সিনেমাকেও হার মানাবে এক কাশ্মীরি কন্যা ও ভারতীয় সেনা জওয়ান রঞ্জিত সিং এর এই প্রেমকাহিনী

প্রেম ভালোবাসার জন্য মানুষ কি না বা করতে পারে। ইন্টারনেটের দুনিয়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায় আজকাল এমন বহু প্রেমের কাহিনী শোনা যায় যা পুরো সমাজকে হতবাক করে তোলে। আজকে আমরা এমনই এক প্রেমের গল্প আপনাদের কাছে পরিবেশন করবো, যা আপনার মনকে বিগলিত করে দিতে পারি তবে এটা কোন সাধারণ মানুষ বা সাধারণ কোনো যুবক যুবতীর প্রেম নয় এটা এক সেনা জওয়ান এর প্রেম কাহিনী।

ঘটনা বেশ কিছু বছর আগের, যখন কাশ্মীরে এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে লাগাতার আন্দোলন, প্রতিবাদ বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছিল। আন্দোলন বিক্ষোভ এক সেনা জওয়ান এর উপর ধর্ষণ ও হত্যার ভুয়ো অভিযোগ উঠেছিল। যে সেনা জোয়ানের উপরে এই অভিযোগ উঠেছিল তার নাম ছিল রঞ্জিত সিং।

রঞ্জিত সিং একজন সাহসী ও বাহাদুর সেনা জওয়ান হিসেবে পরিচিত ছিলেন। 2000 সালে মাত্র 17 বছর বয়সে তিনি সেনাই যোগদান করেন এবং নিজের বীরত্বের পরিচয় দিয়ে চেনার বড় অফিসারদের মন জয় করে নেন রঞ্জিত সিং এর প্রশংসা করতে গিয়ে সেনা অফিসাররা আজও বলে থাকেন, “রঞ্জিত সিং ছিলেন এমন এক আর্মি জওয়ান যিনি কোনো মিশনে গেলে সেই মিশনে কোন আতঙ্কবাদী বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব ছিল।”

এবার আসা যাক মূল ঘটনায় কাশ্মীরে পোস্টিং থাকার সময় রঞ্জিত সিংহ কাশ্মীরি মেয়ের প্রেমে পড়েন আর সেখান থেকেই শুরু হয় তার জীবনের নতুন মোড়। প্রেমে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ইন্ডিয়ান আর্মির নিয়ম-শৃঙ্খলা, একই সাথে জাতি-ধর্ম ইত্যাদিও তাদের প্রেমের মাঝে কাটা হয়ে পড়ে।

রঞ্জিত সিং এর বন্ধুরা জানান নানা বাধা-বিপত্তির কারণে তার প্রেম খুবই অল্প ঘেরার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। মূলত চিঠিপত্র আদান প্রদান ফোন করা ইত্যাদির মধ্যে তাদের প্রেম নিবেদন। এমনকি তারা দুজন দেখা করলেও সেটাও বেশিরভাগ ছিল পাবলিক প্লেস। একদিন হঠাৎই তার কাছে পোস্টিং চেঞ্জের খবর আসে। এই খবর পাওয়ার পর পর রঞ্জিত সিং সিদ্ধান্ত নেন তিনি তার প্রেমিকার সাথে দেখা করে যাবেন। ঠিক হয় এক নিরিবিলি স্থানে পুরনো ভাঙ্গা বাড়িতে তারা দুজন দেখা করবেন আর সেখান থেকেই শুরু হয় নতুন কাহিনী।

আসলে তারা দেখা করার পর যখন বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসেন তখন তারা দেখেন বাড়ি ঘেরাও করে দাঁড়িয়ে আছে একদল উগ্র জনতার ভিড়। মূলত কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী মানসিকতার লোকজন পরিকল্পনা করে এই বাড়ি ঘেরাও করেছিল। অগ্র ফিড তাদেরকে দেখে চিত্কার করতে শুরু করে এবং অভিযোগ তোলে যে রঞ্জিত সিংহ নাকি ওই মেয়েকে ধর্ষণ করেছেন দুজনে মিলে জনতার ভিড় কে বোঝানোর চেষ্টা করল তারা কোনমতেই মানতে রাজি হয় না উল্টে তারা উড়াল সহ বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাদের উপর হামলা করতে শুরু করে দেয় একজন একেবারে যেভাবে ঝাপিয়ে পড়ে। মেজর রঞ্জিত সিংহ নিজেকে বাঁচানোর জন্য লোকটির উপর গুলি চালান যার ফলে ভীড় আরও উগ্র হয়ে পড়ে তারা সকলে মিলে হামলা করে বসে।

মেজর রঞ্জিত সিংহ পরিস্থিতি দেখে বুঝতে পারেন যে তাকে এবার কোন কঠিন পদক্ষেপ নিতেই হবে। মেজর রঞ্জিত সিং তৎক্ষণাৎ নিজের পিস্তল বের করে একবার নিজের প্রেমিকার দিকে তাকান এবং তারপর পিস্তল নিজের মাথায় ঠেকান। তারপর উঠে এক গুলির আওয়াজ, ব্যাস সব শেষ। এখানে দেখার বিষয় মেজর রঞ্জিত সিং চাইলে গ্রেনেড বের করে এক ধামাকায় পুরো ভীড়কে উড়িয়ে দিতে পারতেন। তবে তিনি আগেই নিজের প্রাণ রক্ষার জন্য আগেই গুলি চালিয়েছিলেন। আর তিনি কোন প্রাণ নিতে চাননি আর এতগুলো মানুষের প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে তিনি এই কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন আসলে ভারতীয় সেনার রক্তে রঞ্জিত সিং এই সিদ্ধান্ত নেন।

মূলত ভারতীয় সেনার যাতে কোনরকম সম্মানে আঘাত না পড়ে সেদিকে খেয়াল রেখে মেজর রঞ্জিত সিং নিজেকে বলিদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পরবর্তীকালে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কাশ্মীরের বহু জায়গায় বিদ্রোহ বিক্ষোভ দেখা যায়। মামলা আদালতে গেলে মেজর রণজিৎ সিংহের প্রেমিকা সবকিছু স্পষ্ট খুলে বলেন এবং মেজর রঞ্জিত সিং এর থেকেও বহু তথ্য পাওয়া যায়। তারপর পুরো ঘটনার পর্দাফাঁস হয়। এরপরে থেমে যায় বিদ্রোহ, এদিকে ভারতীয় সেনা ওই কাশ্মীরি কন্যার সমস্ত দায়িত্ব গ্রহণ করে।

পরবর্তীকালে ভারতীয় সেনা মেজর রঞ্জিত সিং কে কিলড ইন একশন উপাধিতে ভূষিত করেন। কেউ আত্মহত্যা করলে সেটাকে কাপুরুষোচিত কাজ বলে গণ্য করা হয়। তবে যখন কোন মানুষ অনেক মানুষকে বাঁচানোর জন্য নিজের প্রাণ ত্যাগ করেন সেটাকে বীরত্বের বলা হয়। আর এই বীরত্বের পরিচয় দিয়েই নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে ভারতীয়দের মনে চিরকালের জন্য অমর হয়ে গেছেন মেজর রঞ্জিত সিং।