যতই আয় করুক না কেন! তবু অক্ষয়ের কাছে এই ৫ টি ভুলের কারণে পাত্তা পাবে না কার্তিক আরিয়ানের ‘ভুল ভুলাইয়া 2’

২০০৭ সালে সুপারহিট ফিল্ম ভুলভুলাইয়া মুক্তি পেয়েছিল। এই ফিল্মটি বক্স অফিসে সফল প্রমাণিত হয়েছিল ও অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। এই ফিল্মে অক্ষয় কুমারের দুর্দান্ত অভিনয়, রাজপাল যাদভের কমেডি, এবং আমিশা পাটেল, বিদ্যা বালন আর সাইনি আহুজার সাসপেন্স মোড দর্শকদের একটি ছন্দে বেঁধে রেখেছিল। প্রিয়দর্শিনী দ্বারা ডায়েরেক্টেড এই ফিল্মটি সেই সময় ৮২ কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল এবং ২০০৭ এর যেই ফিল্ম গুলি সবচেয়ে বেশি আয় করেছিল সেই তালিকায় ৮ নম্বরে নাম ছিল এই ফিল্মটির।

এক কথায় বলতে গেলে এই ফিল্মটি মারাত্মক পরিমানে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল আর এই ফিল্মটিকে দর্শকরা আজও এতো পছন্দ করে যে তারা এটা হাজার বার দেখলেও বোর হবে না বলে জানিয়েছে। দর্শকদের এই ফিল্মটির প্রতি এতো ভালোবাসা দেখে পরিচালক মণ্ডলী এই ফিল্মটির দ্বিতীয় পার্ট নিয়ে এসেছে। দ্বিতীয় পার্টটির নাম হলো ভুলভুলাইয়া-২। এটি আনিজ বাজমির পরিচালিত ফিল্ম। এইখানে মুখ্য চরিত্রে রয়েছে কার্তিক আরিয়ান ও কায়রা আদভানি। এছাড়া টাববু, রাজপাল ইত্যাদি নাম করা অভিনেতারাও রয়েছেন।

এই ফিল্মটি সম্প্রতি ২০ মে ২০২২-এ রিলিজ হয়েছে। এটি ৩৮২৯ স্ক্রিন পেয়েছে। ভারতে ৩২০০ এবং বিদেশে ৬২৯। প্রথম সপ্তাহে ফিল্মটি প্রায় ৫৪.৫০ কোটি টাকার কালেকশন করেছে। তবে আজ আমরা এই আর্টিকেলে এই ফিল্মের কয়েকটি মেকিং-মিসটেক আপনাদের সাথে তুলে ধরবো যা আপনার হয়তো দেখেও ধরতে পারেননি। আসুন জেনেনি কি কি ছিল এই মেকিং-মিসটেক গুলি।

কার্তিক আরিয়ানকে ফিল্মে অক্ষয় কুমারের সস্তা ডুপ্লিকেট দেখতে লাগছিল।

যদি আপনি ভুলভুলাইয়া প্রথম পার্ট যদি দেখে থাকেন তবে নিশ্চই লক্ষ করবেন যে ফিল্মে কার্তিকের স্টাইল ও অভিনয় পুরোপুরি অক্ষয় কুমারের অনুকরণের চেষ্টা ছিল। এমকনকি হাঁটার স্টাইল, এক্সপ্রেশন, পাঁচলাইনন, ডায়েলগ সবকিছুই ছিল ভুলভুলাইয়া-১ এর অক্ষয় কুমারের মতো। অর্থাৎ পার্ট-২ তে আমরা কার্তিক আরিয়ানের নতুন কিছু দেখতে পাইনি যার থেকে তুলনা করা যাবে যে অক্ষয় ভালো ছিল নাকি কার্তিক। ফিল্ম দেখে মনে হচ্ছিল সবকিছু অক্ষয় কুমারকে ধারণা করে তৈরি করা হয়েছিল।

সাইড ক্যারেক্টার গুলোর থেকেও খারাপ ছিল কিয়ারার পারফরমেন্স

কায়রা আদবাণী ফিল্মে মুখ্য চরিত্রে ছিলেন কিন্তু তা সত্ত্বেও বেশি দেখা যায়নি তাকে। প্রথমে তো তিনি কয়েক সেকেন্ডে কার্তিক যে তার জন্য অপরিচিত ব্যক্তি ছিল তার সাথে সহজেই বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা করে নেয়। তারপর কয়েকটি গান ব্যাক টু ব্যাক হয় যেখানে কায়রা নিজের মুগ্ধ করা স্টাইল দেখায়। তারপর লোকে ভেবেছিল এগুলি গোটা ফিল্মে হতে থাকবে কিন্তু ফিল্মটি সবাইকে ভুল প্রমাণিত করে দেয়। এই ফিল্মে তার বিয়ে যেই পাত্রের সাথে ঠিক হয়েছিল সেই পাত্রকে তার বোন পছন্দ করতো বলে তিনি তার বোনের খুশির জন্য নিজেকে পুরো পরিবারের কাছে মৃত প্রমাণিত করছিলেন যাতে তার বোন নিজের পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে করতে পারে।

