ভারতের মধ্যেই ছিল এমন এক ঠগ ব্যক্তি যে কিনা তাজমহল সহ বিক্রি করে দিয়েছিল রাষ্ট্রপতি সংসদ ভবনও

আজ আমরা আমাদের আর্টিকেলে এমন এক প্রতারকের বিষয় আলোচনা করতে চলেছি যিনি প্রতারণার সমস্ত সীমা পার করে দিয়েছিলেন। ইনি ভারতের সংসদ ভবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি ভবন ও তাজমহলকে অনেকবার বিভিন্ন লোকের কাছে বেচে দিয়েছেন এবং তার বদলে মোটা টাকা তাদের থেকে লুটে নিয়েছেন। এই ব্যক্তি হলেন আর কেউ না মিস্টার নটওয়ারলাল। এমনকি ইনি বেশ্যাদের পর্যন্ত ছাড়েননি। তিনি রোজ বেশ্যাদের কাছে যেতেন এবং বিষাক্ত মদ তাদের খাইয়ে তাদের টাকা চুরি করে নিতেন।

ম্যাট্রিক পরীক্ষায় করেছিলেন ফেল

মিথিলেশ কুমার ওরফে মিস্টার নটওয়ারলাল ১৯১২ সালে বিহারের সিওয়ান জেলার বাংড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতার নাম ছিল রঘুনাথ প্রসাদ। নটওয়ারলাল জ্যেষ্ঠ পুত্র ছিলেন। নটওয়ারলাল পড়াশোনায় সেরম ভালো ছিলেন না। পড়ালেখার চেয়ে তিনি ফুটবল ও দাবা খেলায় বেশি ভালো ছিলেন। একটি রিপোর্ট থেকে জানা গেছে যে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় ফেল করার পর নটওয়ারলালের বাবা তাকে অনেক মারধোর করেছিল যার পর তিনি গ্রাম ছেড়ে কলকাতায় পালিয়ে গেছিলেন।

Mr. Natwarlal

 

এইভাবে শুরু হয়েছিল তার প্রতারণার কাজ

কলকাতায় নটওয়ারলালকে শেঠ কেশবরম তার ছেলেকে পড়ানোর কাজের জন্য নিয়োগ করেছিলে কয়েকদিন পর নটওয়ারলাল শেঠের কাছে তার গ্র্যাজুয়েশনের পড়াশোনা করার জন্য টাকা ধার চাইলে শেঠ সেই টাকা দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিল। শেঠের প্রত্যাখ্যানের কারণে নটওয়ারলাল এতটাই রেগে গেছিল যে সে তুলার বেল কেনার নামে সাড়ে চার লাখ টাকার প্রতারণা করেন কেশবরমের সাথে। আর এভাবেই শুরু হয়েছিল তার প্রতারণা করার যাত্রার।

তাজমহল থেকে রাষ্ট্রপতি-সংসদ ভবনকে লোকের কাছে ঠকিয়ে বেঁচে দেওয়ার পর মোটা টাকা লুটে নিয়েছিলেন নটওয়ারলাল

মিস্টার নটওয়ারলাল জালিয়াতিতে এতটাই তুখর ছিলেন যে তিনি তাজমহল তিনবার, রাষ্ট্রপতি ভবন একবার ও সংসদ ভবনকে একবার বিক্রি করে লোকেদের কাছ থেকে টাকা লুঠ করেছিলেন। নটওয়ারলাল রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদের জাল সাইন করে সংসদ বিক্রি করে দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর নাম ব্যবহার করেও করেছিলেন প্রতারণা

দিল্লিতে একটি বড় ঘড়ির দোকান ছিল যেখানে নটওয়ারলাল প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী নারায়ণ দত্ত তিওয়ারির ব্যক্তিগত স্টাফ সেজে তিনি গেছিলেন। তারপর দোকানদারকে তিনি বলেছিলেন যে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সময় ভালো যাচ্ছে না। এই কারণে তিনি দলের সকল সিনিয়র লোকদের সমর্থনের জন্য দিল্লিতে ডেকেছেন। সমর্থনের জন্য আয়োজিত এই মিটিংয়ে তিনি সবাইকে একটি করে ঘড়ি উপহার দিতে চান। তাই তার ৯৩ টি ঘড়ি লাগবে। । পরের দিন নটওয়ারলাল ঘড়ি গুলি আনতে দোকানে গেছিলেন। দোকানদারকে ঘড়িগুলি প্যাক করতে বলেন এবং সেই দোকানের কর্মচারীকে সঙ্গে নিয়ে নর্থ ব্লকে যান যেখানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অবস্থিত। তারপর সেখানে তিনি কর্মচারী পেমেন্ট হিসেবে ৩২৮২৯ টাকার একটি ব্যাঙ্ক ড্রাফট দিয়েছিলেন। ২ দিন পর যখন দোকানদার ড্রাফ্টটি ব্যাংকের জমা দেয় তখন ব্যাঙ্ক জানায় ড্রাফটটি জাল।

Mr. Natwarlal

কোর্ট দিয়েছিল ১০০ বছরের কারাদণ্ড

৬০ ও ৭০ এর দশকে ৮ টি রাজ্যে নটওয়ারলালের বিরুদ্ধে ১০০ টিরও বেশি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছিল। পুলিশ তাকে ৯ বার গ্রেপ্তার করেছিল কিন্তু প্রতিবার সে পুলিশদের ফাঁকি দিয়ে জেল থেকে বেরিয়ে যেত। দারভাঙ্গা আদালত ১৭ বছরের, পাটনা আদালত ৫ বছরের, সিংভূমের আদালত ১৯ বছরের কারাদণ্ডের শাস্তি দিয়েছিল নটওয়ারলালকে। ২০০৯ সালে নটওয়ারলালের উকিল তার বিরুদ্ধে নথিভুক্ত ১০০টি মামলা বাতিল করার আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদনে বলা হয়েছিল যে ২০০৯ সালের ২৫ জুলাই নটওয়ারলালের মৃত্যু হয়ে গেছিল।