চাষের জমি-বাড়ি বন্ধক রেখে ছেলেকে পড়িয়েছিলেন বাবা, ৩০ বছর বয়সে IAS অফিসার হয়ে ইতিহাস গড়ল সন্তান
কথায় রয়েছে যে ‘কষ্ট করলেই কেষ্ট পাওয়া যায়’। অর্থাৎ যদি কোনো জিনিসকে অর্জন করার সতী সত্যি ইচ্ছা থাকে এবং সেই জিনিসকে অর্জন করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করা হয় তবে সফলতা অবশ্যই অর্জন করা সম্ভব হবে। আর এই উক্তিটিকে প্রমান করে দিয়েছে মহারাষ্ট্রের নান্দের জেলার মাধব গীতে (Madhav gite)। ইনি ২০১৯ সালে ২১০ র্যাঙ্ক নিয়ে upsc (IAS OFFICER)পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করে দেখিয়েছেন।
জানিয়ে দি মাধবের জন্ম হয়েছিল এক গরিব কৃষক পরিবারে। মাধবও তার ভাই-বোনদের সাথে মিলে তার পরিবারকে কৃষিকাজে সাহায্য করতো। মাধবের (madhav gite) পরিবারের আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে পড়াশোনা সম্পূর্ণ করার জন্য মাধবের পরিবার নিজেদের বাড়ি পর্যন্ত বিক্রি করে দিতে হয়েছিল। এছাড়া আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে সংসার চালানোর জন্য মাধব ও তার পরিবার অন্যের জমিতেও চাষাবাদে সাহায্য করতেন।
এমনকি স্কুলের ফিস দেওয়ার মতো টাকাও ছিল না মাধব ও তার পরিবারের কাছে। মাধবের বয়স যখন দশ বছর তখন তার মায়ের ক্যান্সার ধরা পরেছিল। চিকিৎসা করা সত্ত্বেও তার মা সুস্থ হয়নি তখন এবং যখন মাধবের বয়স ১১ বছর ছিল তখন মা হারা হয়েছিল মাধব। আর্থিক সংকটের সঙ্গে লড়াই করা একটি পরিবারের জন্য এটি একটি বিশাল ক্ষতি ছিল। মাধবের মা মারা যাওয়ার পর যেন তাদের পরিবারের অবস্থার আরো বেশি অবনতি ঘটেছিল।
মাধবের পড়াশোনা পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছিল এবং তাকে কৃষিকাজ করা শুরু করতে হয়েছিল। কিছু সময় পর মাধব একটি স্কুল থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার ফর্ম ভরে এবং পরীক্ষা দিয়ে নিজের স্কুল জীবনের পড়াশোনা কোনোরকমে সম্পূর্ন করেছিল। মাধবকে প্রতিদিন অন্তত ২২ কিমি সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেতে হতো। আর তিনি দ্বাদশ শ্রেণীতে তিনি ৫৬ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করেছিলেন।
এরপর তিনি এমন একটি কোর্স করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যা তাকে শীঘ্রই একটি চাকরি দেবে কারণ তার কলেজে পড়ার জন্য অর্থ ছিল না।এরপর মাধব এক জায়গা থেকে জানতে পেরেছিলেন যে পাশের কলেজে খুব কম তাকে ডিপ্লোমা কোর্স করানো হচ্ছে। তারপর তিনি কোনোরকমে টাকা জোগাড় করে ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হয়ে গেছিলেন এবং কোর্সটি কমপ্লিট করেছিলেন।
ডিপ্লোমা কমপ্লিট করার পর মাধবের ইঞ্জিনিয়ারিং করার ইচ্ছা ছিল কিন্তু তার জন্য তার কাছে টাকা ছিল না। কিন্তু মাধবের পরিবার তার পড়াশোনার ইচ্ছা পূরণ করার জন্য তাদের কৃষি জমিকে বন্দক দিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ফিস জমা দিয়েছিল। আর শেষ বছরের ফিস জমা দিতে মাধবের পরিবারকে তাদে জমির সাথে সাথে বাড়িকেও বন্ধক দিয়ে দিয়ে হয়েছিল ও ধার-দেনাও প্রচুর পরিমানে বেড়ে গেছিল।
তারপর কোনোরকমে ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পূর্ন করার পর মাধব একটি ভালো কোম্পানিতে চাকরি পেয়ে গেছিল। চাকরি পাওয়ার পর মাধব ধীরে ধীরে সমস্ত ধার দেনা শোধ করতে শুরু করেছিল এবং তাদের বাড়ি ও জমি যা বন্দক দেওয়া হয়েছিল সেটাকেও ছাড়াতে শুরু করেছিল।এরপর চাকরি করা কালীন একজন ব্যক্তি মাধবকে upsc (IAS OFFICER) পরীক্ষার একটি ইন্টারভিউ দেখিয়েছিল।
যার পর মাধবের বেশ আগ্রহ জেগেছিল upsc এর প্রতি। ২ মাস ধরে মাধব upsc পরীক্ষার বিষয় সমস্ত তথ্য জানতে শুরু করেন এবং সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি upsc পরীক্ষায় বসবেন। যদিও মাধবের জীবনে আর্থিক সংকট তখনও ছিল তাই চাকরি ছেড়ে দিয়ে পড়াশোনা করা মাধবের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তবে মাধবের বন্ধুরা মাধবকে অনেক সাহায্য করেছিল পড়াশোনা করতে এবং তারপর মাধব দিল্লী গিয়ে upsc এর পড়াশোনা শুরু করেছিল এবং নিজের চাকরি ছেড়ে দিয়েছিল।
২০১৭ সালে যখন প্রথমবার মাধব upsc পরীক্ষায় বসেছিলেন তখন তিনি প্রিলিমস পরীক্ষাটি উত্তীর্ণ করতে পারেননি তখন। এরপর ২০১৮ সালে মাধবকে লেখা পরীক্ষা ও লেখা সেবার জন্য নির্বাচন করা হয়েছিল। কিন্তু মাধব আইএএস অফিসারই হতে চাইতো তাই তিনি সেই চাকরিটাকে প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছিলেন। এরপর শেষমেষ ২০১৯ সালে মাধব আইএএস পরীক্ষাটি উত্তীর্ণ করে এবং আইএএস অফিসার হয়ে যান।
মাধব যারা জীবনে সংঘর্ষ করছে তাদের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন এবং বলেছেন যে মাধব পরামর্শ দেন যে স্বপ্ন পূরণের জন্য যেটার প্রয়োজন তা হল সংকল্প ও ইচ্ছাশক্তি। আর যদি এই দুটি জিনিস কারুর কাছে থাকে তাহলে তার সংকল্পের পথে কেউ বাধা হতে পারবে না। তিনি আরো বলেছেন যে যদি কোনো ব্যক্তি একটি লক্ষ্য স্থির করে থাকে তবে একবার-দুবার ব্যর্থ হলে হাল না ছেড়ে দিতে যতক্ষণ না সফলতা অর্জন হচ্ছে।