যার ফলে গোটা ফিল্মে তিনি লুক-চুরি করে কাটিয়ে দিয়েছেন। তাকে শুধু মাঝে মাঝে খাওয়ার খেতে ও কাঁদতে দেখা যাচ্ছিল। তাই সবার দেখে এটাই মনে হয়েছে ফিল্মে কিয়ারার যা ভূমিকা ছিল তার থেকে বেশি ভূমিকা পালন করেছিল ফিল্মের সাইডের চরিত্র গুলি।

 

সঞ্জয় মিশ্র ও রাজ পাল ছিলেন ফিল্মের আসল প্রাণ

ভুলভুলাইয়া-২ যেই টুক দর্শকদের ভালো লেগেছে তাতে ৯০% ভূমিকা ছিল সঞ্জয় মিশ্র ও রাজপালের জন্য। এরা ছিল ফিল্মের পারফেক্ট নুন, মশলা না বেশি আর না কম। প্রথমত ফিল্মে এই দুজনের লুক ছিল চমৎকার হাস্যকর। এনারা নিজের অভিনয় দ্বারা দর্শকদের মারাত্মক পরিমানে হাসিয়েছে ও এন্টারটেন্ট করেছে। হ্যাঁ তবে মাঝে মাঝে অশ্বিনী কলেসকারকেও ফিল্মে দেখিয়েছিল আর তিনিও দর্শকদের খুব বিনোদন করেছেন। তাই তার চরিত্রটিকে ইগনোর করা যায় না। তাই বলা যেতে পারে এই তিনটি চরিত্রই ফিল্মের প্রাণ ছিল।

মুনজুলিকার চরিত্রটিকে নিয়ে অনিশ বাজমি করে দিয়েছে গুড়-গোবর

মঞ্জুলিকার কথা বলা হলেই চোখের সামনে হলুদ শাড়িতে বিদ্যা বালানের মুখ ভেসে ওঠে। এর সঙ্গে কানে বাজে ‘আমি যে তোমার’ গানটি। এই দুটি জিনিসই ছিল অক্ষয় কুমারের ‘ভুল ভুলাইয়া’-এর প্রাণ। যার উন্মাদনা এখনো মানুষের ভেতরে দৃশ্যমান। কিন্তু ভুলভুলাইয়া-২ তে আনিশ বাজমি মঞ্জুলিকার চরিত্রটিকে পুরো ঘেটে দিয়েছে। প্রথম পার্টে মঞ্জুলিকার বদলা আলাদা ছিল যেটা অক্ষয় নিজের বুদ্ধি দ্বারা সমাধান করেছিল। কিন্তু দ্বিতীয় পার্টে ডিরেক্টর নতুনত্ব করার চক্করে মঞ্জুলিকার সাথে আঞ্জুলিকাকেও নিয়ে এসছে।

প্রথমে ফিল্মে দেখানো হয়েছিল যে মঞ্জুলিকাকে তন্ত্র-মন্ত্র দ্বারা বন্ধি করা হয়েছে কারণ সে একটি খারাপ আত্মা। পরে ফিল্মের শেষে জানা গেল যে মঞ্জুলিকা বেঁচে ছিল আর যাকে বন্ধি করা হয়েছিল সে ভালো আত্মা আঞ্জুলিকা ছিল। আর “আমি যে তোমার” গানের কথা যদি বলি তাহলে ভূত অবস্থায় টাববুকে একবার এই গানে নাচতে দেখা যায়নি উল্টে আলাদা কিছু করার চক্করে কার্তিককে এই গানে ভারত নট্টম করতে দেখা গেছিল। তাই বলা যেতে পারে ডিরেক্টর পুরো জিনিস গুলির গুড়-গোবর করে দিয়েছে।

ভুলভুলাইয়া ১-এ বিদ্যা বালনকে ভূতের সাজে আলাদাই ভয়ঙ্কর লাগছিল এবং তার অভিনয়ও অসাধারন ছিল। কিন্তু পার্ট-২ তে টাববু যেই ভাবে ভূত সেজেছে তাকে দেখে ভয় কম হাসি বেশি পাচ্ছে। কারণ তাকে পুরো জোকারের মতো লাগছে। আপনি নিজেই টাববুর ভূতিয়া লুক দেখুন- কালো রঙের লেহেঙ্গা চোলি। খোলা লম্বা চুল।

মুখে সাদা রং, কাজল ঘাটা চোখ, লাল রঙের ঠোঁট থেকে বাহিত রক্তের লাইন ঠিক যেমন ওয়ামপ্যারের থাকে খানিকটা সেরকম। এটিকে দেখে মনে হচ্ছিল যে রক্ত নয় লাল মার্কার পেন দিয়ে বানানো লাইন। আর দর্শকদের বেশি ভয় পাওয়ানোর জন্য চুল দিয়ে মুখ ঢাকা হয়েছিল এবং পা উল্টো করে দেওয়া হয়েছিল। শুধু টাববুর নাকে একটা লাল বলের কমতি ছিল। লাল বলটা দিয়ে দিলে টাববু সহজেই সার্কাসে যেতে পারতো।