বালাসোরের ‘রিয়েল হিরোস’… আওয়াজ শুনেই পৌঁছে যান ঘটনাস্থলে, বগিতে ঢুকেই প্রাণ বাঁচান শত শত মানুষের

সম্প্রতি ওড়িশার (Odisha) বালাসরে হওয়া রেল দুর্ঘটনার (Balasore train accident) মর্মান্তিক দৃশ্য মানুষকে রীতিমতো কাঁপিয়ে দিয়েছে। যারা ট্রেনের অ্যাকসিডেন্টে আহত (injured people) হয়েছিল তাদের সাহায্য করতে সেখানে যেইসব যুবকেরা গিয়ে পৌঁছেছিল তারা জানিয়েছে (those are help people in this situation they told about the scary situation of the place) যে তারা ঘটনা স্থলের যেখানে যেখানে পা রাখছিল সেখানে সেখানে মানুষের মাংসের টুকরো পড়েছিল যা তাদের জুতোয় আটকে যাচ্ছিল। এই যুবকরা ঘটনা স্থলে পৌঁছানোর সাথে সাথে সেখানের মানুষদের ট্রেন থেকে বের হতে সাহায্য করতে শুরু করে দিয়েছিল। তারা ট্রেন থেকে অ্যাকসিডেন্ট হওয়া ট্রেন থেকে যেমন কিছু জীবন্ত মানুষকে উদ্ধার করে আবার শত শত মৃত মানুষের দেহ ট্রেন থেকে বের করে। বালাসর দুর্ঘটনার স্বীকার হওয়া লোকেদের সাহায্য করা মানুষগুলি যারা প্রমাণ করেছে যে তারা “রিয়াল হিরোজ” (Real heroes)তারা দুর্ঘটনার বিষয় যেইসব তথ্য দিয়েছে তা আপনার আত্মাকে কাঁপিয়ে দেবে।

ওড়িশার বালাসরে হওয়া রেল দুর্ঘটনার আই উইটনেস তুকনা দাস জানিয়ে বলেছেন “আমি দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। সেখানে তিনটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এটি একটি ভয়ানক দৃশ্য ছিল।সর্বত্র হইচই পড়ে গেছিল। আমি তারপর কোনো কিছু না ভেবে তাড়াতাড়ি লোকেদের সাহায্য করা শুরু করলাম। আমি একটি কোচের ভেতরে ঢুকতেই সেখানে ৬০টি লাশ পড়ে থাকতে দেখি। আর তার পাশাপাশি অনেকে সাহায্যর জন্য চিৎকার করছিল। আমি আমার সাধ্যমত তাদের সাহায্য করেছি। আমি আহতদের ট্রেন থেকে বের করে আনলাম। তাদের জল দিলাম এবং তাদের হাসপাতালে পৌঁছাতে সাহায্য করলাম”।

এছাড়া কিছু লোকাল ছেলেরাও জানিয়েছে যে তারা কিভাবে দুর্ঘটনার স্বীকার মানুষদের সাহায্য করেছে। আলোগ নামে একটি যুবক জানিয়েছে “দুর্ঘটনার সময় আমরা তিন বন্ধু ওই এলাকার কাছাকাছি ছিলাম। ট্রেন দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাই। আমরা ট্রেনে আটকে পড়া আহতদের বের করেছি। আর আমরা দেড় শতাধিক মানুষের লাশও বের করেছি ট্রেন থেকে।” আলোগের বন্ধু জানিয়েছে যে তারা যখন মানুষের সাহায্যের জন্য ট্রেনের বগিতে ঢুকেছিল সেই দৃশ্য ভয়াবহ ছিল। সেই বগির ভেতর মানুষের কাটা হাত, পা, মাথা ছড়ানো ছিটানো পরে ছিল। আর যেখানে যেখানে তারা পা রাখছিল সেখানে সেখানে মানুষের মাংসের টুকরো পরেছিল যা তাদের জুতোয় আটকে যাচ্ছিল। এই সাহায্যকারীরা বুঝতে পারছিলেন না যে তারা প্রথমে কি করবে। তারপর তারা আহতদের খুঁজতে শুরু করে ও যতটা সম্ভব তাদের সাহায্য করে।

