ক্যান্সার রোগে ভুগেছিলেন বাবা, শিক্ষা নিয়ে জৈবিক সার বানিয়েছে কামাচ্ছেন লাখ লাখ টাকা

কথায় আছে মানুষ যদি পরিস্থিতির কাছে হার না মেনে যদি নিজের লক্ষের দিকে টিকে থাকে এবং পরিশ্রম করে তবে সফলতা অর্জন অবশ্যই হয়। এই কথাটিকে প্রমান করে দেখিয়ে দিয়েছেন শ্রবণ যাদব। ইনি নিজের নতুন আইডিয়া নিজে এগিয়ে গেছিলেন এবং পরিশ্রম দ্বারা আজ সফলতা অর্জন করে দেখিয়েছেন। আসুন এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জেনেনি পুরো বিষয়টি।

ডাঃ শ্রবণ যাদব রাজস্থানের জয়পুরের বাসিন্দা। বর্তমানে তিনি অর্গানিক ফার্টিলাইজারের ব্যবসা করছেন। এই ব্যবসাটি নাম তিনি রয়েছে, যার নাম “ড. অর্গানিক ভার্মিকম্পোস্ট” রেখেছেন। তবে যেকোনো শুরু করার পেছনে অবশ্যই কোনো না কোনো কারণ বা  অনুপ্রেরণা থাকে। শ্রবণের অর্গানিক ফার্টিলাইজারের ব্যবসা শুরু করার পিছনেও একটি বিশেষ কারণ রয়েছে। বিষয়টি হলো তার বাবার নেশা জাতীয় কোনো বদ অভ্যাস না থাকা সত্ত্বেও ক্যানসার ধরা পড়েছিল। শ্রবণ তার বাবার ক্যানসারের জন্য কেমিক্যাল জাতীয় খাওয়ারকে দায়ী মনে করতেন।

বাবার অসুস্থতা থেকে অনুপ্রেরিত হন শ্রবণ

শ্রবণ তার বাবার অসুস্থতার কারণে অনুভব করেন যে আজকাল ফসল উৎপাদন অত্যাধিক পরিমানে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হচ্ছে। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর এবং মারাত্মক পরিমানে রোগ সৃষ্টির কারণ।  এরপর তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে কৃষকদের জৈব সার সরবরাহ করতে হবে, যাতে তারা রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে। জৈব সার ব্যবহার করলে ফলনও ভালো হবে ও স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে।

MNC-র কাজ ছেড়ে দিলেন তিনি

উদয়পুর মহারানা প্রতাপ বিশ্ববিদ্যালয়  থেকে অর্গানিক ফার্টিলাইজার নিয়ে এমএসসি পড়ার পর শ্রবণ একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছিলেন। কর্ণাটক ভিত্তিক এই কোম্পানিতে কীটনাশক তৈরি করা হতো এবং শ্রাবণ সেই ওষুধের প্রচার করার কাজ করতেন। কিন্তু তার আগ্রহ বরাবর অর্গানিক ফার্টিলাইজারের দিকে থাকায় খুব বেশি দিন এই কাজে মন লাগেনি শ্রবণের। মাত্র ৬-৭ মাস কাজ করার পর কাজ ছেড়ে দিয়েছিলেন শ্রবণ।

MNC এর চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পর নিজের পড়াশোনার জ্ঞান দ্বারা বুদ্ধি লাগিয়ে জৈব সার তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শ্রবণ। যখন তিনি জৈবসার তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন তখন তাকে সম্মুখীন হতে হয়েছিল অনেক হাসি-ঠাট্টার। লোকেরা বলা-বলি করছিল যে ডাক্তারি পর্যন্ত পড়ালেখা করার পর ভালো চাকরি না করে তুমি সার তৈরির কাজ করছ? এত পড়াশোনা করে গোবর তোলার কাজ করবে শেষ পর্যন্ত ইত্যাদি। কিন্তু কথায় আছে সমাজের উপহাস উপেক্ষা করেই জীবনের লক্ষ্য অর্জন করা যায়। লোকেদের কথা উপেক্ষা করে শ্রবণ নিজের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে গেছিল।

শ্রাবণ চেয়েছিলেন যে তার তৈরি জৈব সার সর্বাধিক পরিমানে কৃষকের কাছে সরবরাহ হোক যাতে অর্গানিক ফার্মিং করা সম্ভব হয়। অর্গানিক ফার্মিং হলে ফসল ভালো ফলবে এবং শরীরের পক্ষেও ভালো। তাই শ্রবণ আরো বেশি করে সারের কোয়ালিটির দিকে নজর দিতেন। তবে প্রথম দিকে সার উৎপাদনের সময় শ্রবণকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। যেহেতু তিনি নতুন ছিলেন তাই ভালো সার উৎপাদনের সময় তাকে অনেকবার অসফলতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এই কারণে তিনি প্রথমদিকে খুব চিন্তিত ছিলেন যে এতো পড়াশোনার পরও তিনি ভালো সার বানাতে পড়ছিলেন না। কিন্তু তিনি হার মানেননি এবং পরে অনেক চেষ্টার পর তিনি ভালো সার উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

সময়ের সাথে সাথে শ্রবণ এই কাজে আরো পারদর্শী হয়ে ওঠেছিলেন। তিনি জৈব চাষের ক্ষেত্রে অনেক অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে গবেষণাও করেন। এরপর কৃষকদেরও এ বিষয়ে সচেতন করতে শুরু করেন। এছাড়া শ্রবণের ভাই তাকে এই কাজে অনেক সহযোগিতা করেছিলেন তাই শ্রবণ তার ভাইকে মার্কেটিং এর কাজ সামলানোর দায়িত্ব দেন।

তিনি ১৭ বেড ভার্মিকম্পোস্ট রোপণ করে একটি ছোট ইউনিট দিয়ে এই কাজটি শুরু করেছিলেন। শ্রবণের “Dr Organic Vermicompost” নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলও রয়েছে, যার মাধ্যমে তিনি ভার্মিকম্পোস্ট সম্পর্কেও মানুষকে জানান।

সুপ্রাচীনকাল থেকে ভালো ফলনের জন্য ক্ষেতে গোবর ব্যবহার করা হলেও আধুনিক যুগে নিত্যনতুন জিনিস আসায় এর পরিচিতি কমে গেছে।কিন্তু আজ শ্রবণ জৈব সার উৎপাদনের জন্য গোশালা থেকে গোবর এনে তা থেকে সার তৈরি করেছে। তিনি কম্পোস্ট তৈরিতে গোবর ব্যবহার করেন যার কারণে তার তৈরি করা কম্পোস্টের গুণগত মান আগের তুলনায় অনেক উন্নত হয়।

বর্তমানে তারা ৩০ টন সার উৎপাদন করতে ৭০০ বেড ব্যবহার করেন। এই কাজের মাধ্যমে তিনি মাসে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করেন। জানিয়ে দি যে শ্রবণ যাদব কৃষকদের একটি ভার্মিকম্পোস্ট ইউনিট স্থাপনের বিষয়ে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেন। তার মতে, দেশের প্রায় ২০ হাজার মানুষ ভার্মি কম্পোস্টের ইউনিট স্থাপন করেছেন। যদি আপনি শ্রবণ যাদবের জৈবিক সার কিনতে চান বা তার থেকে প্রশিক্ষণ নিতে চান 7976996775 এই নম্বরে কন্টাক্ট করুন।