জ্যাকু বার্ড কফি: পাখির মল থেকে তৈরি হয় বিশ্বের সবচেয়ে দামি কফি, ৭৩ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয় প্রতি কেজি

কফি (Coffee) খেতে পছন্দ করেন না এরকম মানুষ খুব কমই আছেন। একিসঙ্গে কফি (Coffee) হল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিক্রিত পণ্য। তো আপনিও যদি একজন কফি প্রেমি হয়ে থাকেন তাহলে আপনার ‘জ্যাকু বার্ড কফি'(Jacu Bird Coffee) সমন্ধে অবশ্যই জেনে রাখা দরকার যা বিশ্বের বিরলতম এবং সবচেয়ে দামী একটি কফি হিসাবে পরিচিত। তার আগে বলে দিই, সাধারণত বাজারে যে গুঁড়ো কফি পাওয়া যায় তা আসলে “কফি বীজ” নামে পরিচিত এক প্রকার বীজের গুঁড়ো। আর এই বীজ ‘কফি চেরি’ নামক এক ধরনের ফলের বীজ। মূলত স্বাদ-গন্ধ এবং মান অনুযায়ী কফির দামের পার্থক্য হয়ে থাকে। সেরকমই বিশ্বের সবচেয়ে দামি কফির তালিকায় রয়েছে ‘জ্যাকু বার্ড কফি’। এই কফি জ্যাকু পাখির বিষ্ঠা(Jacu bird poop) থেকে তৈরি হয়। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। এটি জ্যাকু পাখির পরিপাকতন্ত্র থেকে নির্গত এবং সংগৃহীত কফি চেরি থেকেই তৈরি করা হয়ে থাকে।

jacu bird coffee

জ্যাকু বার্ড(Jacu Bird) কফি বিশ্বের দামী কফি হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে এবং এর দাম প্রতি কেজি, এক হাজার ডলার অর্থাৎ ভারতীয় টাকায় প্রায় ৭৯ হাজার টাকা হয়। জানিয়ে দিই, এই কফি এটি ‘ক্যামোসিম এস্টেট'(Camocim Estate)নামক কফি বাগানে প্রস্তুত করা হয়ে থাকে যা ব্রাজিলের সবচেয়ে ছোট কফি বাগান। এই কফি বাগানের মালিক হেনরিক স্লোপার ডি আরাউজো (Henrique Sloper de Araujo) চলতি দশকের গোড়ার দিকে এই কফির প্রচলন শুরু করেছিলেন। বর্তমানে তার কোম্পানির বার্ষিক আয় ধারণারও বাইরে। তবে এই বিশেষ কফি তৈরীর পিছনে একটি গল্প রয়েছে।

জ্যাকু(Jacu) হল তিতির শ্রেণীর একটি পাখি। এই বিশেষ পাখিগুলি বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় রয়েছে এবং এদের ব্রাজিলের আইন দ্বারা সুরক্ষিত রাখা হয়েছে। অতীতে বন্য জ্যাকু উৎপন্ন কফি ফসলের অধিকাংশ খেয়ে চলে যেত। যার ফলে বিশাল পরিমান লস হয়ে যেত কফি মালিকদের। তেমনি হেনরিক স্লোপারই-এর বাগানেও এই পাখি উৎপাত শুরু করে। ফলে তিনি একপ্রকার অতিষ্ট হয়ে উঠেছিলেন। তবে বছরের পর বছর ধরে, হেনরিক স্লোপারই এই পাখিদের লক্ষ্য করেছিলেন এবং তিনি এদের একটি বিশেষত্ব দেখতে পান। তিনি দেখেন খামারে শুধুমাত্র পাকা এবং উৎকৃষ্ট কফি চেরিগুলিই ছিল জ্যাকু পাখিদের প্ৰিয় খাবার।

এমন পরিস্থিতিতে হেনরিককে যখন হতাশা ঘিরে ধরেছিল। ঠিক তখনই তার মাথায় একটা আইডিয়া চলে আসে। আসলে হেনরিক একবার ইন্দোনেশিয়ায় (Indonesian) গিয়েছিলেন এবং সেখানকার স্থানীয় কফি, কোপি(Kopi)-এর সাথে তার পরিচয় হয়। যা ইন্দোনেশিয়ান সিভেট (civet)-এর মল থেকে থেকে সংগ্রহ করা কফি বিন দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে। একইসাথে বিশ্বের সবচেয়ে দামি কফি ছিল কোপি লুওয়াক (kopi luwak)। এরপরই হেনরিককের মনে হয়েছিল ইন্দোনেশিয়ানরা যদি সিভেটস এর মল থেকে কফি চেরি সংগ্রহ করতে পারে তবে সে জ্যাকু পাখির মল থেকেও একই কাজ করতে পারে।

jacu bird coffee

আর যেমন ভাবা তেমনি কাজ। এরপরে সে বাগানের শ্রমিকদের দিয়ে জ্যাকু পাখির মল সংগ্রহ করেন এবং তা দিয়ে কফি প্রস্তুত করেন। যা পরে গুপ্তধন প্রমানিত হয়। তবে,যাইহোক, জ্যাকু পাখির মল থেকে চেরি সংগ্রহ করা ছিল একটি অত্যন্ত শ্রমসাধ্য প্রক্রিয়া। যা জ্যাকু বার্ড কফিকে অন্যান্য কফি জাতের তুলনায় যথেষ্ট ব্যয়বহুল করে তোলে, তবে শুধু তাই নয় জাকু পাখি আসলে সবচেয়ে পাকা চেরিগুলোই খায় এবং এদের পরিপাকতন্ত্রে থাকা এনজাইম এগুলোকে আরও উৎকৃষ্ট করে তোলে। এই প্রসঙ্গে হেনরিক একবার জানিয়েছিলেন “আমি দেখেছি যে জাকু পাখিটি শুধুমাত্র সবচেয়ে পাকা বেরি বেছে নিয়েছে এবং অর্ধেকেরও বেশি গুচ্ছ রেখে গেছে, যেগুলো মানুষের চোখে নিখুঁত দেখায়।”