নেই গোটা পৃথিবীর সঙ্গে পরিচিতি, জানে না আধুনিক আদব কায়দা! আজও অন্ধকারেই রয়ে গিয়েছে এই ৫ উপজাতি
আধুনিকীকরণকে আপন করতে গিয়ে বনাঞ্চল থেকে শুরু করে মাঠ, সবকিছুই চাপা পড়ে যাচ্ছে কংক্রিটের জঙ্গলে। নগরায়নের প্রক্রিয়ায় মানুষ প্রায়শই ভুলে যায় যে গ্রামবাসী বা বনবাসীরাও মানুষ এবং তাদের নিজস্ব উপায়ে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে।
নগরায়ন গ্রামকে শহরে পরিণত করেছে এবং সেখানে বসবাসকারী মানুষও শহরের আদব কায়দার সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু পৃথিবীতে কিছু অদ্ভুত উপজাতি (tribe) রয়েছে, যারা নিজেদেরকে নগরায়ন ও আধুনিকতা থেকে দূরে রেখেছে। এ কারণে তাঁদের প্রথা টিকে থাকলেও তাঁরা পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। তাঁরা সীমান্ত সম্পর্কে জানে না এবং আধুনিক মানুষ কীভাবে জীবনযাপন করে সেবিষয়ে তাঁরা একেবারেই অজ্ঞ। জেনে নিন এমন ৫ উপজাতির বিষয়ে।
মাস্কো পিরো (Mashco-Piro)- পেরুর আমাজন বনগুলি এমন অনেক উপজাতির আবাসস্থল, যারা মানুষ থেকে দূরে থাকে। তাঁদের মধ্যে একটি উপজাতি হল মাশকো-পিরো, যারা বছরের পর বছর বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করছিলেন। তাদের জনসংখ্যা ৬০০ থেকে ৮০০ হবে। তবে বর্তমান সময়ে প্রায়শই সরকারি চেকপোস্টে দাঁড়িয়ে মানুষের কাছে খাবার চাইতে বা নদীতে ভ্রমণকারীদের সংকেত দিতে দেখা যায়। তাঁদের জমিতে অবৈধভাবে গাছ কাটা হয় এবং মাঝে মাঝে মাদক চোরাকারবারীদের সাথে তাঁদের যুদ্ধ হয়।
সেন্টিনেলিজ উপজাতি (Sentinelese)- আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপে বসবাসকারী এই উপজাতির কারণে সরকারের পক্ষ থেকে এই দ্বীপে মানুষের যাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। ধারণা করা হয়, সমাজ থেকে সবচেয়ে নির্জন ও বিচ্ছিন্ন এই উপজাতির মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫০ থেকে ২০০ জন। এরা সাধারণত শিকার করে আহার গ্রহণ করে এবং এঁদের ভাষাও আলাদা। একবার এক পর্যটকের উপর তাঁরা হামলা চালিয়ে তাঁকে হত্যা করেছিল।
ইয়াইফো এবং অন্যান্য উপজাতি (Yaifo tribe)- পাপুয়া নিউ গিনিতে এমন ৪০ টিরও বেশি উপজাতি রয়েছে যাদের সাথে খুব বেশি যোগাযোগ নেই। ইয়াইফো উপজাতিও এমন একটি উপজাতি ছিল। তবে তাদের প্রথম সনাক্ত করা হয়েছিল যখন একজন ব্রিটিশ অভিযাত্রী হঠাৎ করে সেই অঞ্চলে তাদের সন্ধান করতে বের হন এবং হারিয়ে যান। এছাড়াও, ১৯৭০ সালে কোরওয়াই উপজাতিকে প্রথম দেখা যায়। পর্যটকরা প্রায়ই অনুমতি ছাড়াই এখানে যান, যার কারণে এই উপজাতিটিও বিপদে পড়ে।
আয়োরিও (Ayoreo tribe)- প্যারাগুয়েতে বসবাসকারী এই উপজাতিটি আমাজন বেসিনের বাইরে বসবাসকারী সর্বশেষ উপজাতি হিসাবে বিবেচিত হয়। যাদের সাথে বাকি পৃথিবীর কোনও যোগাযোগ নেই। তবে তাঁদের এলাকায় দ্রুত গাছ কাটা হচ্ছে এবং তাঁদের বাড়িঘর কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। ২০০৪ সালে যখন তাঁদের বাড়িতে বুলডোজার চালানো হয়েছিল, তখন এই উপজাতির লোকেরা প্রথম বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগ করেছিল। সেইসময় তাঁরা তাঁদের জীবন বাঁচাতে সেখান থেকে পালিয়ে যাচ্ছিল।
মক্সিহাতেতেমা (Moxihatetema)- ব্রাজিল এবং ভেনিজুয়েলার মধ্যবর্তী একটি বড় রিজার্ভে মোক্সিহাতেতেমা বাস করে যাকে ইয়ানোমামি রিজার্ভ বলা হয়। এই উপজাতি নিজেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল। এটা বিশ্বাস করা হয় যে তাদের মোট জনসংখ্যা ১০০ জনেরও বেশি। ২০১৬ সালে, কিছু বায়বীয় ছবি তোলা হয়েছিল যা থেকে জানা যায় যে এই লোকের সংখ্যা বাড়ছে, তারা সমাজ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। তবে অবৈধ সোনার খনি এই উপজাতি এবং তাঁদের বাড়ির জন্য বিপজ্জনক।