ভারতের এমন এক ভুতুড়ে রেলস্টেশন যেখানে আজও রয়েছে আত্মার বাস, রাতে প্লাটফর্মে দাঁড়ায় না কোন ট্রেন

আজকাল বিজ্ঞানও মানে যে ভূত বা আত্মা নামক বস্তু সত্যি সত্যি বিদ্যমান রয়েছে। বিভিন্ন বড় বড় প্যারানমাল এক্সপার্টরা প্রমান করে দিয়েছে যে ভুত (ghost) বা অলৌকিক শক্তি আমাদের মাঝে রয়েছে। এছাড়া মানুষের মুখে মুখে শোনা যায় অমুক জায়গায় ভূত আছে, তমুক জায়গায় ভূত দেখা গেছে ইত্যাদি। এমনকি google-এ হন্টেড প্লেস বলে সার্চ করলে একটি তালিকা বেরিয়ে আসে যেখানে সত্যিকারের অশরীরি আত্মা বা ভূতে অস্তিত্ব সত্যি সত্যি রয়েছে।

তবে জানিয়ে দি কিছু কিছু সময় মিথ্যে গুজবও ছড়ানো হয় যে অমুক জায়গায় ভূত আছে ইত্যাদি। কিছু কিছু সময় মানুষ অযথা লোককে ভয় পাওয়ানোর জন্যও ভূত-প্রেতের (ghost) গুজব ছড়িয়ে থাকে। আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে কুসংস্কারণের কারণেও গুজব ছড়ানো হয়। তবে ভারতের কিছু কিছু স্থান রয়েছে যেখানে সত্যিকারের অশরীরি আত্মার অস্থিত রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটা জায়গার বিষয় গুগালে পর্যন্ত ভালো করে তথ্য দেওয়া নেই। আজ আমরা আমাদের আর্টিকেলে এমন একটি ভৌতিক জায়গা ও সেখানে ঘটা ঘটনার বিষয় আপনার সাথে আলোচনা করবো যার বিষয় জানলে আপনার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠবে। আসুন জেনেনি এই ভৌতিক জায়গার ব্যাপারে সম্পূর্ন বিষয়-বস্তু।

Rail line of begunkodar

 

ভারতে রেল চালু হয়ে ২০০ বছরের বেশি সময় হয়ে গেছে। ভারতের বেশিভাগ জনসংখ্যা দুরদূরান্তে যাওয়ার জন্য সাধারণত রেলের জনসংখ্যা এখনও দীর্ঘ দূরত্ব ভ্রমণের জন্য রেল সুবিধার উপর নির্ভর করে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে একটি ট্রেন স্টেশনকে ভুতুড়ে বলাটাও একটি আশ্চর্য করে দেওয়ার মতো বিষয়। কিন্তু বেগুনকোদর (begunkodar station) হলো এমন একটি রেলওয়ে স্টেশন যাকে প্রায় গত ৪২ বছর ধরে “ভূতরে স্টেশন” ধরা হয়। এই স্টেশনে ক্রমাগত অদ্ভুত দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর এর পিছনে কোনো ভৌতিক শক্তি রয়েছে বলে অনেক লোকেরাই দাবি করেছে।

পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ার বেগুনকোদর রেলওয়ে স্টেশনকে (begunkodar station) দেশের সবচেয়ে ভয়ানক ভুতুড়ে স্টেশন বলা হয়েছে। এই স্টেশনটি ১৯৬০ সালে উদ্বোধন করা হয়েছিল। রিপোর্ট অনুযায়ী জানা গেছে যে একজন সাঁওতাল রানী এই স্টেশন তৈরি করায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। স্টেশন তৈরি হওয়ার প্রথম দিকে সব ভালোই চলছিল কিন্তু স্টেশন তৈরির ৭ বছর পর থেকে হটাৎ এই স্টেশনে ঘটতে থাকে বিভিন্ন রহস্যময় দুর্ঘটনা।