Odisha Balasore train accident

এরপর তৃতীয় বন্ধু বয়ান দিয়েছে যে “প্রথমে আমরা আহতদের ট্রেন থেকে বের করে আনলাম। তাদের জল দিলাম আর তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আমরা সারা রাত মানুষকে সাহায্য করতে ব্যস্ত ছিলাম। আমরা ছাড়াও আরো অনেকে আহতদের সাহায্য করছিলেন। কিন্তু সেই ট্রেন অ্যাক্সিডেন্টের দৃশ্য এতটাই ভয়ঙ্কর ছিল যে আমি আর কখনো এই দৃশ্য মনে করতে চাই না। মানুষের আর্তনাদ এখনো আমার কানে বাজছে। এই দুর্ঘটনায় আমরা অত্যন্ত শোকাহত। কিন্তু আমরা সাধ্যমত মানুষকে সাহায্য করেছি।”

অন্যদিকে করোমন্ডেল এক্সপ্রেসে থাকা একজন ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (এনডিআরএফ) এর সেনা সম্ভবত প্রথম ব্যক্তি যিনি প্রাথমিক উদ্ধার অভিযানে যোগদানের আগে ট্রেন দুর্ঘটনার বিষয়ে এমারজেন্সি পরিষেবাকে অবহিত করেছিলেন। এনডিআরএফ সেনা ভেঙ্কটেশ এন. কে ছুটিতে ছিলেন এবং পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া থেকে তামিলনাড়ু যাচ্ছিলেন। রেলের আধিকারিকরা জানিয়েছেন যে ভেঙ্কটেশ দুর্ঘটনায় অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন কারণ তার কোচ B-7 লাইন থেকে নেমে গেছিল কিন্তু অন্য ট্রেনের সাথে ধাক্কা খায়নি।তিনি থার্ড এসি কোচে ছিলেন এবং তার সিটের নম্বর ছিল ৫৮।

কলকাতায় এনডিআরএফের দ্বিতীয় ব্যাটালিয়নে কর্মরত ৩৯ বছর বয়সী ভেঙ্কটেশ প্রথমে ব্যাটালিয়নে তার সিনিয়র ইন্সপেক্টরকে ফোন করে দুর্ঘটনার কথা জানান। তারপরে তিনি হোয়াটসঅ্যাপে সাইটের লাইভ লোকেশন এনডিআরএফ কন্ট্রোল রুমে পাঠিয়েছিলেন। আর এর ফলে উদ্ধারকারীরা ঠিক সময় ঘটনা স্থলে পৌঁছায়। ভেঙ্কটেশ বলেন “আমি একটা ঝাঁকুনি অনুভব করলাম… এবং তারপর দেখলাম আমার কোচে কিছু যাত্রী পড়ে যাচ্ছে। আমি প্রথমে একটি যাত্রীকে ট্রেন থেকে বাইরে বার করলাম ও তাকে রেলওয়ে ট্র্যাকের কাছে একটি দোকানে বসালাম…আর তারপর অন্যদের সাহায্য করতে দৌড়ে যাই”।

এছাড়া জানিয়ে দি ওড়িশার বালাসোরে গত শুক্রবার ট্রেন দুর্ঘটনায় ২৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে এখনো এই ট্র্যাক থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি। ট্রেন দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বগিগুলোর ধ্বংসাবশেষ এখনো ট্র্যাকে ছড়িয়ে রয়েছে। গতকাল অর্থাৎ শনিবার ওড়িশার বালাসোরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার পরে প্রধানমন্ত্রী মোদি ঘটনাস্থলে পৌঁছে রেসকিউ টিমের কাজের বিষয় খবর নেন। এছাড়া প্রধামন্ত্রী আহতদের সাথে হাসপাতালে দেখা করতে যান আহতদের বিষয় জানতে ও সেখানকার আহতদের সাথেও কথাও বলেন। এছাড়া মোদী জানিয়েছেন যে যারা এই ঘটনার জন্য দোষী প্রমাণিত হবে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে না ও তাদের জন্য কঠিন শাস্থির ব্যবস্থা করা যাবে।