আয়নার ইতিহাস: কিভাবে হয়েছিল আয়নার আবিষ্কার, রইল পুরো কাহিনী

আয়না আমাদের রোজকার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বস্তু। আমরা কোথাও যাওয়ার আগে তৈরি হওয়ার জন্য আয়নার ব্যবহার করি এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারি যে অমুক জামাটা পড়লে আমাদের কেমন দেখতে লাগবে বা এইরকম চুলের স্টাইল করলে আমাদের ভালো লাগবে কিনা বা তমুক পোশাকটা আমাদের গায়ে ভালো লাগছে কিনা ইত্যাদি। আয়না আমাদের নিজেদের সাথেই আমাদের পরিচয় করায়। বিশেষ করে মেয়েদের তো আয়নার প্রতি একটা আলাদাই ভালোবাসা কাজ করে।

মেয়েরা ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে আয়নার সামনে সাজগোজ, মেকআপ ইত্যাদি করে। তাই বলা যেতে পারে যে আয়না আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু আপনি কখনো ভেবেছেন যে আয়না কোথা থেকে এলো? কে আয়নার আবিষ্কার করলো? কে প্রথমবার নিজের চেহারা আয়নায় দেখেছিল যার পর আয়না আবিষ্কার হলো ? এই সব প্রশ্নের উত্তর যদি আপনার কাছে না থেকে থাকে তবে এই আর্টিকেলটি শুধু আপনার জন্য। আজ আমরা এই আর্টিকেলে আলোচনা করতে চলেছি আয়না আবিষ্কারের ইতিহাস। আসুন জেনেনি পুরো তথ্য।

আয়নার আবিষ্কার করা ব্যক্তি

এরকম নয় যে আয়না আবিষ্কার করার আগে মানুষ নিজের মুখ দেখতে পারতো না। মানুষ আয়না আবিষ্কারের আগে জলে নিজের মুখ দেখতো। কিন্তু জলে মুখের ছায়া পরিষ্কার দেখা যায় না যার ফলে জলে নিজেকে দেখে মেকআপ বা সাজগোজ করা সম্ভব না।

১৮৩৫ সালে, জার্মান রসায়ন বিজ্ঞানী জাস্টাস ফন লিবিগ প্রথম কাঁচ আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি কাচের একটি পাতলা পৃষ্ঠে ধাতব রূপার একটি পাতলা স্তর প্রয়োগ করে একটি কাচ তৈরি করেছিলেন। এই কাচের তৈরি জিনিসে মুখ খুব স্পষ্ঠ দেখা যাচ্ছিল এবং এর সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে তৈরি করা সোজা হয়ে উঠেছিল। আর এই ভাবেই সৃষ্টি হয়েছিল আয়না।

সেই সময়ে মেটালিক সিলভার দ্বারা তৈরি আয়না শুধুমাত্র ধনী ও বড় বাড়ির লোকেরা ব্যবহার করত। ধনী ব্যক্তিরা অর্ডার করে নিজেদের জন্য আয়না তৈরি করাতো। কিন্তু দরিদ্র ব্যক্তিরা আগের মতোই জলকেই আয়না হিসাবে ব্যবহার করতো।

আয়নাকে মানা হতো যাদুকরি

১৮৩৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে আয়না আবিষ্কৃত হয়েছিল কিন্তু
মানুষ তার আগেও আয়না ব্যবহার করত। ধরা হয় যে আজ থেকে প্রায় ৮ হাজার বছর আগে এনাটোলিয়া অর্থাৎ বর্তমান তুরস্ক ও মেক্সিকোর মতো দেশে আয়না ব্যবহার করা হতো। কিন্তু সেই যুগের আয়না গুলো সঠিক চেহারা দেখানোর জায়গায় কেমন অদ্ভুত ধরণের চেহারা দেখতো।

প্রাচীনকালের লোকেরা আয়নাকে একটি যাদুকরী জিনিস বলে মনে করত। তারা মনে করতো যে আয়নার সাহায্যে তারা তাদের দেবতা, দেবী ও পূর্বপুরুষদের যোগাযোগ করতে পারে। তাই সেই যুগের মানুষ আয়নায় তাকাতো তাদের মুখ দেখার জন্য নয় বরং তাদের দেবতা ও পূর্বপুরুষদের সাথে দেখা করার জন্য। সময়ের সাথে সাথে মানুষ আয়না ব্যবহার করতে শিখে গেলেও দরিদ্র শ্রেণির কাছে আয়না দীর্ঘকাল সময় ধরে অস্পৃশ্যই ছিল।

প্রায় ৪০০০ থেকে ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মিশর ও মেসোপটেমিয়াতে তামাকে পলিশ করে আয়না হিসেবে ব্যবহার করা হতো।এই জায়গাটি আজ ইরাক নামে পরিচিত। এছাড়া ১০০০ বছর আগে দক্ষিণ আমেরিকায় পাথর পালিশ করে আয়না তৈরি করা হয়েছিল কিন্তু সেটায় অস্পষ্ট চিত্র দেখা যেত।

প্রথম শতাব্দীতে রোমান লেখক প্লিনি দ্য এল্ডার কাঁচ থেকে কাঁচের দ্বারা আয়না তৈরির পদ্ধতি ব্যাপারে লিখেছিল। কিন্তু সেই পদ্ধতিতে আয়না তৈরি করায় তাতে মুখ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল ও আকার আয়তনে ছোট দেখছিল।

আয়নায় নিজের মুখ দেখা প্রথম ব্যক্তি

দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার পর ১৮৩৫ সালে এমন একটি আয়না তৈরি করা হয় যাতে মুখমণ্ডল স্পষ্ট ও নির্ভুলভাবে দেখা যাচ্ছিল। জানিয়ে দি যে ব্যক্তি প্রথম আয়নায় নিজের মুখ দেখেছিল তার নাম ছিল তেবেলে। ইনি একটি আদিবাসী গোষ্ঠীর মানুষ ছিল।

তেবেলের পরে দ্বিতীয় যেই ব্যক্তি আয়নায় নিজের মুখ দেখেছিলেন তিনি ছিলেন গোষ্ঠীর প্রধান। তার নাম ছিল পুয়া। পুয়া তার মুখ আয়নায় দেখার পর আনন্দে পাগল হয়ে গেছিলেন। আয়নায় তাকিয়ে সে বিভিন্ন ধরণের অঙ্গি-ভঙ্গি করতে শুরু করেছিল। কিন্তু পুয়া আয়নাকে গোষ্ঠীর জন্য বংশের জন্য বিপজ্জনক বস্তু মনে করেছিল যার কারণে তিনি আয়নাকে ফেরত দিয়ে দিয়েছিলেন।

আয়না এইভাবে বিভিন্ন মানুষ ও গোত্রের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে এবং যার পরে আজ ধনী থেকে দরিদ্র সকল মানুষ আয়না ব্যবহার করতে পারে। জানিয়ে দি যে আয়না যত সহজে ভেঙ্গে যায় তা বানাতে কিন্তু অনেক সময় লাগে। তাই পরের বার যখন আপনি আয়নায় আপনার মুখ দেখবেন তখন জাস্টাসকে একটা ধন্যবাদ অবশ্যই জানাবেন।