বাড়ি ছেড়ে জঙ্গলে বানিয়েছেন কুঁড়েঘর, ৪ বছর ধরে বাঁদরদের মা এই মহিলা
প্রকৃতিতে অনেক ধরনের জীব বসবাস করে যেমন গাছপালা, মানুষ ও বিভিন্ন ধরণের জানোয়ার ইত্যাদি। তবে সব প্রাণীদের মধ্যে মানুষকে সবচেয়ে উন্নত প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ মানুষের অনেক বুদ্ধি থাকে, মানুষ নিজের বুদ্ধি লাগিয়ে অনেকরকম উন্নত জিনিস আবিষ্কার করেছে আর বিশ্বকে অনেক সুন্দর করে তুলেছে।
তাই বলা হয় যে যেহুত মানুষের কাছে বুদ্ধি থাকে তাই মানুষ নিজের লাভ-ক্ষতি বুঝে সমস্ত কাজ করতে পারে। তবে পশু-পাখিদের মাথায় এতো বুদ্ধি থাকে না তাই তারা লাভ ক্ষতি দেখে না তারা শুধু ভালোবাসার ভাষা বোঝে এবং তারা শুধু আপনার থেকে ভালোবাসা চায়। কাউকে ভালো কি ভাবে বাসতে হয় ও কারুর প্রতি বিশ্বস্ত কিভাবে থাকতে হয় তা শুধু পশু-পাখি বা জন্তুজানোয়ারদের থেকে শেখা উচিত।
যেমন একটি পোষা কুকুর এই বিশ্বের সবচেয়ে বিশ্বস্ত প্রাণী হয়। কুকুরটি নিস্বার্থ ভাবে তার মালিকের সুরক্ষা করে। ভালোবাসাকে এই পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র ও শক্তিশালী শব্দ হিসেবে গণ্য করা হয়। কারণ পৃথিবীর সব কাজ যা ক্রোধ দ্বারা করানো সম্ভব হয় না তা এই শব্দটি দ্বারা করানো সম্ভব হয়।
এই পৃথিবীতে অনেক মানুষ রয়েছে যারা জন্তু-জানোয়ারদের পছন্দ করে না এবং জন্তু-জানোয়ারদের ক্ষতি করে। আবার কিছু কিছু মানুষ এমনও রয়েছে যারা জন্তু-জানোয়ারদের এতটাই ভালোবাসে যে তাদের সন্তান তুল্য মনে করে। এই পশুপ্রেমীদের লক্ষ্য থাকে পৃথিবীর অবোলা প্রাণীদের সহায়তা করা যাতে তাদের কষ্ট করে বাঁচতে না হয়।
তাই এই পশুপ্রেমীরা পশুদের খাদ্য, জল চিকিৎসা ইত্যাদির ব্যবস্থা করে। এছাড়া জানিয়ে দি দিন দিন অনেক পশুপাখি মানুষের অত্যাচার ও পরিবেশের পরিবর্তনের ফলে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এরকমই যদি চলতে থাকে তবে পরিবেশের ভারসাম্য বিগড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আজ আমরা এই আর্টিকেলে পৃথিবীর ভারসাম্য নয় বরং এক পশুপ্রেমীরা বিষয় আলোচনা করবো।এই পশু প্রেমী হলো এক বাদর প্রেমী (monkey lover) মহিলা। ইনি বাদরদের জন্য নিজের ঘর-বাড়ি ত্যাগ করে বাদরদের সাথে জঙ্গলে গিয়ে বসবাস করেন (staying in jungle)। আসুন এই লেখার মাধ্যমে ব্যাপারটি সংক্ষেপে জেনেনি।
