ভারতীয় সিনেমা ইতিহাসে এক অদ্ভুত ঘটনা, দর্শকদের খুশি করতে ক্লাইম্যাক্স সিন পর্যন্ত বদলে ফেলেছিল ছবির পরিচালক, আর তারপর..

বাহারো কে স্বপ্নে ফিল্মটিকে পরিচালক নাসির হুসেন প্রথমে রিলিজ করেছিলেন Sad ending দিয়ে। কিন্তু ফিল্মটি দর্শক দ্বারা পছন্দ না করায় ক্লাইম্যাক্স বদলে রিলিজ করেছিলেন তিনি

বলিউডের (Bollywood)বড় ট্রেন্ড সেটর নাসির হুসেন (Nasir Hussain) একজন একজন লেখক, পরিচালক ও নির্মাতা হিসেবে অনেক দুর্দান্ত ফিল্ম আমাদের উপহার হিসেবে দিয়েছেন একসময়। তার ফিল্ম গুলির মধ্যে কয়েকটি হলো- তুম সা নেহি দেখা, যাব প্যার কিসিসে হোতা হ্যা,ফির বহি দিল লায়া হু, তিসরি মানজিল, ইয়াদো কি বরাত ও হাম কিসিসে কম নেহি ইত্যাদি।

বলিউড (Bollywood)অভিনেতা দেবানন্দ ও শাম্মি কাপুরের জন্য তিনি অনেকগুলি ফিল্ম লিখেছিলেন যেই ফিল্ম গুলির জন্যই আজ তারা এতো বিখ্যাত ও পরিচিত। তবে রাজেশ খান্নার সঙ্গে মিলেও তিনি একটি ফিল্ম বানিয়েছিলেন কিন্তু সেই সময় রাজেশ খান্না সুপারস্টার ছিলেন না। এই ফিল্মটির নাম ছিল ‘বাহারো কে স্বপ্নে’। কিন্তু ফিল্মটি প্রথম দিকেই মার খেয়ে গেছিল।

ট্র্যাজেডি নয় হ্যাপি এন্ডিং চাই

মিউজিক্যাল-রোম্যান্টিক ফিল্মের জন্য বিখ্যাত নাসিরের জন্য ‘বাহারো কে স্বপ্নে’ (Baharo ke sapne) ফিল্মটি তার মনের অনেক কাছে ছিল। কারণ এই ফিল্মটি তিনি লখনৌ ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করার সময় লিখেছিলেন এবং এই গল্প লেখার জন্য তিনি পুরস্কারও পেয়েছিলেন। আর নাসির এই স্বপ্ন নিয়েই মুম্বাইয়ে এসেছিলেন যে তিনি একদিন এই ফিল্মের গল্পের উপর ফিল্ম তৈরি করবেন।

Nasir Hussain

বাহারো কে স্বপ্নে (Baharo ke sapne) ফিল্মটি তার ট্রেন্ড মার্কের থেকে আলাদা বাস্তবসম্মত ও পরীক্ষামূলক ও রঙিন ফিল্মের চলের সময় ব্যাক এন্ড ওয়াইট ফিল্ম ছিল। আর পরিচালক হিসেবে এটি তার পঞ্চম ফিল্ম ছিল। আর এই ফিল্মটিকে তিনি রাষ্ট্রপিতা মহাত্মা গান্ধীকে সমর্পিত করেছিলেন। নাসির হুসেন (Nasir Hussain) এই ফিল্মে রাজেশ খান্নার সাথে নন্দাকে হিরোইন হিসেবে কাস্ট করতে চেয়েছিলেন কিন্তু নন্দা কাজ করার জন্য রাজি না হওয়ায় তিনি আশা পারেখকে কাস্ট করেছিলেন।

