অবাঙালি হয়েও বাঙ্গালীদের মনে রাজ করা সুপারস্টার জিৎ এর বাস্তব জীবন কাহিনী হার মানাবে সিনেমাকেও

জীবনে সফলতা পেতে হলে প্রচুর বাধা পেরোতে হয়, সহজেই কোন কিছু পাওয়া যায় না। আর এই বাধা পেরোনোর জন্য দরকার প্রচুর এক জেদি মনোভাব ও কঠোর পরিশ্রমের। আর এই দুই-এর একে অপরের পরিপূরকতায় মানুষ জীবনে অনেক উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। আর এমনই কঠোর পরিশ্রম করতে দেখা যায় টলিউড জগতের বিভিন্ন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের। আর তারই মধ্যে একজন নামিদামি অভিনেতা হলেন জিতেন্দ্র মাদনানি। যাকে গোটা টলিউড জগত জিৎ নামে চেনেন। তবে তিনি জন্মসূত্রে বাঙালি না হলেও, বাংলা জগতে তার অভিনয় দর্শকদের মনে বিশেষ জায়গা তৈরি করেছে।

কমেডি, রোমান্টিক, একশন প্রায় সব ধরনের চরিত্রে এবং সব ধরনের সিনেমাতে তিনি বিশেষভাবে দক্ষ। তাই তার জনপ্রিয়তাও প্রচুর। বাংলা সিনেমা জগতে সুপারস্টার দের মধ্যে জিৎ অন্যতম।তবে তার এই সুপারস্টার হওয়ার পথ মোটেও সহজ ছিল না। টিভি সিরিয়াল, তেলেগু ছোট বাজেটের সিনেমা, হিন্দি মিউজিক অ্যালবাম প্রায় সব ধরনের কাজই তাকে করতে হয়েছে জীবনের প্রথম পর্যায়। 30 শে নভেম্বর 1978 সালের জিৎ এক বাঙালি পরিবারে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি সেনজোসেফ মেরি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা ও ন্যাশনাল হাই স্কুল থেকে তিনি তার উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন এরপর ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটি কলেজে তার পড়াশোনা শুরু করলেও পারিবারিক ব্যবসার কারণে তার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি।ছোটবেলা থেকেই তাঁর ইচ্ছা ছিল অভিনয় জগতে আসার এবং বলিউড অভিনেতা হওয়ার। বাবার সাথে ব্যবসা দেখাশোনা করার পাশাপাশি তিনি মডেলিং ও অভিনয় ক্লাস করতে থাকেন। তিনি পত্রপত্রিকায় মডেলিং করে তার ক্যারিয়ার শুরু করেন। তিনি টেলিভিশনে প্রথম নজরে আসেন নবাব গেঞ্জির বিজ্ঞাপনে। এরপর 1 994 সালে তার অভিনয় ক্লাসেই তিনি এক সিরিয়াল নির্মাতার নজরে পড়েন। এরপর তিনি বৃষবিক্ষ ও জন্মভূমি এই দুই সিরিয়ালে অভিনয় করেন। পরবর্তীতে তার আরো সিরিয়ালের সুযোগ আসলেও, তার বলিউডে যাওয়ার স্বপ্ন থাকার কারণে তিনি তা আর করেননি।এরপর ১৯৯৫ সালে তিনি মুম্বাইয়ে চলে যান এবং সেখানে গিয়ে তিনি বিভিন্ন সিনেমার জন্য অডিশন দেন। তাতে কোনো লাভ হয়নি। টানা দু’বছর চেষ্টা করার পর ১৯৯৭ সালে একটি মিউজিক অ্যালবাম এ সুযোগ পেয়েছিল। যার নাম ‘বেবাফা তেরা মাসুম চেহেরা’। এরপর এই বছরই তিনি আরো একটি মিউজিক অ্যালবামে অভিনয় করার সুযোগ পেলেও কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি।

এরপর তিনি তার ভাগ্য পরীক্ষা করতে দক্ষিণী সিনেমা জগতে অডিশন দেন, সেখানেও তাকে নিরাশ হতে হয়েছে।২০০১ সালে তেলেগুতে চন্দু নামে একটি লো বাজেটের ছবি রিলিজ হয় কিন্তু বক্সঅফিসে তা ফ্লপ করায় তাকে সেখান থেকে তাকে চলে আসতে হয় এবং তার ফলে তাঁর মনোবল কিছুটা ভেঙে পড়ে।

এরপর জিৎ কে আবার নিজের শহর কলকাতায় ফিরে আসতে হয়। এখানেও তিনি বিভিন্ন বাংলা সিনেমার জন্য অডিশন দেন। ২০০১ সালে হরনাথ চক্রবর্তী তাঁর ‘সাথী’ সিনেমার জন্য একটি নতুন মুখ্ ছিলেন। তার প্রথম পছন্দ প্রসেনজিৎ ছিলেন কিন্তু প্রসেনজিৎ কলেজছাত্রের অভিনয় করতে বারণ করেন, তখন হরনাথ চক্রবর্তীর নজরে জিৎ আসে এবং তিনি তাকে পছন্দ করেন তার সিনেমাটির জন্য। এরপর ২০০২ সালে সাথী ছবিটি মুক্তি পেলে তা বক্সঅফিসে সুপারহিট করে এবং সিনেমা হলগুলো সাথী ছবির জন্য অনেকদিন ধরে ভর্তি ছিল।

এই ছবিতে জিতের অভিনয় দর্শকদের মনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছিল। ‘ও বন্ধু তুমি শুনতে কি পাও” সাথী সিনেমার এই গানটি বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। এরপরে সঙ্গী ,নাটের গুরু,শুভদৃষ্টি, বন্ধন সিনেমা থেকে শুরু করে দুই পৃথিবী,সাত পাকে বাঁধা এর মত একের পর এক সিনেমা জিতের ঝুলিতে আসতে থাকে। সাথী এবং নাটের গুরু সিনেমা পর জিৎ কে জীবনে আর কখনো ফিরে তাকাতে হয়নি।