প্রতিবছরের মতো এই বছরও মারাত্মক পরিমানে গরম পড়েছে। আর এই গরমের ফলে প্রতি বছর শত শত পশুপক্ষী মারা যায় জল ও খাদ্যের অভাবে। এমন পরিস্থিতির কারণে ইউপি রাজ্যের বান্দা জেলার এক বুড়ি মহিলা এমন কাজ করেছে যা করার কথা কেউ কল্পনাও করতে পারেনা। যদিও এই কাজের জন্য দেশজুড়ে তিনি অনেক প্রশংসাও পাচ্ছেন।
এই মহিলা একজন বাদর প্রেমী (monkey lover)। তিনি বাদরদের খেয়াল রাখার জন্য ননিজের বাড়ি-ঘর ছেড়ে জঙ্গলে একটি কুরে ঘর বেঁধে সেখানে বসবাস করছেন (staying in jungle)। আর এই গরমের মরসুমে নিজের হাতে পশু-পাখিদের যন্ত নেন। এই মহিলার নাম হচ্ছে রানী এবং ইনি বান্দা জেলার কাটরা এলাকার বাসিন্ধা এবং এনার বয়স ৬০ বছর। এই মহিলা বহু বছর ধরে বাগৌ নদীর তীরে একটি দেবী মন্দিরের কাছে কুটির বেঁধে বসবাস করছেন এবং পশুপাখি ও বাদরদের যত্ন নিচ্ছেন (take care of monkies) এবং অনেক পুণ্যের কাজ করছেন।
রানী জানিয়েছেন যে জঙ্গলে অনেক বাদর রয়েছে। আর অনেক সময় অতিরিক্ত গরমের ফলে নদীর জল শুকিয়ে যায় যার ফলে জলী অভাবে জঙ্গলের বাদরদের ও পশুপাখিদের প্রাণ সংকটে পরে যায়। তাই তিনি জঙ্গলে থেকে পশুপ্রাণীদের সুরক্ষা করছেন। রানী আরো জানিয়েছেন যে এই পুণ্যের কাজের পিছনে তিনি নিজের জীবনের ৮টি বছর বিলিয়ে দিয়েছেন।
রানীর গোটা পরিবার কলিংজর এলাকার কাটরায় বসবাস করেন। সম্প্রতি রানী তার এক ছেলেকে প্রাণে হারিয়েছেন এবং তার বাকি ছেলেরা গ্রামে তাদের পরিবারকে নিয়ে সংসার করছে। রানি জানিয়েছেন যে তার ছেলেরা প্রায়ই জঙ্গলে তার সাথে দেখা করতে আসে। এছাড়া রানীর এই পুণ্যের কাজের জন্য রানী গ্রামের লোকেদের থেকেও অনেক সাহায্য পেয়েছেন।গ্রামের লোকেরা জঙ্গলে যেখানে রানী কুটির বেঁধেছে সেখানে রানী ও পশুপাখিদের জন্য খাওয়ার রেখে তার সহায়তা করার চেষ্টা করে।
রানী জানিয়েছে যে জঙ্গলের বাদর ও রানী পরস্পরকে এতো ভালোবাসে যে বাদর গুলি বেশিরভাগ সময় রানীর আশেপাশেই ঘুরে বেড়ায় বা বসে থাকে। এমনকি জঙ্গলে যে রানীর দুই বিঘা জমি আছে সেখানে যখন রানী যায় তখন রানীর পিছন পিছন পুরো বাদর সেনা জমি পর্যন্ত যায়। এছাড়া রিপোর্ট থেকে জানা গেছে যে রানী প্রতিটা বাদরকে আলাদা আলাদা নাম রেখেছেন এবং প্রতিটা বাদর নিজের নিজের নাম জানে।
হ্যান্ডপাম্প দ্বারা যখন রানী বাদরদের জল খাওয়ায় (take care of monkies) তখন রানী বাদরদের তাদের নাম ধরে ডাকেন। বাদর গুলির নাম হলো পাপ্পু, চুন্নু, মুন্নু, কালু ইত্যাদি। রানীর ডাকে বাদর গুলি এমন করে রানীর কাছে ছুটে আসে যেমন মা ডাকলে বাচ্চারা ছুটে আসে। যখন ও যেখানে রানীর প্রসঙ্গ আলোচিত হচ্ছে সেখানে সেখানে রানী তার এই পুণ্যের কাজের জন্য খুব প্রশংসা পাচ্ছেন।