Business Idea: জাম চাষ করে কোটিপতি 12 ফেল রাজেশ

জুন-জুলাই মৌরসুম জামুন চাষীদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ প্রমাণিত হয়। বাজারে জামুনের বেশ চাহিদা রয়েছে তাই এমতাবস্থায় জামুনের নতুন বাগান স্থাপনের পরিকল্পনাকারী কৃষকরা জুন থেকে আগস্টের মধ্যে জাম চাষ করতে পারেন। কৃষিবিষয়ক বিশেষজ্ঞদের মতে, জামুন চাষ করে কৃষকরা ভালো আয় করতে পারবে। রাজস্থানের উদয়পুরে বসবাসকারী রাজেশ ওঝা জামুন প্রসেসিং করে অনেক পণ্য তৈরি করেছেন। সাফল্য দেখেই অনুমান করা যায় যে এখন কোটি টাকার ব্যবসা করে নিয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি।

জামুন দ্বারা মহিলাদের উপকার

রাজেশ ওঝা দাবি করেছেন যে তিনি একটি কেন্দ্র ও ৭৫ জন মহিলা নিয়ে জামুন প্রসেসিংয়ের কাজ শুরু করেছিলেন। আর আজ ১০০০ জনের বেশি আদিবাসী মহিলার কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। ১৮টি গ্রামের ১২০০ নারী ছয়টি কেন্দ্রে কাজ করছেন। মানুষের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে অনেক ধরণের পণ্য বাজারে লঞ্চ করা হয়েছে। রাজেশ ওঝা যিনি ক্লাস ১২ ড্রপআউট ছিলেন তিনি আজ ২০ কোটি টাকার কোম্পানির জোভাকি এবং ট্রাইভালবেদার সিইও।

Jamun

বাজারে জামুনের দাম

জানিয়ে দি জামুন ফল ঔষধির গুণে ভরপুর হয়। আর গাঢ় বেগুনি রঙের জামুন গুলিকে ইংরেজিতে ব্ল্যাকবেরি বলা হয়। বাজারে জামুনের চাহিদা বেশি হওয়ায় জামুন বেশ ভালো দামে বাজারে বিক্রি হয়। তাই কৃষি বিজ্ঞানীরা কৃষকদের জামুন চাষ করার পরামর্শ দিচ্ছে। বাজারে জামুনের দাম প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ প্রতি কেজি। সাধারণত প্রতি কেজি ৮০-১০০ টাকায় পাওয়া ফলের দাম নির্ধারণ করা হয় সেই ফলের গুণমানের উপর ভিত্তি করে। জামুন ফলও স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো বলে বিবেচিত হয়। জামুন প্রকৃতিতে অম্লীয়। এই কারণে, এর স্বাদ কিছুটা তেঁতুল জাতীয়।

Jamun

শরীরের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী ফল

সাধারণত জামুন গাছের উচ্চতা ২০ থেকে ২৫ ফুট হয়। তবে ভালো করে বিকশিত হওয়া গাছগুলির উচ্চতা অনেক সময় আরো বেশি হয়। এছাড়া জানিয়ে দি ডায়াবেটিস, রক্তস্বল্পতা এবং পেট সংক্রান্ত রোগে আক্রান্তদের জন্য জামুন ফল খাওয়া খুব উপকারী প্রমান হয়। দাঁতের সমস্যার জন্যও জামুন ফল খুব উপকারী হয়।

Jamun

এই ধরণের মাটিতে জামুন চাষ করা শ্রেয়

জামুন চাষ করার আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল জামুন চাষ কিভাবে করবেন? কৃষি বিজ্ঞানীরা মনে করেন, জামুনের বাগানের জন্য দোআঁশ মাটি উত্তম বিকল্প। উর্বর জমিতে জামুন চাষের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন জমিতে জল না জমে থাকে। সাধারণত শক্ত ও বালুকাময় মাটিতে জামুন চাষ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। জামুন গাছ গরম ও বৃষ্টি দ্বারা প্রভাবিত হয় না।

