বাংলাদেশে মিললো সত্যিকারের রাজ সিমরণ! এদের লাভ স্টোরি হার মানাবে সিনেমার গল্পকে

বলিউডের (Bollywood) ৯০ দশকের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি ফিল্ম(Bollywood film) হলো শাহরুখ খান (Shahrukh Khan) কাজল (Kajal) ও অমরেশ পুরী (Amresh Puri) অভিনীত ফিল্ম (Bollywood film) ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ (Dilwale dulhania le jayenge)। এই ফিল্মটি যদিও আজও লোকেদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। এমনকি আজকালকার বাচ্চারাও এই ফিল্মটি দেখতে খুব পছন্দ করে থাকে। বিশেষ করে এই ফিল্মের ডায়লগ গুলি আজও দর্শকদের মুখে মুখে থাকে। আপনার এই ফিল্মের শেষ দৃশ্যর কথা মনে আছে? যখন শাহরুখ (Shahrukh Khan) ট্রেনে করে চলে যাচ্ছিল আর অমরেশ পুরী (Amresh Puri) যিনি ফিল্মে কাজলের (Kajal) বাবা হয়েছিল তিনি প্রথমে কাজলের হাত ধরে রেখেছিলেন এবং পরে সেই হাত ছেড়ে দিয়ে কাজল ওরফে সিমরানকে বলেছিলেন ‘যা সিমরান যা জীলে আপনি জিন্দাগি’। আর তারপর কাজল অর্থাৎ সিমরান প্লার্টফর্ম দিয়ে ছুটতে ছুটতে রাজ অর্থাৎ শাহরুখের হাত ধরে ট্রেনে উঠে গেছিল। এই দৃশ্যটি আজও ভারতীয়দের মনে একটা আলাদা ভালো লাগার জায়গা করে রয়ে গেছে। তবে এই সিনটি আবার সবার মনে পড়ে যাওয়ার কারণ হলো সম্প্রতি বাংলাদেশের এক কাপল বলিউড ফিল্ম (Bollywood film) ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ (Dilwale dulhania le jayenge) শেষ দৃশ্যের অনুকরণ করে অর্থাৎ অমরেশ পুরী ‘যা সিমরান যা জীলে আপনি জিন্দাগি’ ডায়লগ দেওয়ার পর যখন কাজল বা সিমরান প্লার্টফর্ম-ছুটতে ছুটতে ট্রেনের দিকে এগোচ্ছিল শাহরুখ ওরফে রাজের হাত ধরার জন্য ঠিক সেই ভাবে পোজ দিয়ে ফটো সুট করেছে এবং সেই ফটো সোশ্যাল মিডিয়ায় অত্যন্ত পরিমানে ভাইরাল হচ্ছে ও সবাইকে ফিল্মের সেই শেষ দৃশ্যের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ ফিল্মে দেখানো হয়েছিল রাজ (শাহরুখ) ও সিমরান (কাজল)-এর আলাপ হয়েছিল ট্রেনে ও সেখান থেকেই শুরু হয়েছিল তাদের প্রেম কাহিনী। এই কাপলের লাভস্টোরিতেও রয়েছে স্টেশন, প্ল্যাটফর্ম ও ট্রেন। তবে বাংলাদেশের এই লাভস্টোরিতে ছেলের নাম হলো আমির হামজা (Amir Hamza) ও মেয়ের নাম ফাতেমা তুজ জোহরা (Fatema tuj Zohra) । এনাদের লাভ স্টোরিটি একটু অদ্ভুত ধরণের। দু’জনকে প্রেমের বাঁধনে বেঁধে রাখার সঙ্গে ট্রেনের যোগ রয়েছে। এই প্রসঙ্গে যেমন বলিউডের ছবি ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’ ছবির কথা উঠল, তেমনই মনে পড়তে পারে ‘জব উই মেট’ কিংবা ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ ছবির অনুষঙ্গও।
জানিয়ে দি যে আমিরের (Amir Hamza) বাড়ি হলো সিলেটে ও ফাতেমার (Fatema tuj Zohra) বাড়ি ঢাকায়। দুজনের আলাপ একটি ফেসবুকের মাধ্যমে হয়েছিল। এরপর পরিচয় হওয়ার কিছুদিন বাদে ফাতেমা খবর পেয়েছিল যে আমির আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই বিষয়টি জানার পর তার খুব অদ্ভুত লেগেছিল ব্যাপারটি যে যার সাথে কয়েকদিনের আলাপ হলো সে হটাৎ আত্মহত্যা করতে চাইছে কেন? এই বিষয় জানার আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং ফাতেমা যেহুত সমাজ সেবার কাজে যুক্ত ছিলেন ও এমন মানুষদের সাহায্য করতেন তাই তিনি আমিরের সাথে যোগাযোগের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
