70 বছরের বৃদ্ধকে বিয়ে করতে চেয়ে 70 জন পাত্রীর ফোন, তালিকায় রয়েছে 24 থেকে 25 বয়সের মেয়েরাও

এই বিজ্ঞাপনটি বিয়ে করবে ৭০ বছর বয়সী একজন ‘ যুবক’ এর জন্য। আর সেই বিজ্ঞাপন দেখার এক সপ্তাহের মধ্যে অন্তত সত্তর জন বধূ সাড়া ফেলে। প্রার্থীদের তালিকায় ২৪-২৫ বছর বয়সী মেয়েরাও রয়েছে৷ ৭০/৫ ফুট ৪ ইঞ্চি, অবসরপ্রাপ্ত আরবিআই-ম্যানেজার, কালীতে দোতলা বাড়ি, পেনশন হোল্ডার। আমি তার এর মধ্যে একটি মেয়ে চাই।

বাগুইহাটির বাসিন্দা জনাব গঙ্গোপাধ্যায় ৩১ অক্টোবর একটি বাংলা দৈনিক ‘পাত্রী চাই’ (তার পরিচয় গোপন রাখার জন্য নাম দেওয়া হয়নি) একটি কলামে এই ঘোষণা করেছিলেন। নিচে তার দুটি মোবাইল নম্বর ছিল। ঘোষণার পর থেকে দুটি ফোনই কার্যত অস্তিত্বহীন। ২৪-২৫ থেকে ৬০-৬৫ পর্যন্ত, সমস্ত বয়সের মহিলারা হোয়াটসঅ্যাপে ফটো সহ বায়োডাটা ঈলের সাথে সম্ভাব্য বধূ হিসাবে ক্রমাগত যোগাযোগ করে এবং কাজ করে৷ গত রোববারও তিনি পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন।

সব মিলিয়ে সত্তর দশকের মটকারা ভালো মেজাজে। আমি এখনও মনে করতে পারি না, তবে একাকীত্বের জীবন থেকে কম মধুর কী হতে পারে? সোমবার সকালে ফোনে ধরা পড়েন শ্রী গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বছর সাতেক আগে স্ত্রী মারা গিয়েছেন। এক মেয়ে আছে। সে নিজের সংসার নিয়ে থাকে। নাতি-নাতনিরা স্কুলে পড়ে। আমার এই বিয়ের যে বিজ্ঞাপন দেওয়া বা ইচ্ছে প্রকাশ করা, তাতে তাদের কোনও সমস্যা নেই। বরং গত রবিবার যে পাত্রীর বাড়ির লোকজন আমার বাড়িতে এসেছিল তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে আমার মেয়ে-জামাইও এসেছিল।”

এই বয়সেও বিয়ে? আপনি নার্সিংহোমে যেতে পারেন? ‘সত্তর দশকের যুবক’-এর নিশ্চিত উত্তর, “বৃদ্ধাশ্রমের অনেক নিয়ম-কানুন। চিরকাল নিজের মতো করে বেঁচেছি। শেষ বয়সটা অন্যের অধীনে কাটাই কী করে? আর বিয়ে করা মানে তো আমার কাছে অন্য কিছু না। একজন সঙ্গিনীকে কাছে পাওয়া। সে আমায় যাতে দেখভাল করে একটু। বাড়িতে কাজের জন্য রাখলে তো মানুষ আরও কূট মন্তব্য করবে। তার থেকে বিয়ে করে সামাজিক স্বীকৃতি দেওয়াটাই তো ভাল।”

কিন্তু এত কম বয়সে যে মেয়েরা ডাকবে, তাদের টার্গেট থাকবে আপনার সম্পত্তির দিকে। বৃদ্ধের সাফ জবাব ছিল, “সে আমি যাচাই করেই নেব। এত গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলেছি। আর এটুকু পারব না! আসলে একাকীত্ব কাটাতেই বিয়ের এই সিদ্ধান্ত। তাতে আমার পরিবারের কোনও আপত্তি নেই। আমি তাদেরকেও সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করব না।” কিন্তু তিনি পঞ্চাশ বছরের কম বয়সের মেয়েই কেন চাইছেন? বৃদ্ধের কথায়, “আসলে শেষ বয়সে দেখাশোনা করতে গেলে তো একটু শক্তসামর্থ্য মহিলার দরকার, তাই চেয়েছি। অন্য কোনও উদ্দেশ্য নেই তাতে।”

মনস্তাত্ত্বিক থেকে সমাজকর্মী সবাই কর্নিশকে জানিয়েছেন বৃদ্ধের সিদ্ধান্তের কথা। সমাজকর্মীদের মতে, প্রবীণদের সৎ সাহস থাকে। আমাদের সমাজে ৭০ বছরের বেশি বয়সীরা সংবাদপত্রে বিয়ের ঘোষণা দিতে ভয় পায়। কিন্তু ব্যক্তিটির সৎ সাহস আছে তা দেখে ভালো লাগে। পাভলভ মানসিক হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শর্মিলা সরকার বলেন, “এটা একটা সাহসী পদক্ষেপ। যে কোনও বয়সেই যে নতুন করে জীবন শুরু করা যায়, এটাই তার প্রমাণ। আরও ভাল লাগছে তিনি তাঁর মেয়েকে এ বিষয়ে পাশে পেয়েছেন।” ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রিস্টের অধিকর্তা প্রদীপ সাহা বলেন, “একাকীত্বে ভোগা প্রবীণদের কাছে এই ভদ্রলোক নতুন করে বাঁচার দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবেন।”