Jamun

বর্ষাকালে পাঁকে জামুন ফল কিন্তু…

শীতল অঞ্চল ছাড়া অন্যান্য এলাকায় জামুনের সফল উৎপাদন করা সম্ভব হয়। শীতকালে তুষারপাতের কারণে জামুনের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে আবার অতিরিক্ত সূর্যালোকের কারণেও জামুল ফল ক্ষতিগ্রস্থ হয়। জামুন ফল বর্ষাকালে সহজেই পেকে যায়। তবে ফুল ফোটার পর বৃষ্টি জামুনের ফলের ক্ষতি করে।

Jamun

রোপণের পরে জামুনের যত্ন

জামুন লাগানোর আগে জমিকে আগে ভালো করে লাঙল দিয়ে কাদিয়ে নিতে হবে। এরপর চারা লাগানোর সময় দুটি চারার মধ্যে ৫-৭ মিটার দূরত্ব রাখতে হবে। রোপণের সময় মাটিতে ১০-১৫ কেজি পুরানো পচা সার যোগ করলে গাছের বিকাশ ভাল হয়। মাটি পরীক্ষার উপর নির্ভর করে অন্যান্য সারও ব্যবহার করা যেতে পারে। চারা রোপণের পর জামুন গাছে NPK রাসায়নিক স্প্রে করতে হবে। বছরে তিনবার এই স্প্রে করতে হবে। পরিপক্ক জামুন গাছে বছরে চারবার স্প্রে করুন। জামনুকে এর রোপণ এর বীজ ও কলম থেকে নার্সারিতে তৈরি বীজ দ্বারাও করা হয়। বর্ষায় জামুন গাছ লাগানো হয়।

Jamun

সেচ পদ্ধতি

শুরুতে জামুন গাছের জন্য বেশি সেচের প্রয়োজন হয়। চারা রোপণের পরপরই সেচের কাজ করা হয়। গ্রীষ্মকালে জামুন গাছে সপ্তাহে একবার সেচ করা হয় আর শীতকালে ১৫ দিনে একবার সেচ করা হয়। বড় জামুন গাছে বছরে ৫-৬ বার সেচ করা হয়। জামুন গাছে ফল ধরতে প্রায় পাঁচ থেকে আট বছর সময় লাগে।

Jamun

জামুন ফলের শনাক্তকরণ

জামুন গাছে ফুল ফোটার দেড় মাস পর ফল ফুটতে শুরু করে। এই ফল গুলি বেগুনি বা কালো রঙের হয়। আর এই সময় ফল গুলিকে পারা শুরু করা হয়। জামুন ফলকে স্টোর করে রাখা হয়না।প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতিদিন গাছ থেকে ফল পারা হয়।ফল তোলার পর ফলগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করে জাল থাকা ঝুড়িতে রাখা হয়। এটি জামুন সর্টিংয়ের সময় হয়।অর্থাৎ কোনো ফল নষ্ট হয়ে গেলে তা বের করে ফেলে দেওয়া হয়।

Jamun

৬ থেকে ৮ লাখ পর্যন্ত আয়

একটি পূর্ণ বয়স্ক জামুন গাছ থেকে ৮০ থেকে ৯০ কেজি জাম উৎপাদন হয়। ১ একর জমিতে প্রায় ১০০ টি জামুন গাছ লাগানো যায়। আর এর ভিত্তিতে এক সিজানে ১০০০০ কেজি জামুন উৎপাদন করা সম্ভব। এককালীন উৎপাদনের পর ছয় থেকে আট লাখ টাকা আয় করা যায়।

Income

৫০ বছর পর্যন্ত ফল উৎপাদন সম্ভব একটি গাছ থেকে

বড় জামুন গাছ গুলি প্রায় ৫০-৬০ বছর পর্যন্ত ফল দেয়। জামুন ব্ল্যাকবেরি ছাড়াও রাজমান, জামালি এবং কালা জামুন নামেও পরিচিত। কাঁচা ফল খাওয়া ছাড়াও, জেলি, সিরাপ, ওয়াইন এবং জ্যামের মতো জিনিসগুলিও জামুন দিয়েতৈরি করা হয়। রাজস্থানের উদয়পুরের এন্ট্রপ্রোনিয়র রাজেশ ওঝা এবং প্রায় ১০০০ জন আদিবাসী মহিলা জামুন চাষ করে ভাল পারিমানে আয় করছেন ৷Jamun

