সাদা সোনা উৎপাদনকারী গাছ, খারাপ জমিতে চাষ করে মিলবে ৪০ লাখ টাকা অবধি মুনাফা

আজকাল কৃষকরা ঐতিহাসিক কৃষিকাজ করার পাশাপাশি জমিতে গাছও লাগাচ্ছে। এই গাছগুলি অনেকটা আমানতের হয় যা খুব অল্প যত্নেই বেড়ে ওঠে। আর যখন এই গাছগুলি কাঠ দিতে পারার মতো বড় হয়ে যায় তখন কৃষকরা এই গাছ গুলির কাঠ বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা আয় করতে পারে। এটি সেই সব কৃষকদের জন্য ভালো বিজনেস আইডিয়া যারা সাধারণ বা ঐতিহাসিক কৃষিকাজ করে বেশি টাকা আয় করতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে গাছ লাগিয়ে সবজির মিশ্রিত চাষ করা লাভজনক চুক্তি প্রমাণিত হয়। যারা জমিতে গাছ লাগায় তাদের গাছ গুলি বিভিন্ন প্রকারের হয়। কোনো কোনো গাছ ফল দেয় আবার কোনো কোনো গাছ দিয়ে শুধুমাত্র ফল পাওয়া যায়। চন্দন জাতীয় গাছ গুলি সোনা-হীরার থেকে কোনো অংশে কম হয় না। কিন্তু এরো একধরনের গাছ রয়েছে যার থেকে পাওয়া পদার্থের ডিমান্ড রয়েছে অনেক কিন্তু সরবরাহ করা সম্ভব হয় না বেশি। আমরা কথা বলছি রবার (Rubber farming) গাছের। দেশের প্রচুর জায়গায় আজকাল রবারের গাছ লাগিয়ে চাষ করা হয়। আসুন এই বিষয় বিস্তারিত জেনেনি।

Rubber farming

ভারতের কেরেলা রাজ্যকে সবচেয়ে বড় রবার (Rubber farming)  উৎপাদন এলাকা মানা হয়। আর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। এখান থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রবার রপ্তানি করা হয়। রবার বোর্ড অনুযায়ী ত্রিপুরায় ৮৯২৬৪ হেক্টর, আসামে ৫৮০০০ হেক্টর, মেঘালয়ে ১৭০০০ হেক্টর, নাগাল্যান্ডে ১৫০০০ হেক্টর, মণিপুরে ৪২০০ হেক্টর, মিজোরামে ৪০৭০ হেক্টর,অরুণাচল প্রদেশে ৫৮২০ হেক্টর ভূমিতে প্রাকৃতিক রবার চাষ করা হয়। এই রাজ্যগুলি রাবার উৎপাদনে এগিয়ে রয়েছে। এখান থেকে ন্যাচারাল রাবার রপ্তানি হয় জার্মানি, ব্রাজিল, আমেরিকা, ইতালি, তুরস্ক, বেলজিয়াম, চীন, মিশর, নেদারল্যান্ডস, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, সুইডেন, নেপাল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে। এক গবেষণায় বলা হয়েছ, ২০২০ সালে ভারত থেকে ১২ হাজার মেট্রিক টনের বেশি প্রাকৃতিক রাবার রপ্তানি হয়েছে। এবার দেশের প্রধান রাবার উৎপাদনকারীদের তালিকায় ওড়িশার নামও যুক্ত হতে চলেছে।

money

সম্প্রতি ওড়িশার ময়ূরভঞ্জের রবার চাষের জন্য বেশ আলোচনার বিষয় হয়ে রয়েছে। এখানকার কৃষকরা এখন ঐতিহাসিক চাষাবাদ ছেড়ে দিয়ে রবার  চাষ করে দুর্দান্ত পরিমানে আয় করছে। রিপোর্ট থেকে জানা গেছে ময়ূরভঞ্জে রবার চাষ করে সবাই ভালো পরিমানে মুনাফা অর্জন করেছে। এই ফলে রবার উৎপাদনকারী কৃষক ও আদিবাদীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়ন্ত মুনাফা দেখে সবাই এখন রবার চাষ করতে চাইছে। এখানকার বৃষ্টি নির্ভর পাহাড় এবং আর্দ্র জলবায়ু কৃষক ও আদিবাসীদের রাবার উৎপাদনে সাহায্য করে। ময়ূরভঞ্জে প্রায় ৪৫০০ একর জমিতে রাবার চাষ বিস্তৃত, যা ৬০০০-এরও বেশি কৃষক-আদিবাসীর জীবিকা নির্বাহের উৎস। এই লোকেরা শুধু রাবার গাছ থেকে ল্যাটেক্স অর্থাৎ রক্তক্ষির সংগ্রহ করে না, রাবার প্রক্রিয়াজাত করে রাবার শিট এবং ব্যান্ডও তৈরি করে।

Rubber farming

ওড়িশার ময়ূরভঞ্জে অবস্থিত সামখুন্তা, বাদসাহি, খুন্তা, কাপ্তিপাদা, শরৎ, করঞ্জিয়া, যশিপুর, বিসোই এবং মারাদায় রাবার বাগান করা হচ্ছে। প্রতিটি গাছ থেকে প্রায় ৬০০ মিলিমিটার লেটেক্স নির্গত হয়। আর এইভাবেই প্রতিটি গাছ বছরে ৫০-৬০ লিটার লেটেক্স দেয়। যেখানে সাধারণ চাষাবাদে খরচের কারণে ভালো পরিমানে মুনাফা অর্জন করা কঠিন হয়ে যায় সেখানে রবার চাষে জল-সার ছাড়াও বছরে ১-৩ লাখ পর্যন্ত আয় করা যায়। তবে এই চাষে আয় এর উপর নির্ভর করে যে আপনি কত বড় জায়গায় চাষ করছেন তার উপর। প্রথম প্রথম যখন রবার গাছ যখন রোপণ করা হয় তখন গাছের বিশেষ খেয়াল রাখতে হয়। কিন্তু একবার উৎপাদন শুরু হয়ে গেলে টানা ৪০ বছর রবার গাছ থেকে লেটেক্সের উৎপাদন চলতে থাকে। শুধু তাই নয় তখন এই রবার গাছ রবার বা লেটেক্স দেওয়া বন্ধ করে দেয় তখন এই গাছের কাঠ বাজারে বিক্রি করেও ভালো পরিমানে টাকা অর্জন করা যায়। জানিয়ে দি যে ময়ূরভঞ্জের কৃষকরা ওড়িশা গ্রামীণ উন্নয়ন ও বিপণন সমিতি (ORMAS) থেকে রাবার পণ্য বিক্রিতে সহায়তা পাচ্ছেন।