক। শৈশবকালে তার বাড়ির অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে তাকে স্কুল ছেড়ে শ্রমিকের কাজ করতে হয়েছিল। তা সত্ত্বেও, খালি হাল ছাড়েননি। আর এখন তিনি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছেন যেখানে তিনি তার সাথে তার গ্রামের উন্নয়নের জন্য অর্থ ব্যয় করছেন।

খালির বাবার নাম ছিল জওয়ালাম, যিনি মাঠে কাজ করতেন, খালির পরিবার ছিল অনেক বড় যেখানে খালিরা ছিল ৬ ভাই, আর পরিবার বড় হওয়ার কারণে তার মা তাপান্দি দেবীও গ্ৰামে মজুরির কাজ করতেন। পরে সংসারের দায়-দায়িত্ব হাতে তুলে নিতে খালিও স্কুলে পড়াশোনা ছেড়ে গ্রামে দিন মজুরির কাজ শুরু করেন। কারণ খালি শৈশব থেকেই শারীরিক গঠনের দিক থেকে অনেক লম্বা চওড়া ছিলেন। যার ফলে তিনি অনেক ভারী ভারী কাজ ও করে নিতেন। তবে তার এই লম্বা চওড়া শারীরিক গঠনের জন্য গ্রামের অনেক মানুষ তার রসিকতাও করতেন।

গ্রামের এই দিনমজুরি করা সামান্য পরিমাণ অর্থ দিয়ে তার একাধিক চাহিদা পূরণ হচ্ছিল না যার দরুন তিনি সিমলা যান এবং সেখানে একজন নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ শুরু করেন। তবে তা থেকে যে অর্থ উপার্জন হচ্ছিল তাতে করে তিনি তার নিজের ডায়েট খরচ এবং ঘরের খরচ চালাতে পারছিলেন না। তবে হঠাৎ একদিন সিমলা পরিদর্শনে আসা এক পাঞ্জাব পুলিশের নজর তার দিকে পড়ে এবং তিনি তার সাথে কথা বলেন। যেখানে এই পুলিশ অফিসার খালি কে আর্থিক ভাবে সাহায্য করার জন্য পাঞ্জাব পুলিশে যোগদান করার প্রস্তাব দেন।

খালি ও সেই প্রস্তাব মেনে নিয়ে ১৯৯৩ সালে পাঞ্জাব পুলিশে যোগ দান করেন আর এখান থেকেই শুরু হয় তার জীবনের একাধিক পরিবর্তন। সেই সময় জলন্ধরের একটি জিমে রেসলিং এর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন কারণ ছোটবেলা থেকেই খালির পছন্দ ছিল কুস্তি। আর এটা সেই সময় যখন আমেরিকাতে শুরু হয়েছিল WWF, যা সকলের পছন্দের বিষয় হয়ে উঠেছিল তবে ভারতের পক্ষ থেকে এখানে কোন খেলোয়াড় ছিল না। যার ফলে খালি ঠিক করেন তিনি আমেরিকা যাবেন, এরপর খালি অনেক প্রস্তুতি নিয়ে ২০০০ সালে আমেরিকা পৌঁছে যান। আর এখানে তিনি প্রথমবারের মতো অল প্রো রেসলিংয়ে অংশগ্রহণ করেন। খালি রিংয়ে পা রাখার সাথে সাথে বড় বড় কুস্তিগীররাও তাকে দেখে ভয় পেয়ে যেত। আপনাদের তথ্যের জন্য বলে রাখি গত ২০০১ সালে খলির হাতে এক কুস্তিগীরের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে যায়।

২০০৬ সালে, খালি প্রথম ভারতীয় কুস্তিগীর হয়েছিলেন যিনি WWF এর সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। এর পরে, তিনি আন্ডার টেকারের মতো শক্তিশালী কুস্তিগীরকেও ধূলিসাৎ করতে বেশি সময় নেননি। পরবর্তীতে, তিনি বিগ শো, মার্ক হেনরি এবং বাতিস্তার মতো খেলোয়াড়দেরও পরাজিত করে WWF খেতাব নিজের নামে করেছেন। রেসলিং জগতে খালি অনেক সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছেন।

বলে রাখি, WWF (যেটি বর্তমানে নাম পরিবর্তন করে WWE নামে পরিচিত) তে টিকে থাকা এত সহজ নয়, যদিও এখানে টাকা পাওয়া যায়, তবে এরজন্য অনেক রক্ত ও ঘাম ঝরাতে হয়। যাই হোক দিলীপ সিং রানা তার এই জীবন সংগ্রামে জয়ী হয়েছেন এবং টিকে থেকেছেন সেই ময়দানে যেখানে আগে লোক যাওয়ার কল্পনা পর্যন্ত করতে পারতো না সেখানে গিয়ে তিনি ভারতের নাম উজ্জ্বল করে এসেছেন।