পাওয়া গেলো বিশালকায় সামুদ্রিক ড্রাগনের জীবাশ্ম, ১৮ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে ছিল এই জীব

এর আগে জুরাসিক যুগের অনেক জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছিল। এবার এমন একটি সামুদ্রিক ড্রাগনের জীবাশ্ম (Dragon fossils) পাওয়া গেছে ইংল্যান্ডের ইস্ট মিডল্যান্ডসে। যেটি আসলে ১৮০ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে উপস্থিত ছিল। আগে বিশ্বাস করা হতো এটি গল্পের রহস্যময় চরিত্র। এই প্রাণীর নাম ইচথায়োসর। প্রথমবারের , ব্রিটেনে এর অক্ষত জীবাশ্ম (Fossils) পাওয়া গেছিল।

জীবাশ্মটি গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে লিসেস্টারশায়ারের রুটল্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্টের সংরক্ষণ দলের নেতা জো ডেভিস প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন। সেই সময়, তিনি রুটল্যান্ড ওয়াটার ব্যাকের লেগুন দ্বীপ থেকে জল পরিষ্কার করছিলেন। তখন তিনি কিছু অদ্ভুত হাঙরের মতো আকৃতি দেখতে পেন। এরপর এর খননের কাজ শুরু হয়।

গত বছর আগস্ট-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খননের কাজ নিবিড়ভাবে করার হয়। এটি প্যালিওটনবায়োলজিস্টদের দ্বারা পরীক্ষা করা হয়েছিল। চলতি সপ্তাহে এর প্রকাশ্য ঘোষণা করা হয়েছে। এই জীবাশ্মটি প্রায় ৩৩ ফুট লম্বা। অর্থাৎ তার নাক থেকে লেজ পর্যন্ত। এর মাথার অংশ মাত্র ৬.৫ ফুট লম্বা। এই জীবাশ্মটির ওজন প্রায় এক টন। অর্থাৎ এই প্রাণীটির ওজন নিশ্চয়ই এর থেকে প্রায় তিনগুণ বেশি ছিল।

প্যালিওন্টোলজিস্ট এবং বিশ্বের বিখ্যাত ইচথায়োসর বিশেষজ্ঞ ড. ডিন লোম্যাক্স তার বিবৃতিতে বলেন, এটি সত্যিই একটি বড় আবিষ্কার। ব্রিটেনে এমন একটি প্রাচীন প্রাণীর জীবাশ্ম পাওয়া খুবই বিরল। এ থেকে বোঝা যায় যে এক সময় এখানে একটি সমুদ্র ছিল, যেখানে এই প্রাণী রাজত্ব করত। আমেরিকার ব্যাডল্যান্ডে টাইরানোসরাস রেক্সের মতো এটি একই ধরণের আবিষ্কার।

এই জীবাশ্মটি খুঁজে বের করা এবং তারপর এটিকে ক্ষতি না করে খনন করা সহজ কাজ ছিল না। এটি খননে সময় লেগেছিল প্রায় ১৪ দিন। এর নিরাপত্তার জন্য দিনরাত লোক মোতায়েন ছিল। ড. ডিন লোম্যাক্স এবং তার দল এটি সঠিকভাবে বের করেছে। শিগগিরই এ সংক্রান্ত একটি বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। ইচথিওসর প্রথম ১৯ শতকে ইংরেজ জীবাশ্মবিদ মেরি অ্যানিং আবিষ্কার করেছিলেন।

ধারণা করা হয় যে এই প্রাণীটি ২৫০ থেকে ৯০ মিলিয়ন বছর আগে সমুদ্রের প্রাণী ছিল। এই প্রাণী সমুদ্রে রাজত্ব করতেন। ব্রিটেনে পাওয়া ইচথিওসরের জীবাশ্ম ১৮.১৫ মিলিয়ন বছর থেকে ১৮.২ মিলিয়ন বছর পুরানো। আপনি এটিকে ডাইনোসর বললে অনেক জীবাশ্মবিদ ক্ষুব্ধ হতে পারেন। কারণ এটি সামুদ্রিক ড্রাগন নামেই পরিচিত ছিল। এটি ট্রায়াসিক, জুরাসিক এবং ক্রিটেসিয়াস যুগের। এটি ছিল সমুদ্রে পাওয়া টিকটিকির একটি পৃথক প্রজাতি, যা ডাইনোসর থেকে আলাদা।

যদিও তাদের চেহারা কিছুটা ডলফিন এবং তিমির মতো।তবে তাদের বিবর্তন ধীরে ধীরে চলতে থাকে। তারা দুর্দান্ত শিকারী হতে থাকে। তারা ডলফিনের মতো বুদ্ধিমান ছিল না। সামুদ্রিক টিকটিকি বিশেষজ্ঞ ডক্টর মার্ক ইভান্স বলেন, এই জীবাশ্মের আবিষ্কার ব্রিটেন এবং সমগ্র বিশ্বের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এতে রুটল্যান্ড ও এর আশেপাশের এলাকার মানুষের সম্মান বাড়বে। ডাঃ মার্ক ইভান্স বলেছেন যে যদি আমাদের গণনা এবং তথ্য সঠিক হয় তবে এটি টেমনোডন্টোসরাস ট্রাইগোনোডন প্রজাতির অন্তর্গত একটি ইচথায়োসর। কারণ এর আগে ইংল্যান্ড বা তার আশেপাশে এই প্রজাতির কোনো প্রাণী পাওয়া যায়নি।