সাইক্লোন গুলাবের জেরে আবারো রাজ্যের একাধিক জেলাতে ভয়ঙ্কর দুর্যোগের আশঙ্কা! জারি সতর্কবার্তা

করোনাকালীন পরিস্থিতিতে গোটা দেশ বিপর্যস্ত। তারপর আগের বছর থেকে একের পর এক সাইক্লোন এর প্রভাব কার্যত দিশাহারা দেশের সাধারণ নাগরিকেরা। সম্প্রতি ইয়াসের পর আবার আসতে চলেছে আরও একটি সাইক্লোন। সম্প্রতি সাইক্লোন গুলাবের তাণ্ডবের আতঙ্কে এস্ত গোটা পূর্ব ভারত। প্রসঙ্গত ‘গুলাব’ নামটি পাকিস্তানের দেওয়া। আবহাওয়া সূত্রে খবর রবিবার বিকাল এর মধ্যে উপকূলবর্তী এলাকায় আছড়ে পড়তে চলেছে এই ঘূর্ণিঝড়।

শুধু উপকূলবর্তী এলাকায় নয় দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। গাঙ্গেয় উপকূলবর্তী এলাকায় মৎস্য জীবীদের উদ্দেশ্যে সর্তকতা জারি করা হয়েছে। চলতে পারে ভারী বৃষ্টি ও তার সাথে ঝড়ো হাওয়া। আবার সূত্র থেকে বলা হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়ের বর্তমান গতিপথ ওড়িশা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের দিকে। বর্তমানে সাইক্লোনটির গতিবেগ ঘন্টায় ১৪ কিলোমিটার মধ্য বঙ্গোপসাগরে থাকা নিম্নচাপটি বর্তমানে পশ্চিম দিকে এগোচ্ছে পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরে ওড়িশার উপকূল হয়ে গোপালপুর থেকে ৪৭০ কিলোমিটার বেগে দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে অভিমুখ রয়েছে এবং এর সাথে সাথে ৫৪০ কিলোমিটার পূর্ব উত্তর-পূর্বে অবস্থান করছে।

বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়টি অতটা সক্রিয় না হলেও আগামী ছয় ঘণ্টার মধ্যে গভীর ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিয়ে বিশাখাপত্তনম এবং গোপালপুরের দিকে এগোবে।তবে দক্ষিণবঙ্গে এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব খুব একটা বেশি না হলেও এইদিন রবিবার বিকাল থেকে পূর্ব মেদিনীপুরে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। তবে এই গোলাপ কে নিয়ে আবহাওয়া দপ্তর যতটা সর্তকতা জারি করছেন সাথে সাথে আরো বলছেন এই ঘূর্ণিঝড় এর পিছনে আরো একটি ঘূর্ণিঝড় আসতে চলেছে। ২৭ শে সেপ্টেম্বর থেকে এই ঘূর্ণিঝড়টি সক্রিয় হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

উত্তর পূর্ব এবং সংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে যা ২৪ ঘন্টার মধ্যেই গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। গুলাবের বর্তমান অভিমুখ উত্তর-পশ্চিমের দিকে। ফলে ২৯ শে সেপ্টেম্বর এর আগে এটা পশ্চিমবঙ্গের গাঙ্গেয় এলাকায় আসবে না। তবে পশ্চিমবঙ্গে এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব খুব একটা না হলেও সোমবার থেকে দুই মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় অতি ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে যাবে । এছাড়া কলকাতা, হাওড়া, হুগলি ,দুই মেদিনীপুর এবং দুই পরগনায় ২৮ শে সেপ্টেম্বর অর্থাৎ মঙ্গলবার অতি ভারী বৃষ্টিপাত হবে।

বুধবার বৃষ্টি হতে পারে কলকাতা এবং তার সংলগ্ন এলাকায়। এছাড়া ঝাড়গ্ৰাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব পশ্চিম মেদিনীপুর ভারী বৃষ্টি হবে। বুধবার পর্যন্ত বেশ কিছুদিন আগে থেকেই লাগাতার বৃষ্টির জেরে হাওড়া, হুগলি, মেদিনীপুর ,পশ্চিম বর্ধমানের বিভিন্ন এলাকায় জলমগ্ন হয়ে আছে । বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আরো বৃষ্টিপাত হবে এই সমস্ত এলাকায়। ফলে জলস্তর বাড়তে পারে বিভিন্ন অঞ্চলে। এই জল বৃদ্ধি নিয়ে আগাম সর্তকতা জারি করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে নিচু এলাকা জল প্লাবিত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রবিবার থেকেই ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করবে উপকূলবর্তী এলাকায়। পশ্চিমবঙ্গের দীঘার উপকূল থেকে এখন থেকেই সরিয়ে নেয়া হচ্ছে পর্যটকদের এবং মৎস্যজীবীদের । প্রাথমিকভাবে এই ঘূর্ণি ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫৯ থেকে ৬০ কিলোমিটার এবং পরবর্তীকালে ৭০ কিলোমিটার বেগে বইতে পারে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ বাড়বে। ২৮ এবং ২৯ সেপ্টেম্বর উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে খাওয়ার বেগ বাড়বে। ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৫৫ কিলোমিটার বেগে বইতে পারে ঝড়ো হাওয়া। এর সাথে থাকছে অতি ভারী বৃষ্টি।

কলকাতায় এবং তার সংলগ্নএলাকা এবং ঝাড়গ্ৰাম, হাওড়া, হুগলি ঝোড়ো হওয়া এবং ঘূর্ণি ঝড়ের গতিবেগ কিছুটা হলেও কম হবে । এক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ থাকছে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার। এক্ষেত্রে ঝড়ের গতিবেগ কিছুটা কম হলেও মৎস্যজীবীদের সর্তক করা হচ্ছে। পরবর্তীকালে ঘূর্ণি ঝড়ের গতিবেগ ৫০ কিলোমিটার হতে পারে। রবিবার সন্ধ্যার পর থেকেই বঙ্গোপসাগরের সমুদ্র উত্তাল হতে শুরু করবে ফলে পূর্ব-মধ্য এবং উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের মৎস্য- জীবীদের অগ্রিম সতর্ক করা হচ্ছে।

এই তিনদিন সমুদ্রের মাছ ধরতে নিষেধ করা হচ্ছে মৎস্য জীবীদের । এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের দীঘা উপকূল এলাকাতেও সর্তকতা জারি করা হয়েছে । অন্ধ্র এবং ওড়িশি উপকূলের পরিস্থিতি একই রকম থাকছে। আবহাওয়া দপ্তর থেকে বলা হচ্ছে পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত মৎস্যজীবীরা যেন সমুদ্রের না যান । ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গে এর কিছু প্রভাব পড়লেও আপাতত উত্তরবঙ্গে কোনরকম বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।