Begunkodar station

১৯৬৭ সালে বেগুনকোদর স্টেশনের স্টেশন মাস্টার সাদা পোশাক পরা এক যুবতীকে রাতে রেলপথ দিয়ে হাঁটতে দেখেছিলেন। সেটেশন মাস্টার অনুমান করেছিলেন যে এই আত্মার মৃত্যু নিশ্চই ট্রেনে আত্মহত্যা করার চেষ্টায় কাটা পরে হয়েছিল অথবা ট্রেনে ধাক্কা খেয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু ঘটেছিল। এই ঘটনার বিষয় যখন স্টেশন মাস্টার তার কর্মচারী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছিল তখন সবাই তাকে উপেক্ষা করেছিল ও তাকে নিয়ে ঠাট্টা করেছিল।

স্টেশনে মেয়ে ভূত দেখেছেন বলে দাবি করার কয়েকদিন পর স্টেশন মাস্টার আত্মহত্যা করেছিলেন। স্টেশন মাস্টারের সাথে সাথে তার পরিবারকেও তাদের রেলওয়ের বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছিল। এমনকি স্টেশন মাস্টারের হত্যা হয়েছিল নাকি আত্মহত্যা সেই বিষয় কোনো তথ্য খুঁজে বার করতে পারেনি তখন পুলিশ। স্টেশন মাস্টার ও তার পরিবারের মৃত্যুর পর আশেপাশের মানুষদের মনে ভয় ঢুকে গেছিল এবং তারা বিশ্বাস করতে লেগেছিল যে স্টেশনের ভূতই স্টেশন মাস্টার ও তার পরিবারকে হত্যা করেছে। এই ঘটনার পর একের পর এক অদ্ভুত দুর্ঘটনা ঘটতে সুরু করেছিল সেই স্টেশনে।

Ghost in begunkodar station

এরপর প্রায়ই এক যুবতীকে সাদা শাড়ি পরে ট্র্যাকে হাঁটতে দেখতেন স্থানীয় লোকেরা বা যাত্রীরা। লোকেরা আরও জানিয়েছে যে মেয়েটি ট্রেন আসার সময় ট্র্যাক ধরে হেঁটে যায় এবং কখনো কখনো ট্রেনের সামনেও চলে আসে বলে জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্ধা, কর্মী ও যাত্রীরা। এরপর সময়ের সাথে ধীরে ধীরে মানুষের মধ্যে ভয় বাড়তে থাকে এবং মানুষ সেই স্টেশনে যেতে বা সেখানে কাজ করতে ভয় পেতে শুরু করে আর কাজ করতেও অস্বীকার করে যার ফলে স্টেশনটিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বহু বছর এই স্টেশনটি বন্ধ ছিল এবং এখানে কোনো ট্রেন থামেনি। কখনো যদি এই স্টেশন দিয়ে ট্রেন যাতায়াত করতো তখন লোকো পাইলটরা এই রুটে ট্রেনের গতি বাড়িয়ে দিতেন যাতে ভুত ট্রেন যাত্রী বা ট্রেনের উপর আক্রমণ করতে না পারে। এমনকি এই জায়গা থেকে ট্রেন বুকিং পর্যন্ত বন্ধ ছিল। এমনকি রেল মন্ত্রকের কাছেও খবর চলে গিয়েছিল এবং ভুতুড়ে স্টেশনের তালিকায় বেগুনকোদর স্টেশনের নাম যুক্ত রাখা হয়েছিল।

Begunkodar station

২০০৮ সালে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেগুনকোদর স্টেশনটিকে আবার চালু করেছেন। এখন এখানে ১০টির বেশি ট্রেন থামে কিন্তু রাতে কোনো ট্রেন থামে না এবং কোনো যাত্রী অপেক্ষাও করে না। প্রায় ৪০ বছর ধরে, বিদেশী পর্যটকরা যারা ভুতুড়ে স্থান দেখতে আগ্রহী ছিল তারা এই স্টেশনটি ঘুরতে এসেছিল। তবে স্টেশনটি পুনরায় চালু হওয়ার পরে, এইখানে কোনও রহস্যময় কার্যকলাপ বা দুর্ঘটনা হতে দেখা যায়নি।