সিনেমার গল্পকেও হার মানাবে, চা বিক্রেতার মেয়ের আকাশ ছোঁয়ার গল্প

কথাতেই বলে ইচ্ছাশক্তি সবথেকে বড় শক্তি। এই শক্তির কাছে পরাজয় সব শক্তির । এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সমস্ত অসাধ্য কে সাধন করা যায়। এই ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এবং নিরলস পরিশ্রমই এক সাধারন চা-বিক্রেতা সুরেশ গঙ্গ বালের মেয়ে আজ বায়ুসেনা পাইলট। আঁচল গঙ্গবালের ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল পাইলট হবার । কিন্তু বাবা একজন সাধারণ মধ্যবিত্ত। ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্স একাডেমি পড়াশোনা চালানোর খুব একটা সহজ ছিল না চা বিক্রেতা সুরেশ গঙ্গবালের।

অত্যন্ত কষ্ট করে অর্থ উপার্জন করে মেয়ে আঁচলকে ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্স অ্যাকাডেমি তে পড়ান সুরেশ বাবু। কিন্তু এত কষ্ট বিফলে যায়নি সুরেশবাবুর । সমস্ত কঠিন পথ অতিক্রম করে নিজের অধ্যাবাসায় আঁচল আজ বায়ুসেনার পাইলট। নিজের লক্ষ্য যদি স্থির থাকে তাহলে কোন বাঁধাই বাধা নয় একথা আবার একবার প্রমান করলেন ২২ বছরের তরুণী আঁচল গঙ্গবাল। আঁচল ভোপাল থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে এক প্রত্যন্ত নিমুচ নামক এক জেলা থেকে উঠে এসেছে।

খুবই প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়ে হওয়ার জন্য বিশাল কিছু সুযোগ- সুবিধা কোনদিনই পাননি সেভাবে। কিন্তু তাও আঁচল প্রথম থেকেই লক্ষে ছিলেন। স্থির কঠিন অধ্যাবসায় তিনি দিনের-পর-দিন করে গেছেন। তাঁর বাবা একজন সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ । বাসস্ট্যান্ডের পাশে এক ছোট্ট চায়ের দোকান চালায় তাঁর বাবা সুরেশ বাবু । ছোট চায়ের দোকান থেকে যা উপার্জন হয় তা দিয়েই তাঁদের কোনো রকমে দিন চলে ।

এই বিষয়ে একদিন সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সুরেশবাবু বলেন এরকম বহুবার হয়েছে যে স্কুল কলেজে মেয়ের ফিস জমা দেওয়ার জন্য হিমশিম খেতে হয়েছে । কিন্তু তবুও আমরা কখনো ভেঙে পড়িনি। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে গেছি আমরা। জানতাম ঠিক একদিন সব স্বপ্ন পূরণ হবে মেয়ের। পড়াশোনা চালানোর জন্য অনেক সময় অন্যের কাছে হাত পাততে হয়েছে। তবে আজ তাঁর মুখে জয়ের হাসি। কেন না মেয়ের সব স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।

যদিও ছোট্ট থেকেই আঁচলের স্বপ্ন ছিল বায়ুসেনা হবার ।গত, ২০০৩ সালে কেদারনাথের ঘটে যাওয়া ঘটনায় ইন্ডিয়ান আর্মিদের ভূমিকা আঁচলের মনে বেশ গভীর প্রভাব ফেলে। মেধাবী আঁচল এরপর থেকে কিভাবে বায়ুসেনা হওয়া যায় সে বিষয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করে । এরপর শুধু লড়াই আর লড়াই । পরপর পাঁচবার বায়ুসেনা পরীক্ষায় ব্যর্থ হন আঁচল । অবশেষে ষষ্ঠবারে সাফল্য পান নিমুচ জেলার আঁচল গঙ্গবাল। ডুঙ্গিগল এয়ারফোর্স একাডেমি থেকে পড়াশোনা করেন আঁঁচল। এই একাডেমী থেকেই বায়ুসেনার ফ্লাইং অফিসার হয়ে ওঠেন তিনি।

তবে করোনা-কালীন পরিস্থিতির জন্য সুরেশ বাবু এবং তাঁর স্ত্রী আঁচলের সেনা অন্তর্ভুক্তি নিজের চোখে দেখতে পারেননি। কিন্তু তাও তাঁরা যথেষ্ট খুশি । মেয়ের স্বপ্ন সত্যি হওয়াটাই তাঁদের কাছে সব থেকে বড় ব্যাপার । আঁচলের এই সাফল্যে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান টুইট করে অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ চৌহান এর কথায়, “চা বিক্রেতার মেয়ে আঁচল গোটা মধ্যপ্রদেশে কে গর্বিত করেছে । দেশের সম্মান এবং গর্বকে অক্ষুন্ন রাখতে তাকে আকাশের অনেক উঁচুতে উড়তে হবে। “