মানবজাতির উদ্ভব আফ্রিকায় হয়নি, গবেষণায় ইউরোপের ৭২ মিলিয়ন বছরের পুরনো জীবাশ্ম বলছে নতুন ইতিহাস

মানবজাতির শেষ পূর্বপুরুষের বসবাস আফ্রিকায় নয় বরং ইউরোপে, গবেষণায় আগের ইতিহাসকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে নতুন ইতিহাস জানালেন

পৃথিবীতে মানবজাতির উৎপত্তি (origin of mankind) নিয়ে গবেষকরা প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন তথ্য আমাদের সামনে আনে। মানুষের সর্ব প্রথম জন্ম ঠিক কোথায় এবং কোন সময়ে তা নিয়ে বিভিন্ন সংস্থায় বিভিন্ন রকম মন্তব্য ও বিতর্ক রয়েছে। ইতিমধ্যেই আমাদের মধ্যে বিশ্বাস করা হয়েছিল, ডারউইনের (Darwin) পর থেকে শিম্পাঞ্জি (chimpanzee) এবং মানুষের শেষ সাধারণ পূর্বপুরুষ আফ্রিকায় বসবাস করতেন। কিন্তু এরইমধ্যে এক গবেষণায় দেখা গেছে মানুষ আফ্রিকায় নয় বরং ইউরোপে বিবর্তিত হয়েছে। আসুন জানা যাক এই গবেষণার ইতিহাস।

El graeco

আমরা ইতিহাসে জেনে এসেছি পৃথিবীতে মানুষের উৎপত্তি হয়েছে আফ্রিকায় কিন্তু ৭২ মিলিয়ন বছরের মানব জীবাশ্ম প্রমাণ দিয়েছে মানুষের উদ্ভব আফ্রিকায় নয় বরং ইউরোপেই। যেখানে যুগ যুগ আগের মানব জীবাশ্মের সন্ধান মিলেছে।

গবেষণায় বলা হচ্ছে, প্রাচীন জীবাশ্ম গুলি ভূমধ্যসাগরীয় ইউরোপের ‘এল গ্রেকো’ (El Graeco) নামক একটি হোমোনের প্রজাতি ছিল। এই গবেষণাটি আগের গবেষণার সাথে সহমত নয়। এই গবেষণা আগের গবেষণাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করেছে, তাই এর পর্যবেক্ষণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই নতুন গবেষণা মানবজাতির জন্ম নিয়ে মানুষকে আরও কৌতুহলী করে তুলেছে।

Cimpanzee

আধুনিক মানুষের উৎপত্তি নিয়ে মানুষের মধ্যে আজও বিশ্বাস রয়েছে মানুষের উদ্ভব আফ্রিকার একটি ছোট গোষ্ঠী থেকে এসেছে। সেই গোষ্ঠীই সারা বিশ্ব ছড়িয়েছে। নিয়ান্ডারথাল এবং ডেনিসোভানদের মতো প্রাথমিক মানুষের উদ্ভব ঘটে। যাইহোক, এক রিপোর্টে অনুযায়ী, প্রাচীনতম নিম্ন চোয়ালের জীবাশ্ম বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দল বিশ্বাস করে সর্বপ্রথম মানুষের জন্ম আফ্রিকায় (Africa) নয় বরং ভূমধ্যসাগরে হতে পারে।

রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১২ সালে বুলগেরিয়ার আজমাকাতে একটি প্রিমোলার দাঁতের জীবাশ্মের সাথে প্রাচীন চোয়ালের হাড় সংযুক্ত করে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল। বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস এই দেহবশেষ বানর প্রজাপতির কোন প্রাণীর মত। এটিই এখন প্রাচীনতম প্রাক-মানব বলে মনে করা হয়। যেটি ৭.২ মিলিয়ন বছরের পুরোনো। কম্পিউটার টমোগ্রাফি জীবাশ্ম দাঁতের অভ্যন্তরীন কাঠামো দেখে সেই সময়ের মানুষ ও তাঁদের প্রাথমিক পূর্বপুরুষ বৈশিষ্টগুলি আবিষ্কার করেছে।

টিউবিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনকেনবার্গ সেন্টার ফর হিউম্যান ইভোলিউশন অ্যান্ড প্যালিওএনভায়রনমেন্টের সংস্থার পরিচালক ম্যাডেলাইন বোহমে এবং বুলগেরিয়ান একাডেমি অফ সাইন্সের নিকোলাই স্পাসভ উভয়ই পরীক্ষার মাধ্যমে প্রিমোলার দাঁত আবিষ্কার করেছেন। পরেরবেক্ষণ করে সিদ্ধান্তে বলা হচ্ছে, ‘এল গ্রেকো’ হল সবচেয়ে প্রাচীনতম হোমিনিন। যেটি ৬০-৭০ মিলিয়ন বছরের পুরনো, যা আফ্রিকার প্রাচীনতম প্রাক মানব থেকেও পুরনো।

El graeco

কম্পিউটার টমোগ্রাফিতে দেখা মানুষের মতো বৈশিষ্ট্য:-

কম্পিউটার টমোগ্রাফি ‘এল গ্রেকোকে’ হোমোনিন বা প্রাক মানব বিবেচিত করেছে। কারণ এর মধ্যে আধুনিক মানুষ বা শিম্পাঞ্জির শেষ পূর্বপুরুষ অ-মানব জাতি ও মানব জাতি উভয় বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে। গবেষকরা লক্ষ্য করেছিলেন এল গ্রেকোর বৈশিষ্ট্য গুলি আধুনিক মানুষের মতোই আকার, আচরণ বিকশিত করে।

যাইহোক, গবেষকদের এই তথ্য যদি সত্যি হয় তাহলে মানবজাতির ইতিহাস নতুন করে লেখা যাবে। বৈশিষ্ট্যের সমতুল্য বিচার করে বলা হচ্ছে, এটি প্রাচীনতম পরিচিত মানব পূর্বপুরুষ। আমাদের মধ্যে এটা বিশ্বাস করা হয়েছিল ডারউইনের পর শিম্পাঞ্জি এবং মানুষের শেষ পূর্বপুরুষ (last ancestor human) আফ্রিকায় বসবাস করতেন। কিন্তু ‘প্লাস ওয়ান জার্নালে’ প্রকাশিত নতুন গবেষণায় দাবি করে সর্বপ্রথম মানুষের উদ্ভব ইউরোপেই হতে পারে।

Origin of humanশুধু তাই নয় নতুন গবেষণায় বলা হচ্ছে, তাদের অনেক বংশধর এবং অন্যান্য প্রাক মানুষের বংশধর ভূমধ্যসাগরে রয়ে গেছে, যা ইউরোপে ও এশিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। যাইহোক, গবেষকরা এই বিষয়ে গবেষণায় অবগত। আগামী বছরে এর তথ্য আরও নিশ্চিত করবে।