ফাতেমা জানান যে খোঁজ নেওয়ার পর তিনি আমিরের বিষয় কী জানতে পেরেছিলেন। তিনি বলেন- “জানতে পেরেছিলাম, আমিরের সঙ্গে একটি মেয়ের ভালবাসার সম্পর্ক ছিল। তার পর তাঁদের মধ্যে একটা দূরত্ব তৈরি হয়। মেয়েটি অন্য একটি ছেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন, এটা মানতে পারেননি আমির। তার পরই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।” পুরো বিষয় জানার পর ফাতেমা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে আমিরকে এই দুঃখ থেকে বার করতে হবে ও তার মাথা থেকে আত্মহত্যার খেয়ালও সরাতে হবে। ফাতিমা জানান যে ““এক সময় আমির ধীরে ধীরে আমার উপর ভরসা করতে শুরু করেন। এক দিন তো বলেই বসলেন, আমাকে ভালবেসে ফেলেছেন। বিয়ে করতে চান।” আর এরপর থেকেই এই কাপলের প্রেমের পথে যাত্রা শুরু হয়েছিল।
এছাড়া জানিয়ে দি যে ফাতেমা ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। পরে চাকরি সূত্রে সিলেটে গেছিলেন তিনি। আর শমশেরনগরে মামার বাড়িতে থাকতেন। কাজ শেষে রাতের ট্রেনে বাড়িতে ফিরতেন তিনি। অফিস থেকে সিলেট স্টেশনে আসা, ফাতেমাকে ট্রেনে তুলে দেওয়া, সব সময়েই তাঁর সঙ্গী ছিলেন আমির। ধীরে ধীরে সিলেট স্টেশনই হয়ে উঠেছিল তাঁদের প্রেমের আশ্রয়স্থল। তাঁদের বেশির ভাগ কথাই হত সিলেট স্টেশনে। ট্রেনে আমির আগে চড়তেন। তার পর ফাতেমাকে হাত ধরে ট্রেনে তুলে দিয়ে নেমে পড়তেন। দীর্ঘ দিন এটাই ছিল তাঁদের দু’জনের রুটিন। তত দিনে আমিরও ফাতেমার অফিসে কাজ জুটিয়ে নিয়েছিলেন।
এরপর ফাতেমা আরো জানান যে “গল্প করতে করতে সময়ে কোথা দিয়ে বেরিয়ে যেত টের পেতাম না। অনেক সময় এমনও হয়েছে যে, রাত ৯টার ট্রেনের টিকিট কাটা রয়েছে। গল্প করার জন্য সেই টিকিট বাতিল করে আবার ১০টার টিকিট কেটেছি।” আর ফাতেমা এটাও জানান যে তাদের এই প্রতিদিন লাস্ট টিকিট কেটে যাওয়ার কারণে রেলকর্মীদের কাছে পরিচিত হয়ে গেছিলেন তারা। কারণ রেল কর্মীরা প্রতিদিন দেখতেন যে দুজন ছেলে-মেয়ে প্রতিদিন ছুটতে ছুটে শেষ ট্রেনটি ধরে।
তবে যখন এই কাপলের বিয়ের প্রসঙ্গ ওঠে তখন ফাতেমার পরিবার পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিল এই বিয়েতে তাদের অমত কারণ পাত্র সিলেটি নয়। কিন্তু ফাতিমা-আমির অটল ছিল এই বিষয় যে তারা যে করেই হোক বিয়ে করবে। এরপর তারা ২০২০ সালে ঢাকার ম্যারেজ রেজিস্টার অফিসে গিয়ে লুকিয়ে বিয়ে করে নিয়েছিলেন। এরপর বিয়ের একটি ফটো সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছিলেন ফাতেমা। তারপর জানাজানি হওয়ায় আরেক ঝামেলা শুরু হয়েছিল। কিন্তু অবশেষে দুই পরিবার মেনে নিয়েছিল এই বিয়েকে ও সামাজিকভাবে আমির-ফাতেমার বিয়ে দিয়েছিল তারা। ফাতিমা বলেছেন যে “সামাজিক ভাবে বিয়ে ঠিক হওয়ার পরই সিলেট স্টেশনে দু’জনে ছুটে গিয়েছিলাম ফোটোশুট করানোর জন্য। যে ভাবে ট্রেন ধরতাম, যে ভাবে আমির আমাকে ট্রেনে তুলে দিত, সেই দৃশ্য রিক্রিয়েট করে ছবি তুলিয়েছিলাম বর-কনের সাজে।”
দু’বছর আগের পুরনো সেই ছবি ভাইরাল হতেই তা নজরে পড়ে ফাতেমার। তিনি বলেন, “নেটমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে বেশ চর্চা হচ্ছিল। কারণ এটি একটি ভাললাগার মতো বিষয়।” কিন্তু ছবিটি যে এ ভাবে ভাইরাল হয়ে যাবে তিনি ভাবতে পারেননি। ফাতেমা এখন পুরোদমে সংসার করছেন। বিয়ের পর চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। তবে ফাতেমার ভাললাগার একটা অন্য বিষয়ও রয়েছে। যে মানুষটি তাঁর জীবনসঙ্গী, সেই মানুষটি তাঁকে সব সময় বলেন, “তোমার জন্যই আমি নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি।” সব শেষে ফাতেমা বলেছেন যে “এক দিন স্টেশনে বসেই আমিরের প্রাক্তন প্রেমিকাকে ফোন করেছিলাম। চেয়েছিলাম, ওঁরা দু’জন এক হয়ে যাক। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। তবে সব মিলিয়ে আমরা দু’জনে ভালই আছি। দু’জন দু’জনকে আপনি বলেই সম্বোধন করি।”