রাস্তায় ভিক্ষা করা ছেলেদের জন্য স্কুল খুলেছেন কনস্টেবেল, আজ 450 বাচ্চা পাচ্ছে বিনামূল্যে শিক্ষা

শিক্ষা আমাদের সকলের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। শিক্ষার কারণে আমরা ঠিক-ভুল বুঝতে শিখি এবং জীবনের মূল্য আমরা শিক্ষার মাধ্যমে বুঝতে শিখি। যেকোনো দেশের উন্নতির পিছনে সেই দেশের শিক্ষার গুরুতপূর্ণ ভূমিকা থাকে।বিদ্যা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝে এক পুলিশকর্মী একটি বড় উদ্যোগ নিয়েছেন। তার এই উদ্যোগ অনেকের জীবনে শিক্ষার আলো নিয়ে আসবে। এই পুলিশকর্মী রাস্তায় ভিক্ষা করা বাচ্চাদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আসুন বিষয়টি সংক্ষেপে জেনেনি।

এই পুলিশকর্মীর নাম ধর্মবীর জাখর। ইনি ২০১১ সালে রাজস্থানের চুরু জেলার পুলিশ বিভাগে কনস্টেবল হিসাবে ভর্তি হয়েছেন। এখন তিনি শিক্ষার মাধ্যমে দরিদ্র শিশুদের জীবনে সুখ আনার চেষ্টা করছেন। তার মতে দেশ থেকে দারিদ্র্য দূর করতে হলে শিক্ষার প্রসার খুবই জরুরি। শিক্ষার মাধ্যমে দেশের দরিদ্রদের কল্যাণ হবে এবং তারা ভালোভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে। এছাড়া শিক্ষার মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন ঘটবে ও গরীবিও দূর হবে।

ভারতের প্রায় সব জায়গাতেই বাচ্চাদের আবর্জনা তুলতে বা রাস্তার ধারে ভিক্ষা করতে দেখা যায়। এটি ভারতে খুব সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।এর থেকে অনুমান করা যায় যে দেশের ভবিষৎ অধপতনের দিকে যাচ্ছে। কারণ যারা দেশের ভবিষৎ তাদের জীবনে শিক্ষা নেই উল্টে তারা এই ছোট বয়সে আবর্জনা তোলা ও ভিক্ষা করার কাজ করে বেড়াচ্ছে। তাই এই পুলিশকর্মী এই বাচ্চা গুলির জীবনে শিক্ষার আলো দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

ধর্মবীর দরিদ্র বাচ্চাদের কল্যাণের জন্য ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে “আপনি পাঠশালা” নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই স্কুলের বিশেষত্ব হল এটি দরিদ্র এবং আর্থিকভাবে প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদান করে। বর্তমানে, চুরু মহিলা থানার কাছে অবস্থিত এই বিদ্যালয়ে ৪৫০ জন শিশু পড়াশুনা করছে। এটি অত্যন্ত প্রশংসনীয় একটি উদ্যোগ।

যদিও আমাদের দেশে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চাদের বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও অনেক শিশুর আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তারা ময়লা-আবর্জনা কুড়োনো বা ভিক্ষা করার কাজ করতে বাধ্য হয় এবং তারা শিক্ষা থেকে দূরে হয়ে যায় আর তাদের জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। এমন পরিস্থিতিতে ধর্মবীর প্রতিষ্ঠিত স্কুলে দারিদ্র্যের কারণে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত দরিদ্র শিশুদের শিক্ষা দেওয়া হয়। এছাড়া শিক্ষার পাশাপাশি বাচ্চাদের ইউনিফর্ম, স্কুল ব্যাগ, বই এবং অন্যান্য অধ্যয়নের উপকরণও দেওয়া হয়।

ধর্মবীর জানিয়েছেন যে তিনি যখন প্রথমবার এই বাচ্চাদের সাথে কথা বলেছিলেন যে তিনি জানতে পারেন যে এদের কোনো পেরেন্টস বা আত্মীয় নেই। এমনকি বাচ্চারা সত্যি বলছি কিনা তা যাচাই করেও দেখেছিলেন তিনি। এরপর তার মনে হয়েছিল যে এই বাচ্চাদের জীবন থেকে অন্ধকার সরানোর এক মাত্র রাস্তা হলো শিক্ষা আর তারপর তিনি আপনা পাঠশালা স্কুলটি শুরু করেছিলেন।

বর্তমানে আপনী পাঠশালায়,বাচ্চাদের সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানো হয়। যার মধ্যে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৬০ জন এবং ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৯০ জন। অনেক সময় স্কুল থেকে দূরে বাড়ি থাকার কারণে ও টাকার অভাবে বাচ্চারা স্কুলে পৌঁছাতে পারে না। তাই বাচ্চাদের স্কুলে আসতে যেন সমস্যা না হয় তার জন্য বিদ্যালয়ে থেকে একটি গাড়ির সুবিধাও করা হয়েছে। এছাড়া যেই বাচ্চাদের পেরেন্টস আছে সেই সব বাচ্চাদের পেরেন্টসদের সাথে প্রায় কথাবার্তা বলা হয় যাতে বাচ্চাদের শিক্ষায় তাদের জন্য কোনো বাধা উৎপন্ন বা হয়। এছাড়া ধর্মবীরকে এই কাজে দুজন মহিলা কনস্টেবল সাহায্য করছে।

তিনি জানিয়েছেন যে ইউপি-বিহারের বেশিরভাগ মানুষ কাজের সন্ধানে চুরুতে আসে। এমনবস্থায় যাতে তাদের সন্তানদের শিক্ষা মিস বন্ধ না করানো হয় এবং বাচ্চারা যাতে তাদের শিক্ষার প্রতি সমর্পিত থাকে তার জন্য তাদের উৎসাহিত করা হয়। করা উচিত নয় এবং তাদের পড়াশোনার প্রতি নিবেদিত থাকার জন্য উত্সাহিত করা হয়।এছাড়া যাতে তারা ইউপি-বিহার গিয়ে আবার পড়াশোনা ছেড়ে না দেয় তার জন্যও উৎসাহিত করা হয়। ধর্মবীর জানিয়েছেন যে অনেকের বাবা-মা তাদের সন্তানদেরকে পড়াশোনা করাতে রাজি হন না তাই তিনি সেই বাচ্চাদের স্কুলের পর আবর্জনা তোলার অনুমতি দিয়েছেন।

আজকাল সবকিছুর দাম যেই পরিমানে বাড়ছে এমনবস্থায় একটি স্কুল চালানো কারুর একার পক্ষে সম্ভব না। কারণ বাচ্চাদের পড়াশোনার উপকরণ ও অন্যান্য চাহিদা মেটাতে মাসে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়। এমতাবস্থায় বিদ্যালয়টি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য তারা ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডোনেশন সংগ্রহ করেন। যদিও তিনি একাই এই কাজ শুরু করেছিলেন, কিন্তু ধীরে ধীরে এখন চুরু প্রশাসন ও অন্যরাও তাকে এই কাজে সাহায্য করছেন।