দেশের প্রথম মহিলা পাইলট যিনি শাড়ি পড়েই চালিয়েছিলেন প্লেন, করেছিলেন দেশের নাম উজ্জ্বল

প্রাচীনকাল থেকেই ভারতীয় মহিলারা বিশেষ কাজের দ্রষ্টব্য রাখেন। আর ভারতেরই এক মহিলা যিনি প্রথম বিমান চালিয়েছিলেন শাড়ি পড়ে। তিনি হলেন সরলা ঠাকরাল। যিনি ব্রিটিশ রাজত্বকালে মাত্র ২১ বছর বয়সে ভারতের পাইলট এর লাইসেন্স পেয়েছিলেন। তার সেই বয়সেই ৪ বছরের ছোট্ট একটি মেয়েও ছিল। যিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৮ ই আগস্ট ১৯১৪ সালে দিল্লিতে। তাঁর বিয়ে হয়েছিল মাত্র ১৬ বছর বয়সে পাইলট পিডি শর্মার সঙ্গে।

সরলা ঠাকরালকে ভালবেসে সবাই ‘মতি’ বলে ডাকত। বিয়ের কিছু সময় পরই তাঁর স্বামী লক্ষ্য করেন যে, সরলার উড়োজাহাজ সম্পর্কে জানার খুবই আগ্রহ। আর তার এই আগ্রহ দেখে তার স্বামী পিডি শর্মা তাকে উড়োজাহাজের ব্যাপারে শিক্ষিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। আর তার জন্য তার দরকার ট্রেনিং-এর। স্বামীর কাছ থেকে এই উৎসাহ পেয়ে তিনি যোধপুর ফ্লাইং ক্লাবে ট্রেনিংয়ের জন্য ভর্তি হন। আর সেই ট্রেনিংয়ের সময়ই সরলা প্রথমবার ১৯৩৬ সালের লাহোরে ‘জিপসি মাথ’ নামে দুই সিটের উড়োজাহাজ উড়িয়েছিলেন।

ভারতের ঐতিহ্য বজায় রেখে প্রথম একক ফ্লাইটে তিনি শাড়ি পরে উড়োজাহাজ উড়িয়েছিলেন। সেই যাত্রার পর সরলা বলেছিলেন, “আমি যখন প্রথমবার প্লেন উড়িয়ে ছিলাম, তখন শুধু আমার স্বামী ও শ্বশুরমশাই ছিলেন। তঁরা খুব খুশি এবং উত্তেজিত ছিলেন। তিনি আমাকে ফ্লাইং ক্লাবে নিয়ে গেলেন। আমি জানতাম যে আমি পুরুষদের এই কাজে একজন মহিলা ছিলাম। কিন্তু আমি সেই পুরুষদেরও প্রশংসা করি যারা আমাকে সেই কাজে সমর্থন এবং উৎসাহিত করেছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সরল আর জীবনে অনেক ঘাত প্রতিঘাত এসেছিল। সরলার স্বামী পিডি শর্মা একজন এয়ার মেইল ​​পাইলট ছিলেন এবং এয়ার মেইলের প্রথম লাইসেন্স অফিসারও ছিলেন। তিনি এই লাইসেন্সের সাহায্যে প্রথম দিকে করাচি থেকে লাহোরে এসেছিলেন প্লেনের সাহায্যে।

সরলার পরিবারের ৯ জন সদস্য ছিলেন। সকলেই জাহাজ ওড়ানোর অভিজ্ঞতা ছিল। সরলাও এখন এয়ারমেইল লাইসেন্সের অপেক্ষায় ছিলেন। লাইসেন্স পাওয়ার জন্য, সরলা ১০০০ ঘন্টা উড়ান সম্পন্ন করেন এবং তিনি লাইসেন্স পান। ১৯৩৯ সালে বিশ্বে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতি চলছিল, যখন সরলা ঠাকরলের জন্য খুব কঠিন এবং দুর্বিষহ ছিল, বিশেষ দুটি ঘটনার কারণে। এরফলে সরলার জীবন অনেকটাই বদলে যায়। একই বছর সরলার স্বামী পিডি শর্মা বিমান দুর্ঘটনায় মারাও যান।

সরলা ঠাকরলের মনে ছিল যে তিনি তার জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় খুব স্বাচ্ছন্দ্য এবং বিশ্বাসের সাথে শুরু করেছিলেন। সেই সময় সরলা বাণিজ্যিক পাইলট হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। যুদ্ধ শুরুর কারণে সরলাকে তার প্রশিক্ষণ মাঝপথেই ছেড়ে দিতে হয়েছিল। কিন্তু এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে, সরলা ঠাকরল হাল ছাড়েননি, লাহোরের মেয়ো স্কুল অফ আর্ট থেকে ফাইন আর্ট পেইন্টিংয়ের পড়াশোনা শেষ করেন এবং চিত্রকলার পড়াশোনা শেষে দিল্লিতে আসেন।

পরে তিনি দিল্লিতে ফিরে আসেন যেখানে তিনি পেইন্টিং চালিয়ে যান এবং গয়না এবং পোশাক ডিজাইনের একটি সফল ক্যারিয়ার তৈরি করেন।দশকের পর থেকে, ঠাকরালের ক্রমবর্ধমান সাফল্য ভারতীয় মহিলাদের প্রজন্মের জন্য তাদের উড়ানের স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করার পথ প্রশস্ত করেছে।