জন্মের সময় লোকে বলেছিল ফেলে দিতে, এখন ২৯ বছর বয়সে গড়েছেন কোটি টাকার ব্যবসা

প্রবাদ আছে, ‘অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়’, চেষ্টা এবং প্রচেষ্টার দ্বারা। কিন্তু সেই প্রচেষ্টা যখন কোনো প্রতিবন্ধী মানুষ করেন, তখন তাঁর কাছে আরো চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে। আজ এমনি এক অন্ধ ব্যক্তির কথা বলবো, তাঁর কাছে সফলতাই পৌঁছনো একেবারে অসম্ভব ছিল তবে তিনি সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন।

ব্যক্তিটির নাম হল শ্রীকান্ত বোলা। তিনি অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা। তিনি জন্ম থেকেই অন্ধ। কিন্তু তাঁর এই প্রতিবন্ধীতা তাঁর সফল হওয়া থেকে আটকাতে পারেনি। শ্রীকান্ত আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিন ফোর্বসের এশিয়ান ৩০ তম শ্রেষ্ঠ বিজনেসম্যান হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে নিয়েছেন।

শ্রীকান্ত অন্ধপ্রদেশের এক চাষী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ১৯৯২ সালে। তাঁর জন্মের পর চোখে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়। গ্রামের অনেক পরিচিত মানুষ তার বাবা-মাকে পরামর্শ দিয়েছিল, শ্রীকান্তকে কোন অনাথ আশ্রমে রেখে আসার জন্য। কিন্তু কোন বাবা-মা কি সেটাই রাজি হয়, তেমনি শ্রীকান্তের বাবা মাও রাজি হননি। তাঁরা তাঁদের ছেলেকে নিজের কাছে থেকে আসতে আসতে বড় করে তুলেছে।

শ্রীকান্ত প্রতিবন্ধী হওয়ার জন্য তাঁকে পদে পদে উপেক্ষা সহ্য করতে হয়েছে। তিনি স্কুলে শেষ বেঞ্চে বাধ্য হয়ে বসতেন। তাঁর সাথে শিক্ষকরা এবং তাঁর পারিপার্শ্বিক বন্ধুরা তাঁর সাথে মিশতে চাইতো না। কিন্তু সব বাধা উপেক্ষা করে তিনি দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষায় ৯৮ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন। এরপর তিনি আইআইটির জন্য প্রস্তুত হতে লাগলেন। আবার সেই বাধা বা উপেক্ষা তাঁর উপেক্ষা, কোনো শিক্ষকরা তাঁকে গাইড দিতে রাজি হলো না।

তিনি হাল ছেড়ে দেননি, একটা সময় তিনি আমেরিকার টপ প্রযুক্তি শিক্ষা কেন্দ্র এমআইটিতে ভর্তি হন। তিনি ইতিহাস বিষয়ে প্রথম হয়ে আন্তর্জাতিক প্রথম দৃষ্টিহীন ছাত্র হিসেবে ভারতের নাম উজ্জ্বল করেছেন। তিনি লেখাপড়া শেষ করার পর বিদেশে তাঁর জীবনটা অনেক আরামে কাটাতে পারতেন।

কিন্তু তিনি দেশে ফিরে নিজের বোলান্ট ইন্ডাস্ট্রি শুরু করেন। তাঁর নিজের কোম্পানিতে তিনি লাভ করেন ১৫০ কোটি টাকা, ২০১৮ সালে। তিনি তার সংস্থায় প্রচুর লোকের কর্মসংস্থান করে দিয়েছিলেন। তাঁর সংস্থাতে রতন টাটা পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছিলেন। শ্রীকান্ত ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত ডক্টর এপিজি আব্দুল কালামের সাথে দেখা করেছিলেন।

আসলে ২০০৬ সালে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত ডক্টর এপিজি আব্দুল কালামের বক্তৃতায় তিনি উপস্থিত ছিলেন। আব্দুল কালাম শ্রীকান্তকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘তুমি জীবনে কি হতে চাও?’
তিনি উত্তরে বলেছিলেন, ভারতের প্রথম অন্ধ রাষ্ট্রপতি হওয়ার স্বপ্ন আছে। তিনি এখনও পর্যন্ত
অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন – সিআইআই ইমার্জিং এন্ট্রেপ্রিনার অফ দ্য ইয়ার ২০১৬, ইসিএলআইএফ মালয়েশিয়া ইমার্জিং লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড প্রমুখ।

Related Articles

Back to top button