দৃষ্টিশক্তি হারানোর পর খুইয়েছিলেন চাকরি, মনোবলের জোরে তিনি আজ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক

অনেকবার মনে হয় জীবন কতই কঠিন, কিছু কিছু মানুষ তো জীবনের কষ্ট সহ্য না করতে পেরে এমনকিছু করে ফেলে যা মেনে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তবে পৃথিবীতে এমনও ব্যাক্তি রয়েছেন যাদেরকে দেখার পর কঠিন থেকে কঠিন পরিস্থিতিতেও লড়াই করার ইচ্ছাশক্তি পাওয়া যাও। এমনই এক ব্যাক্তি হলেনভবেশ ভাটিয়া, যার সম্পর্কে জানার পর, আপনারাও অনুভব করবেন যে তিনি কীভাবে কঠিন পরিস্থিতি অতিক্রম করেছেন এবং এগিয়ে গেছেন। ভবেশ ভাটিয়া, যাঁর জীবনে নেমে এসেছিল অন্ধকারের ছায়া । ভবেশের বয়স যখন ২৩ বছর, তখন তার দৃষ্টিশক্তি আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে। কিন্তু পরবর্তীতে রেটিনা মাসকুলার ডিটারিয়রেশন নামক রোগের কারণে তার দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ হারিয়ে যায়। সে সময় হোটেল ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন ভাবেশ।

দৃষ্টিশক্তি হারানোর পর তিনি চাকরি হারান অন্যদিকে তার মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। পরিবারের অবস্থা একেবারেই ভেঙ্গে পড়ে। মা এবং ভাবেশ দুজনের চিকিৎসার জন্যই টাকা ছিল না। ঘরের যা আয় তা মায়ের চিকিৎসায় ব্যয় করতে লাগে ভবেশ। কিন্তু তারপরও তার মাকে বাঁচতে পেরেন নি তিনি। মায়ের প্রয়াণে ভাবেশ গভীরভাবে আহত হয়েছিলেন।একটি সাক্ষাৎকারে ভবেশ বলেছিলেন যে ছোটবেলায় তিনি ঘুড়ির মধ্যে কারুকার্য করতে এবং মাটি থেকে খেলনা তৈরি করতে পছন্দ করতেন। তাই তিনি মোমবাতি তৈরি করে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। এর পেছনের কারণ ছিল তিনি মোমবাতির আকৃতি ও গন্ধ বুঝতে পারতেন এবং আলো সবসময়ই তার দিকে আকৃষ্ট করত।

 

মোমবাতি ব্যবসা শুরু করার আগে, ভাভেশ ১৯৯৯ সালে মুম্বাইয়ের ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য ব্লাইন্ড থেকে প্রশিক্ষণ নেন। যেখানে তিনি প্লেইন মোমবাতি তৈরির প্রশিক্ষণ নেন। ভবেশ বিভিন্ন আকার, রঙ এবং ঘ্রাণের সাহায্যে মোমবাতি তৈরি করা যায় এমন এএক্সপেরিমেন্ট করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এ জন্য তার অর্থের অভাব পড়েছিল। টাকা জোগাড় করতে তিনি রাতে মোমবাতি বানাতেন এবং সেই মোমবাতি পরের দিন মহাবালেশ্বরের স্থানীয় বাজারে তার বন্ধুর হাতের গাড়িতে করে বিক্রি করতেন। এ জন্য তাকে প্রতিদিন ৫০ টাকা দেওয়া হত।

এর পর তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ। বিয়ের পর তিনি এবং তার স্ত্রী দুজনেই মহাবালেশ্বরে একটি ছোট বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। বিয়ের পর ভবেশের স্ত্রী ভাবেশকে পুরোপুরি সাহায্য করতেন। তারা দুজনেই তাদের ব্যবসার উপার্জন দিয়ে দ্রুত একটি বাইক কিনে নিয়েছেলেন। বিয়ের পর তার স্ত্রী ভাবেশের তৈরি মোমবাতি নিয়ে বাজারে বিক্রি করতেন। এভাবে দুজনের বিবাহিত জীবন খুব ভালোভাবে চলতে থাকে।

ভাবেশ তার স্ত্রীকে নিয়ে মলে যেতেন, সেখানে মোমবাতি ছুঁয়ে নকশা অনুভব করতেন এবং একই রকম নকশা নিজে করা শুরু করেন। এর পর প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি বিশেষ প্রকল্পের অধীনে, ভবেশ সাতরা ব্যাঙ্ক থেকে ১৫,০০০ টাকা ঋণ পেয়েছিলেন। এরপর এই টাকা দিয়ে ১৫ কেজি মোম, দুটি রং এবং একটি হ্যান্ডকার্ট কিনলেন ভবেশ এবং এখান থেকেই তার জীবন মোড় ঘুরে যায়। পরে ১৫ হাজার দিয়ে শুরু হওয়া মোমবাতির ব্যবসা কোটি টাকায় রূপ নেয়। আজ কোম্পানিতে ২০০ অন্ধ কর্মচারী কাজ করেন।

এখন তার ক্লায়েন্টদের মধ্যে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ, র‌্যানব্যাক্সি, বিগ বাজার, নারোদা ইন্ডাস্ট্রিজ এবং রোটারি ক্লাবের মতো বড় নাম রয়েছে। তার স্ত্রী নীতা সমস্ত প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা করেন। ভবেশ তার সাফল্যের সমস্ত কৃতিত্ব তার স্ত্রী নীতাকে দেন কারণ খুব কম লোকই আছেন যারা কোনও শারীরিক বা মানসিক ব্যাধিযুক্ত মানুষকে সমর্থন করেন। তাই একজন অন্ধকে সহযোগিতা করে সমাজের সামনে ভিন্ন দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করছেন তার স্ত্রী নীতা। তার সাহসিকতা থেকে আজ অনুপ্রাণিত হচ্ছে গোটা দেশ।