তবে রোম্যান্টিক ও হ্যাপি এন্ডিং ফিল্ম বানানোর জন্য বিখ্যাত নাসিরের এই ফিল্মটির শেষ হ্যাপি ছিল না। এই ফিল্মের শেষে হিরো ও হিরোইনের মৃত্যু দেখানো হয়েছিল। বলতে গেলে এই ফিল্মটি নাসিরের বাকি ফিল্ম গুলির থেকে আলাদা ছিল তাই দর্শকরা বাহারো কে স্বপ্নে ফিল্মটি দেখে রেগে গেছিলেন ও ফিল্মটি নিয়ে সমলোচনা করতে শুরু করেছিলেন। দর্শকদের থেকে প্রশংসা আশা করে থাকা নাসির দর্শকদের এরকম প্রতিক্রিয়া দেখে অবাক হয়ে গেছিলেন।

আজা পিয়া তোহে প্যার দু

বাহারো কে স্বপ্নে ফিল্মের প্রতি দর্শকদের রাগ, ক্ষোভ ও সমালোচনা দেখে নাসির ফিল্মটি রিলিজের ২ দিন পরে তার এন্ডিং পরিবর্তন করে নতুন ভার্সান রিলিজ করেছিলেন। আর এই নতুন ভার্সানের শেষটি হ্যাপি এন্ডিং ছিল। নাসির মাত্র ২ দিনে ফিল্মের হ্যাপি এন্ডিং ক্লাইমেক্সের শুট কমপ্লিট করেছিলেন। দ্বিতীয় সপ্তাহে ফিল্মটি হ্যাপি এন্ডিং দ্বারা রিলিজ করা হলেও বক্স অফিস কালেকশনে কোনো পরিবর্তন ঘটাতে পেরেছিল না ফিল্মটি।

দর্শকরা ফিল্মটির গল্পকে রিজেক্ট করে দিয়েছিল কারণ ফিল্মের তারা নাসির হুসেনের ছাপ খুঁজে পাচ্ছিল না। তার উপর রাজেশ খান্না নতুন ছিল ও আশা পারেখও তেমন জনপ্রিয় ছিল না আর তাই এই ফিল্মটি দর্শকদের মনে ছাপ ফেলতে পেরেছিল না। আসলে বিষয় টি হলো বাহারো কে স্বপ্নে ফিল্মটি ডায়েরেক্ট করার কথা ছিল বিজয় আনন্দের আর অন্যদিকে সেই সময় নাসির হুসেনের, দেবানন্দ অভিনীত ফিল্ম তিসরি মঞ্জিল ডায়েরেক্ট করার কথা ছিল।

Baharo ke sapne film

কিন্তু কোনো কারনে তিসরি মঞ্জিলের ডাইরেক্টয়ের কাজ তিনি বিজয় আনন্দের হাতে তুলে দিয়েছিলেন এবং তিসরি মঞ্জিলের ফিল্ম থেকে দেবানন্দকে সরিয়ে শাম্মি কাপুরকে কাস্ট করেছিলেন এবং অন্যদিকে বাহারো স্বপ্নের ডায়েরেক্ট করার কাজ নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। কিন্তু ক্লাইম্যাক্স ট্রাজিডির হওয়ায় যেহেতু ফিল্মটি ফ্লপ হয়ে যায় তার থেকে নাসির হুসেন বুঝতে পারে যে দর্শকদের দুঃখী এন্ডিং ফিল্ম পছন্দ আসে না।

এরপর থেকে নাসির কখনো আর এমন ফিল্ম তৈরি করেননি যেই ফিল্মের শেষ দুঃখজনক। বাহারো কে স্বপ্নে ফিল্ম ফ্লপ হওয়ায় ফিল্মটিকে আজ সবাই ভুলে গেলেও এই ফিল্মটি ইন্ডাস্ট্রিকে আর.ডি বর্মনের মতো সংগীত পরিচালক দিয়েছিল। আর সঙ্গে দিয়েছিল কিছু দুর্দান্ত গান যা আজও বেজে উঠলে মানুষ নেচে ওঠে। যেমন- আজা পিয়া তোহে প্যার দু ও চুনরি সামভাল গোরি।