এক সময় ২০০০ টাকা আয় করা ব্যক্তি অসুস্থ বাবার খাতিরে শুরু করেন বাঁশের ব্যবসা, আজ কোটিপতি

আজ আমরা আপনাদের সাথে এমন এক ব্যক্তির বিষয় আলোচনা করতে চলেছি যার ব্যাপারে জানলে আপনার ভাগ্য ও পরিশ্রমের উপর বিশ্বাস দ্বিগুন বেড়ে যাবে। এই ব্যক্তি হচ্ছেন মহারাষ্ট্রের ওসমানাবাদের বাসিন্ধা এবং এনার নাম হচ্ছে রাজশেখর। ইনি একসময় মাত্র ২০০০ টাকার চাকরি করতেন কিন্তু আজ তিনি কোটি টাকার কোম্পানির মালিক। এই সব সম্ভব হয়েছে রাজশেখরের বোধগম্যতা ও পরিশ্রমের কারণে। আসুন এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা রাজশেখরের বিষয় সংক্ষেপে আলোচনা করবো যিনি নিজের চেষ্টায় নিজের ভাগ্যকে পরিবর্তন করে দেখিয়েছেন।

একসময় ৩০০ একর জমি ছিল

রাজশেখর পাটিল একজন কৃষক পরিবারের ছেলে। তার পিতা মুরলীধর পাটিল ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, হায়দ্রাবাদ থেকে গণিত নিয়ে এমএসসি করেছিলেন। তিনি যদি চাইতেন তাহলে বড় শহরে খুব ভালো চাকরি করতে পারতেন কিন্তু করেননি কারণ তিনি যৌথ পরিবারের মধ্যে থাকতে পছন্দ করতেন। আর তাই তিনি নিজের পরিবারের ৭০ জন সদস্য ও চাষাবাদের জন্য ৩০০ একর জমিকে নির্বাচন করেছিলেন। ৩০০ একর জমি থাকা কৃষক কতটা সচ্ছল হতে পারে তা বিষয় সবারই নিশ্চই ধারণ তো আছেই। তবে রাজশেখরের গ্রামে যেহুত জল ও বিদ্যুতের অভাব ছিল তাই এই জমি গুলি অনুর্বর জমিতে পরিণত হয়ে গেছিল।

গ্রামে সৃষ্টি হয়েছিল দুর্ভিক্ষের পরিবেশ

রাজশেখরের গ্রামে জলের অভাব হওয়ার কারণে সেই গ্রামেকে লোকে নিপানি গ্রাম বলে ডাকা শুরু করে দিয়েছিল। এছাড়া গ্রামটি খরার সাথে সাথে বৃষ্টির অভাবেও ভুগছিল। রাজশেখর নিজের মোহ ছেড়ে ভালো চাকরি পাওয়ার দিকে মন দিয়েছিলেন। তবে বিএসসি-এসি নিয়ে পড়াশোনা করার পরও তিনি কোনো ভালো চাকরি পাচ্ছিলেন না। তিনি প্রথমে প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষা গুলিতে উত্তীর্ণ হওয়ার অনেক চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু সফলতা পাননি তখন তিনি। এমনকি কোনো প্রাইভেট কোম্পানিতে পর্যন্ত চাকরি পাচ্ছিলেন না তিনি।

আন্না হাজারের কাছে করেছিলেন চাকরি

সব দিকে চেষ্টা করার পরও যখন রাজশেখর কোথাও চাকরি পাচ্ছিলেন না, তখন শেষমেষ তিনি আন্না হাজারের সাথে কাজে যুক্ত হয়েছিলেন। সেই সময় আন্না হাজারের কাজের জন্য কিছু যুবকের প্রয়োজন ছিল। যদিও এক সুযোগে রাজশেখরকে নির্বাচন করা হয়েছিল না সেখানে। অনেক কাকুতি-মিনতি করার পর আন্না হাজাত তাকে কাজে রেখেছিল। সেখানে রাজশেখকে জল সংরক্ষণ, মাটি সংরক্ষণ এবং মাদক মুক্ত করার মতো প্রচারা অভিযানের কাজ দেওয়া হয়েছিল। এখানে প্রতি মাসে তিনি মাত্র ২০০০ টাকা স্যালারি পেতেন। ৬ বছর এখানে কাজ পর তার মাইনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রতি মাসে ৬০০০ টাকা।

রাজশেখরের পরিবারে যখন ভাগাভাগি হয়েছিল তখন তার বাবা মুরলীধরের প্যারালাইসিস অ্যাটাক হয়েছিল এবং তার উপর ১৫ লাখ টাকার ধার ছিল। পরিবারের এই দুর্দশা দেখে রাজশেখর আন্না হাজারের চাকরি ছেড়ে দিয়ে গ্রামে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। রাজশেখরের একেবারেই চাষাবাদের দিকে আগ্রহ থাকা না সত্ত্বেও পরিবারের জন্য তিনি আখ, পেঁপে ও বিভিন্ন সবজি চাষ করা শুরু করেছিলেন তিনি। তিনি চাষাবাদ প্রায় ৫ বছর ধরে চালিয়ে গেছিলেন এবং এই পাঁচ বছরে রাজশেখরকে জল,বিদ্যুৎ ও শ্রমিকের অভাবে অনেক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল।

তবে রাজশেখরের ভাগ্য সেদিন ফিরে গেল যেদিন তিনি জানতে পেরেছিলেন যে সরকারি নার্সারিতে বাসের চারা বিনা পয়সায় দেওয়া হচ্ছে। আসলে বিষয়টি হলো রাজসেখর তার জমির চারিপাশে বেড়া দিতে চাইতেন কিন্তু বেড়া দেওয়ার জন্য তার কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে টাকা ছিল না। তাই তিনি ভেবেছিলাম যে বাঁশ দিয়ে জমির চারিপাশে বেড়া দেবেন।

বাঁশ করে দিল ভাগ্য পরিবর্তন

রাজশেখর পাটিল একসাথে ৪০ টি চারা নিয়ে এসে জমির চারিপাশে লাগিয়ে দিয়েছিলেন। সেইসময় রাজশেখরের কোনো ধারণাই ছিল না যে তিনি বাঁশের চারা নয় বরং নিজের সুবর্ণ ভাগ্যের চারা লাগাছেন। ২ বছরে সেই বাঁশের চারা গুলি থেকে ১০ লাখ বাঁশ উৎপন্ন হয় যায়। এরপর এই বাঁশগুলিকে রাজশেখর ২০,৫০ ও ১০০ টাকা দামে বিক্রি করা শুরু করেছিলেন এবং এই ভাবেই তার টার্নওভার এক কোটি টাকা পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এরপর তিনি আরো বাঁশ কিনে এনে নিজের গোটা জমিতে লাগিয়ে দিয়েছিলেন। আজ প্রতি বছর তিনি প্রায় ১ কোটি বাঁশ উৎপন্ন করেন এবং এই ভাবেই আজ তার টার্নওভার হয়ে গেছে ৬-৭ কোটি টাকা।