 

জৈব আবর্জনার ব্যবহার

রাজেশ জানিয়েছেন যে তিনি জামুন প্রসেসিং করে জামুন স্ট্রিপস, জামুন গ্রিন টি, জামুন বীজের পাউডার এবং জামুন ফ্লেক্স তৈরি করেছেন। তিনি বলেছিলেন যে জোওয়াকিতে আদিবাসী মহিলাদের সাথে কাজ করার তার মডেল প্রকৃতি সংরক্ষণের উপর ভিত্তি করে। রাজেশের মতে, কিছুই নষ্ট করা উচিত নয়, তাই ভার্মিকম্পোস্ট তৈরিতে খোসা/জৈব বর্জ্য ব্যবহার করা হয়।

Jamun

৮ বছর গাছ লাগানো টার্গেট

রাজেশের আরো জানিয়েছে ফলের বীজের একটি অংশ আবার গাছ লাগানোর কাজে ব্যবহার করা হয়। তিনি বলেন, আগে আদিবাসী সমাজের লোকেরা পোড়ানোর জন্য গাছ কাটত। এখন জোয়াকির কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর গাছও বাঁচানো হচ্ছে, গাছ লাগানোও হচ্ছে। এ পর্যন্ত পাঁচ লাখ চারা রোপণ করা হয়েছে এবং এ বছর আট লাখ গাছ লাগানোর লক্ষ্য রয়েছে।

Jamun

কেমিক্যাল মুক্ত উৎপাদন

জামুন ছাড়াও কাস্টার্ড আপেল বা সীতা ফলের পাল্প প্রসেসিংও করা হয়। সাধারণত ক্যাটারার, আইসক্রিম এবং মিষ্টি তৈরিকারী ব্যবসায়ীরা রাজেশের কাছ থেকে তাজা ফলের পাল্প কেনে। রাজেশ প্লাপের তৈরির প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে বলেন যে ফলকে বাগান ও গাছ থেকে হাত দিয়ে বেছে নির্বাচন করে তোলা হয়। এগুলি বিশ্বস্তরীয় পরিচ্ছন্ন পরিবেশে প্রসেসিং করা হয় এবং কোনো রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না।

Jamun

সরকারি সংস্থানগুলি থেকে পাওয়া যাচ্ছে সমর্থন

কঠোর পরিশ্রম ও ইনোভেশনের প্রাপ্য সম্মানের প্রমান হলো চৌধুরী চরণ সিং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এগ্রিকালচারাল মার্কেটিং (CCS NIAM- Center for innovation), কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের অধীনে চালানো এগ্রিপ্রেনিউরশিপ স্কিম- RKVY-RAFTAAR এবং IIM ক্যালকাটা ইনোভেশন পার্কের মতো মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে আসা সহায়তা। সারা বিশ্বে ১৯টি কোম্পানিকে দেওয়া DBS ফাউন্ডেশন পুরস্কারের অধীনে রাজেশের জোওয়াকিকে সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ অ্যাওয়ার্ড ২০২১ দেওয়া হয়েছিল।

Jamun

১৮০০০ আদিবাসী পরিবার পেল লাভ

জোওয়াকি বছরে ৫ লাখ কেজি বন্য ফল ও সবজি প্রসেসিং করা ছাড়াও বছরে ১২৫ মেট্রিক টন পণ্য বিক্রি করার পরিকল্পনা করেছে। এটি সারা বছর ১৮০০০ উপজাতি পরিবারকে স্থায়ী জীবিকা প্রদান করবে। বনের কাটাইতে কমতি হলে তবে গিয়ে ১৫ কোটি গাছ রক্ষা হবে।