গায়ের রং এর জন্য অপমানিত হলেও নিজেকে প্রমাণ করে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন আশীষ বিদ্যার্থী

বলিউডে এমন অনেক ব্যক্তিত্ব রয়েছে যারা এক সময় খুবই কষ্টে দিন যাপন করেছেন এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। এই সমস্ত অভিনেতা অভিনেত্রীদের আজ আমরা হয়তো বলিউডের প্রথম সারির সেলিব্রেটি হিসেবে চিনি। এমনই একজন অভিনেতা হলেন আশীষ বিদ্যার্থী। বলিউডে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় দক্ষতার মাধ্যমে দর্শকদের মনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছিলেন আশীষ বিদ্যার্থী। খলনায়কের চরিত্রে তার অভিনয় দেখার জন্য এখনও দর্শক ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষা করতে থাকে।

কিন্তু এই অভিনেতার এই অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা কে সঠিকভাবে বলিউড ব্যবহার করতে পারেনি। আর তাই নিয়ে অনেকেরই কম বেশি আক্ষেপ রয়ে গিয়েছে।১৯৬৫ সালে এই অভিনেতার জন্ম হয়। দিল্লির করোল বাগে ভাড়াবাড়ি একটি ছোট্ট ঘরে তার ছোটবেলার দিনগুলো কেটেছে। অভিনেতার বাবা দেশে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন। তার মা ছিলেন প্রবাসী বাঙালি। তিনি ছিলেন তার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান তাই তার ছোটবেলাটা একপ্রকার নিঃসঙ্গভাবে কেটেছে বলা যায়।

স্কুলে কোনদিনই তার পড়াশোনা তে মন বসেনি। তার শুধুমাত্র ভালোলাগার একটাই জায়গা ছিল অভিনয় সহ শিল্পের অন্যান্য ধারা। এমনকি মাঝে মাঝে তিনি তাঁর মায়ের সঙ্গে কত্থক নাচে ও পা মেলাতেন। আর কলেজে পৌছে তার মনে জোর কদমে চেপে বসল অভিনয়ের নেশা। তিনি ছিলেন ইতিহাসের ছাত্র। অভিনেতার কলেজ জীবনের বিশেষ বন্ধু ছিলেন মনোজ বাজপেয়ী এবং বিশাল ভরদ্বাজ।১৯৮৬ সালে তিনি স্নাতক হবার পরে নেশনাল স্কুল অফ ড্রামা বা এনএসডি তে ভর্তি হয়েছিলেন।

এন এস ডি তে গিয়ে তার পরিচয় হয়েছিল বিশ্বের সিনেমার সঙ্গে। অভিনয় শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি তাকে উপার্জনের কথাটাও ভাবতে হত। কারণ তার জন্মের সময় তার বাবার বয়স ছিল ৫৩ বছর। আর তাই তিনি যখন এন এস ডি তে অভিনয় শিখতে তখন তার বাবা-মা দুজনেই ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত। আর তাই সংসারের সব দায়িত্ব এসে পড়েছিল তার ওপর। আর তাই তিনি১৯৯২ সালে কাজের খোঁজে দিল্লি থেকে মুম্বাই তে চলে এসেছিলেন তিনি।

তাকে কাজের জন্য ঘুরতে হতো প্রযোজকদের দরজায় দরজায়। তার কাজ পেতে অনেক সমস্যা হতো এবং তাকে অনেক খারাপ মন্তব্য ও শুনতে হতো তার গায়ের রং এর জন্য। তবে সব অপমান সহ্য করে নেন তিনি। কারণ ছোটবেলা থেকেই তাঁকে কালু,জল্লাদ এর মত নামে ডাকা হতো তার আসল নামের বদলে। এখানেই শেষ নয় অভিনয় জগতে ও তাকে শুনতে হয়েছে, পর্দায় তার গায়ের রং ভালো লাগবে না, কিন্তু অপমান কে তিনি গায়ে মাখেন নি বরং তিনি সব উপেক্ষা করে এগিয়ে গিয়েছেন।

অভিনেতা গোবিন্দ নিহালানি ছবি ‘দ্রোহকাল’ এ অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকমহলে বেশি জনপ্রিয়তা পান।১৯৯৪ সালে এই ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মহেশ ভাটের ছবি ‘নাজায়েজ ‘এ অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি মুম্বাইয়ের বাণিজ্যিক ছবিতে নিজের জায়গা তৈরি করে নিয়েছিলেন।

বলিউডে কাজ করার পরেও তাকে ভাড়া বাড়িতে থাকতে হতো। কিন্তু দক্ষিণের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার পরে সে সমস্যা তার কিছুটা সমাধান হয়েছিল। এবং তখন তিনি মুম্বাইতে নিজের বাড়ি বানিয়েছিলেন। তিনি বিয়ে করেছেন অভিনেত্রী শকুন্তলা বড়ুয়ার মেয়ে রাজশ্রী কে। অভিনেতাকে পর্দার ভয়ঙ্কর খলনায়কের চরিত্রে দেখা গেলেও বাস্তব জীবনে তিনি একজন মোটিভেশনাল স্পিকার। তার অনুগামী ও শ্রোতারা অভিনেতার এক কথায় জীবনের মোটিভেশন খুঁজে পান।